উদ্যোক্তারা কেন ‘স্টিভ জবস’ পড়বেন?

উদ্যোক্তারা কেন ‘স্টিভ জবস’ পড়বেন?

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

জবস এর জীবন এতটাই হৃদয়গ্রাহী যে তার সম্পর্কে পড়তে গিয়ে আপনার মনে হবে যেন একটা ফিকশন পড়ছেন যারা উদ্যোক্তা হতে চান তদের জন্য অবশ্যপাঠ্যস্টিভ জবস’ বইটি। আর যারা উদ্যোক্তা হতে চান না তাদেরও পড়া উচিত এই বই। কেননা এতে শেখার আছে অনেক কিছু

জবস এর জীবন অর্থনীতির শেখার একটি বিস্ময়কর মাধ্যম। জবস এর জীবন সম্পর্কে আপনার হয়ত তেমন আগ্রহ নেই অথবা আপনি অ্যাপলের কোনো পণ্য সম্পর্কে হয়ত ভালো ধারণা রাখেন না। তবে আধুনিক কালের এই থমাস এডিসন সম্পর্কে আইজ্যাকসনের গল্প মুক্ত বাণিজ্যের বিস্ময়গুলো, এন্টিট্রাস্ট নিয়মকানুনের মূঢ়তা, কর্মসংস্থান, এক্সিকিউটিভদের বেতন, ব্যর্থতা এবং মুনাফা সম্পর্কে অন্য যেকোনো টেক্সটবুকের চেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে। 2014100816250338372মুক্তবাণিজ্যের অদ্ভুত বিষয়গুলো প্রায় সময়ই বুঝতে এবং বোঝাতে কষ্ট হয়। তাই সম্ভবত এই বইটির মাধ্যমে এর পাঠ শুরু করা সবচেয়ে ভালো হবে

শ্রমবিভাজনের নীতি

১৯৭০ সালে অ্যাপল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠার সময় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণাশ্রমবিভাজন এর বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। স্টিভ ওজনিয়াক একজন জাদুকরী প্রোগ্রামার ছিলেন। কিন্তু তিনি আইজ্যাকসনকে জানান, কম্পিউটার আইডিয়াগুলো কিভাবে বিপণন করবেন ব্যাপারে তাঁর কোন ধারণা ছিল না এবং তিনি যা করছিলেন তা কিভাবে বিপণনযোগ্য সেটিও জানতেন না অথবা পাবলিক রিলেশন্স জিনিয়াস রেজিস ম্যাকেন্না যেমন বলেন, “ওজ একটি অসাধারণ মেশিন ডিজাইন করেছিলেন কিন্তু তার স্থান আজ হবি শপ্সে হত যদি স্টিভ জবস না থাকতেন।এই দুই জিনিয়াস একাকী হয়ত তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন কিন্তু দুজন এক হয়ে এই শ্রমবিভাজনের নীতিযা মুক্ত বাজার অর্থনীতির একটি প্রধানতম নিয়ামকঅনুসরণ করে তারা সৃষ্টি করলেন অ্যাপল কম্পিউটারের মতো প্রতিষ্ঠান। মানুষকে মুক্ত বাণিজ্য করার সুযোগ দেয়ার জন্য স্বাধীনতাই একমাত্র শর্ত নয়

এটা সত্যি যে জবস এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে আইটিউন্স সমেত আইপড অন্যতম। এটি পৃথিবীর সঙ্গীত উপভোগের ধরণটিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কিন্তু জবস পিক্সারে থাকার সময় উপলব্ধি করেছেনটেক কোম্পানিগুলো সৃজনশীলতা বোঝে না”, অন্যদিকেসঙ্গীত পরিবেশক কোম্পানিগুলো প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।আইপড এবং মিউজিক ক্রয় করার নতুন পদ্ধতি সূচনার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায় অ্যাপলের জিনিয়াসরা হয়ত মিউজিক ভালোবাসতেন কিন্তু তারা একা কখনোই এটি সৃষ্টি করতে পারতেন না মিউজিক ভিশনারিজরা হয়ত প্রযুক্তি ভালোবাসতেন কিন্তু ক্রমবর্ধমান পাইরেসির কারণে তাদের আয়ের ব্যাপারে জটিলতা প্রমাণ করে তারা এই পরিস্থিতি  মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত ছিলেন না। কাজটি যখন অ্যাপল এবং কিছু মিউজিক কোম্পানির মধ্যে ভাগ হয়ে গেল তখন দুই পক্ষেরই মুনাফা বৃদ্ধি পেতে লাগল। কমপ্যারাটিভ অ্যাডভান্টেজ তর্কসাপেক্ষে মানুষের জানার গণ্ডির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ধারণাগুলোর একটি

