মাটির গহনা তৈরির ব্যবসা

মাটির গহনা তৈরির ব্যবসা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

অধিকাংশ মেয়েই সেজেগুজে থাকতে পছন্দ করে, বিশেষ করে বাইরে বের হওয়ার সময়। সুন্দর পরিপাটি পোশাক ও মেকাপের পাশাপাশি তাদের এই সাজের অন্যতম উপাদান হলো অলংকার বা গহনা। পোশাকের সাথে মিল করে একেক সময় একেক ধরনের গহনা পরে থাকে তারা। ডায়মন্ড, স্বর্ণ, রুপা ছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মেয়েদের গহনা তৈরি করা হচ্ছে, যেমনঃ ফলের বীচি, শামুক, ঝিনুক, কড়ি ইত্যাদি।


সাম্প্রতিককালে এর সাথে আরো একটি উপকরণ যোগ হয়েছে সেটা হলো মাটি। মাটির তৈরি রঙ-বেরঙের এ গহনাগুলো দেখতে যেমন সুন্দর দামও তুলনামূলকভাবে কম। ফলে কিশোরী-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মহিলাদের পছন্দের তালিকায় এই গহনাটি যোগ হয়েছে। সাধারণত গহনাগুলোয় বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পুরাণ তুলে ধরে। তাই পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনসহ বাঙালিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির গহনার চাহিদা বেশি দেখা যায়। বছরজুড়েও এর চাহিদার কমতি থাকে না। দেশের গ-ি পেরিয়ে এগুলো এখন দুবাই, নিউ ইয়র্কসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই চাহিদাকে মাথায় রেখে মাটির গহনা তৈরিটাকে আপনার পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। নিজেকে করে তুলতে পারেন স্বাবলম্বী। প্রশিক্ষণ মাটির গহনা তৈরি প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর নকশা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এখানে ৩ মাস মেয়াদি কোর্স ব্যবস্থা চালু আছে।

স্বল্প খরচে এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এ ছাড়া গহনা তৈরিতে অভিজ্ঞ এমন কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অথবা গহনা প্রস্তুতকারক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারে। যেহেতু এগুলো হাতের কাজ, তাই বাস্তবমুখী তথা হাতেকলমে শিক্ষাটাই বেশি কার্যকরী হয়। মূলধন ছোট আকারে ঘরে বসে শুরু করতে খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মূলধন নিয়েই মাটির গহনা তৈরির ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। তবে ব্যবসায়িকভাবে মানে বড় আকারে শুরু করতে হলে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের নাম নির্বাচন করতে হবে। এর পরে একটি ঘর তথা কারখানা ভাড়া করতে হবে। সরকারি বৈধতার জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এ ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে, তবে ঋণদানকারী ব্যাংক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় উপকরণ মাটির গহনা তৈরির প্রধান উপকরণ হলো এঁটেল মাটি।

গহনার আকার এবং কী পরিমাণ গহনা তৈরি করা হবে তার ওপর নির্ভর করে মাটি ও পানির পরিমাণ। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী এঁটেল মাটি সংগ্রহ করতে হবে। ঘরে বসে ছোট আকারে শুরু করলে বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের মোটামুটি ১৫ থেকে ২০টা ছাঁচ হলেই চলে। দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তবে ছাঁচের পরিমাণ, আকৃতি ও ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে এটা কম বেশি হতে পারে। ছাঁচগুলো ওয়েল্ডিং দোকান থেকে বানাতে পারেন। এরপরে যে জিনিসটি দরকার তা হলো চুল্লি। এটা বানাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হবে। আর বড় আকারে শুরু করলে ছাঁচ, চুল্লি, জায়গার পরিমাণ ও কর্মচারীর সাথে সাথে খরচের পরিমাণটাও বেড়ে যাবে। যেভাবে গহনা তৈরি করবেন প্রথমত লাল এঁটেল মাটি পানি দিয়ে নরম করে নিতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি দিয়ে গোল বা চেপ্টা বানিয়ে নিতে হবে। এবার নির্দিষ্ট ছাঁচ নিয়ে গোল বা চেপ্টা করা মাটিতে চাপ দিয়ে ডিজাইন করতে হবে। এরপর এগুলো চুলায় পোড়াতে হবে।

মাটির গহনা পোড়ানোর জন্য বিশেষ ধরনের চুলা অর্থাৎ চুল্লি দরকার। চুল্লির মধ্যে শিক লাগানো থাকে। সে শিকের উপর গহনা রেখে নিচে ধানের তুষ বা কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। ফলে গহনাগুলো পুড়ে লালচে হয়ে যাবে। সবশেষে গহনাগুলো বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইন করতে হবে এবং সুতা ও চিকন তার দিয়ে পরার উপযোগী করতে হবে। আয়রোজগার প্রতি পিস গহনা পাইকারি দরে বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা। বানাতে খরচ আট থেকে দশ টাকা। প্রতি পিস গহনায় মোটামুটি পাঁচ থেকে আট টাকা। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে। আর সেট হিসেবে বিক্রি করলে প্রতি সেট গহনা সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা যায়। আর পটারি ও টেরাকোটার দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। লাভ ২০ থেকে ৩০ টাকা।

বাজারজাতকরণ কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ করলে সেক্ষেত্রে তো বাজারজাতকরণের কোনো চিন্তা থাকে না। কিন্তু নিজে বাজারজাত করতে চাইলে শো-রুম নিতে পারেন অথবা ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন বুটিক শপগুলোতে মাটির গহনা সরবরাহ করা যায়। এ ছাড়া কসমেটিক বিক্রির দোকানগুলোতেও মাটির গহনা সরবরাহ করা যেতে পারে। এখন অবশ্য কিছু শপিং ও বড় বড় মার্কেটেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment