বন্ধুত্ব থেকে সফল উদ্যোক্তা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
বন্ধুত্ব কি শুধুই আড্ডা-গান-গল্প? অনেকের কাছে উত্তর হয়তো, হ্যাঁ। তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রমও থাকেন। খোশগল্প আর আড্ডার মেজাজে থেকেই শুরু হয় পরিকল্পনা। একটা উদ্যোগ কিংবা স্বপ্নের জন্ম নেয় সহপাঠী কিংবা কাছের বন্ধুদের আড্ডা থেকেই। চায়ের স্টলের আড্ডা আর পিকনিকের মতো পরিবেশেও শুরু হয় পরিকল্পনা। এরপর? বন্ধুত্বের রসায়ন আর জানাশোনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই হয়ে যান সফল উদ্যোক্তা।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ইনভেনটো
তরুণদের আগ্রহ এখন তথ্যপ্রযুক্তি ঘিরে। বেশিরভাগ সময়ই কাটে ফেসবুক-টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখানেও ব্যবসাটা মন্দ নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়া যায় খুব সহজেই। এমন ভাবনা থেকেই যাত্রা শুরু আশফাক রহমানের ইনভেনটো বাংলাদেশ। ফরিদপুরের ছেলে আশফাক স্নাতক শেষে ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন কাজ। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে দেশী-বিদেশী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসতে সাহায্য করেছে। আনোয়ার গ্রুপ, ক্রেজিমার্ট, ইমপেরিয়াল কলেজ, ছবিয়াল ও মানামা ডেভেলপমেন্টসহ নানা প্রতিষ্ঠান এখন ইনভেনটোর গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানের সিইও আশফাক রহমান জানালেন শুরুর কথা। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর আব্দুল্লাহ মুনিম ও রফিকুর রহমান যোগ দেন ইনভেনটোতে। এখনও কাজ চলছে ওয়েব সলুশন, বিজনেস প্রমোশন, ডিজিটাল মার্কেটিং ও সফটওয়্যার সলুশন নিয়ে। স্বপ্নটা এখন পুরোটাই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে আসাই ইনভেনটোর এখনকার লক্ষ্য।
দুই বন্ধুর ওয়ারডেনসফট
একই অনুষদে পড়ার সুবাধে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব। দুজনেই পড়েছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদে। ক্লাসের সেই বন্ধুত্বের রেশ ধরেই ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত। গত ২০১০ সালে দুজন মিলেই প্রতিষ্ঠা করলেন ওয়ারডেনসফট। এই দুই বন্ধু হলেন মোহাম্মাদ আলী এবং শামিউল হোসাইন। যদিও প্রতিষ্ঠানের শুরুতে আরও দু’একজন ছিলেন এর সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরা দুজনেই হাল ধরে থেকেছেন এ প্রতিষ্ঠানের। ওয়ারডেনসফট মূলত সফটওয়ার তৈরি প্রতিষ্ঠান। সফটওয়ার ছাড়াও ওয়েবপেইজ, মোবাইল এপস তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু হলেও এখন দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে ওয়ারডেনসফট। নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে বেশ সমস্যাও মোকাবিলা করেছে। বিশেষ করে দেশীয় কাজ করতে। শুরুর দিকে কোনো অফিস ছিল না। তবে কাজ ও কাজের মান দিয়ে সে সমস্যা দ্রুতই মোকাবিলা করে উঠে দুই বন্ধুর এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সব মিলিয়ে ১০ জন কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘ওয়ারডেনসফটের জন্ম মূলত বন্ধুত্ব থেকেই। আর আমার পার্টনারের সঙ্গে বোঝাপড়া দুর্দান্ত। তাই দু’বন্ধু মিলেই শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য একদিন এ প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় হয়ে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে আইটি বিশ্বে আমরা আমাদের বাংলাদেশটাকে আরও উপরে নিয়ে যেতে চাই।’
তৈরি পোশাক খাতে ইয়োলোস্টোন
