ভোলার ভৈষা দইয়ের কদর

ভোলার ভৈষা দইয়ের কদর

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

উপকূলীয় জেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী খাবার মহিষের দই। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ভৈষা দই’ নামে পরিচিত। উৎসব-পার্বণে এর চাহিদা বাড়ে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে দই বিক্রেতাদের।

দই তৈরিতে দুধ আসে জেলার বিভিন্ন চরের মহিষের বাথান থেকে। জেলার পূর্ব দিকে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই উত্তাল জলরাশির মাঝে জেগে ওঠা চরে সবুজ ঘাসের বুকে চরে বেড়ায় হাজারো মহিষ। সরকারি হিসাবে সেটি লাখের কাছাকাছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৩৩৫ সালের দিকে দক্ষিণ শাহবাজপুরে (ভোলার আদি নাম) বসতি স্থাপন শুরু হয়। জেগে ওঠে নতুন নতুন চর। মেঘনা-তেঁতুলিয়ার মাঝে জেগে ওঠা এ রকম শতাধিক চরে মহিষ চরে বেড়ায়। মহিষের বাথান বদল হয়, ভাঙাগড়ার করুণ খেলা চলে। কিন্তু কাঁচা দইয়ের কদর কমে না।

ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ১২ জন দই বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছরই কাঁচা ভৈষা দইয়ের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দই বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে অন্তত দুই সপ্তাহ এর চাহিদা থাকবে তুঙ্গে। এ সময় জেলার সাত উপজেলায় দিনে ৪০০ মণ পর্যন্ত দই বিক্রি হবে। প্রতি কেজির দাম বেড়ে ১৮০-২০০ টাকায় পৌঁছাতে পারে।

কাঁচা দই যে পাত্রে বসানো হয়, তাকে বলে টালি। এই টালিতে মহিষের কাঁচা দুধ ঢেলে একটু শুকনো স্থানে যত্নে বসিয়ে রাখলে ১৫-১৬ ঘণ্টা পর দই জমে। শীতে জমতে সময় বেশি নেয়। শীতের দই খুবই সুস্বাদু।

ঐতিহ্যবাহী কাঁচা দইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চর, মহিষ আর রাখফাল। জনবিচ্ছিন্ন চরগুলোতে রয়েছে বাথান। ধু ধু প্রান্তর। একটি বাথানে বাস করে কয়েকজন মালিকের হাজার মহিষ আর রাখফাল নামের অবহেলিত মানুষ। রাখওয়াল থেকে রাখাল বা রাখফাল। রাখালেরা থাকে কাদা জলের ওপর উঁচু মাচান করা টংঘরে আর মহিষ কেল্লায়।

দুধেল মহিষগুলোর দুধ দোহন করে রাখাল। তখনই চরে হাজির হয় দুধের ব্যাপারী, যারা মালিকের কাছে বছরব্যাপী দুধ কেনার দাদন দিয়েছে।

ওই ব্যাপারীদের বলা হয় ঘোষ। ঘোষ আবার দুধ বিক্রি করে দই বিক্রেতাদের কাছে। ঘোষ মো. জামাল বলেন, দুধ নিয়ে চলে নানা কেরামতি। চরকি ঘুরিয়ে মাখন তুলে ফেলা, মহিষের দুধে গরুর দুধ মেশানো, মাখন তুলে আলাদা বিক্রির বাড়তি লাভ না করা দই বিক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তবে চরাঞ্চলের কিছু হাটে ও ভোলা সদরের কোনো কোনো দোকান বিশুদ্ধ কাঁচা দইয়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখানকার এক দই ব্যবসায়ী জানালেন, ‘চরাঞ্চলে মানুষের বসত বাড়ার কারণে মহিষের চারণভূমি কমছে। ঠিকমতো ঘাস পাচ্ছে না, ফলে দুধ কমে যাচ্ছে। দুধের জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় বিক্রেতারা ভেজাল দিচ্ছে। দামও হাঁকছে বেশি।’

ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, ভোলায় প্রতিদিন ৩০৭ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০-৮০ মেট্রিক টন মহিষের দুধ। দুধের চাহিদা বাড়ায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভোলায় উন্নত জাতের মহিষের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করেছে। এসব মহিষে দিনে ৮-১৫ কেজি দুধ হচ্ছে। আর দেশি মহিষ দুধ দেয় ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি।

Sharing is caring!

Leave a Comment