ছোটবেলার বন্ধুত্ব দিয়ে কি ব্যবসা হয়? এমন প্রশ্নের উত্তর তৈরি পোশাক ও আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী হাছিবুজ্জামান ভূঁইয়া রিয়াদ, মাহফুজ সোহাগ আর সোহাগ পাটোয়ারী নিজেই। স্কুল থেকেই তারা একে অপরের কাছের মানুষ। পড়াশোনা শেষে নিজেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়। চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক আর আমদানি-রফতানি ব্যবসা নিয়েই এখন রাতদিন কাটে দু’জনের। সেখানকার ব্যবসার পাশাপাশি জেলা শহর লক্ষ্মীপুরে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউস ‘ইয়োলোস্টোন’। ব্যবসার ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের প্রভাব কেমন এমন প্রশ্নের উত্তরে হাছিবুজ্জামান ভূঁইয়া রিয়াদ জানান, বন্ধুত্ব বিষয়টি ঠিক ইতিবাচকও না, আবার নেতিবাচকও না। তবে, নিজেদের আগেকার ভালো বোঝাপড়া দিয়ে ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইয়োলোস্টোন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশে হাউসটির ফ্যাঞ্চইজি স্থাপনে মনোনিবেশ করেছেন তারা।
তারুণ্যের ময়মনসিংহসোর্স
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়ন। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় অনলাইন নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের ধারণা নেতিবাচক। এমনই এক গ্রাম থেকেই আরাফাত রহমান নামের এক উদ্যোক্তা তার বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ময়মনসিংহসোর্স নামের ছোট এক প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার জন্য নানা পরিকল্পনা হাতে নিতে শুরু করেন তিনি, যা বাস্তবের মুখ দেখে ২০১৪ সালে এসে। ২০১১ সালের প্রথম দিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা শোনেন আরাফাত। জানতে পারেন ইন্টারনেটে নানা ধরনের কাজ করে টাকা আয় করা যায়। সংকল্প করেন তিনিও সেসব কাজ করবেন। কিন্তু তখনও ভালো করে প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানতেন না বলে কাজ শুরু করতে পারেননি। ২০১২ সালের জুলাইয়ের দিকে আরাফাত ময়মনসিংহ সদরে তার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু কাজ শেখেন। ঠিক সে সময় ওয়েবসাইট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পান। এরপর আমরা ২০১৪ সালে ‘ময়মনসিংহসোর্স’ নাম দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। একেবারে গ্রাম থেকে কাজটা শুরু করি। ময়মনসিংহসোর্স ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টিভিসহ বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট ডেভেলপ করেছে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ শহরে একটি অফিস নেয়া হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ বিষয়ে আরাফাত বলেন, ‘ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট একটি সৃজনশীল কাজ। তাই এটি করতে গেলে অবশ্যই মেধা, ধৈর্য ও সততার প্রয়োজন। ভালো মানের ডেভেলপার হতে গেলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তবে হঠাৎ সাফল্য লাভের চিন্তা না করাই ভালো।
স্বপ্নের বাজার
কয়েকজন স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের নাম। তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব, সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গা থেকেই স্বপ্নের বাজারের মতো উদ্যোগের সৃষ্টি। মূলত তাদের নিজেদের বন্ধুদের বাহিরে সমমনা কিছু ভাই আছেন এই স্বপ্ন যাত্রায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা স্বপ্ন বাজার। মানুষের দৈনন্দিক জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে স্বপ্ন বাজারে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব গ্রোসারি পণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, পোশাক, বই, স্টেশনারী থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে স্বপ্ন বাজার ছুটে চলে ক্রেতাদের দোরগোড়ায়। ভোক্তাদের ঝামেলা ও টেনশনমুক্ত কর্মজীবন উপহার দেয়ার জন্যই এই প্রচেষ্টা। দৈনন্দিন জীবনে সাংসারিক যাবতীয় দ্রব্যাদি নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে যাতে সবাই যার যার কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি উৎপাদনশীল হতে পারে, এই জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। ভেজালমুক্ত খাদ্য, পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়াই স্বপ্ন বাজারের একমাত্র লক্ষ্য।