প্রযুক্তিবাজারে প্রতিযোগিতা

মুক্তবাণিজ্যের ধারণায় যে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার মনোযোগ আকর্ষণে প্রতিযোগিতা করে তাদের কাছে ভোক্তাই প্রথম সত্য। আমাদের বাজার যত উন্মুক্ত হবে তত অসাধারণ মানুষ আসবে যারা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিযোগিতা করবে। ১৯৫৫ সালে জন্ম নেয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুজন প্রতিযোগী যাদের কথা পৃথিবী সবসময় মনে রাখবেতাদের একজন বিলগেটস এবং অন্যজন স্টিভ জবস।

25999_140904165014_steve_jobsবিল গেটস জবসের ব্যর্থতাগুলো ( অনেক ব্যর্থতা ছিল তার) থেকে স্বভাবতই অনেক মজা পেতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন জবসকখনোই প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না অন্যদিকে স্টিভ জবস নিয়মিতভাবে মাইক্রোসফ্টেরবাজেপণ্যের নিন্দা করতেন এবং জীবনের পরেরদিকে এসে খোলাখুলিভাবে বলতেনবিলের কল্পনাশক্তি নেই এবং তিনি কখনোই কিছু সৃষ্টি করেন নি।দুজনের মধ্যে অপছন্দের ব্যাপারটি ছিল কিন্তু তাদের মধ্যে যে একধরণের অনিচ্ছাকৃত পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিলতা আইজ্যাকসনও স্বীকার করেছেন

স্টিভ জবস এবং বিল গেটস দুজনই একে অপরের কাজ নিয়ে মন্তব্য করতে এবং স্পষ্টভাবে সমালোচনা করতে বিব্রতবোধ করতেন কারণ একজন খুব ভালোভাবে জানতেন যে অন্যজন মেধাবী। তাদের অপছন্দের বিষয়টি একদিক থেকে রাশিয়ানদের মতো। একজনের সাফল্য অন্যজনকে কষ্ট দিত। পুঁজিবাদের এই দুই দেবতা একে অপরের সাথে লড়তে পারতেন কারণ বাজার ছিল একেবারেই উন্মুক্ত ভোক্তারা এজন্য উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন কারণ তাদের জয়ী হওয়ার , অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার বাসনা ভোক্তাদের কাছে আসত বিশাল কিছু হয়ে। আমাদের ডলারের জন্য বিদেশী প্রতিযোগিতা এর থেকে আলাদা কিছু নয়। তাই আমাদেরও উচিত বাজার উন্মুক্ত রাখা

এন্টিট্রাস্ট আইনের দুর্বলতা

এন্টিট্রাস্ট একটি মারাত্মক ব্যাপার যা মনে করিয়ে দেয় যে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা বড় কোম্পানিগুলোকে ভেঙে দিতে পারে। অ্যাপলের উত্থান, পতন এবং পুনরায় উত্থান নিয়ে আইজ্যাকসনের গল্প এই ধরণের পদক্ষেপের মূঢ়তা প্রমাণ করে। সোজা কথায়, কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা সেক্টরের বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করা প্রায় অসম্ভব

আইজ্যাকসন লিখেছেন , ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপল যখন অ্যাপল কম্পিউটার কো. তে পরিণত হয় তখন সিলিকন ভ্যালির নেতৃত্ব দিত হেওলেটপ্যাকার্ড তখন জবস, ওজনিয়াক এবং একজন অংশীদার মিলে কোম্পানির মূল্য নির্ধারণ করেন ৫৩০৯ ডলার। তার প্রায় চার বছর পর একটি আইপিওর পর অ্যাপলের মূল্য দাঁড়ায় .৭৯ বিলিয়ন ডলার। এটি ছিলো ১৯৫৬ সালের ফোর্ড মটরস এর আইপিওর পর সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইব করা আইপিও। ১৯৮০ সালে স্টিভ জবসের হাতির কাছে বিল গেটস ছিলেন অনেকটা পিঁপড়ের মতো। কিন্তু ৯০ দশকের শেষদিকে এসে যখন জবস অ্যাপলে ফিরে আসলেন তখন অ্যাপল দেউলিয়া হওয়ার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল অন্যদিকে বিল গেটস তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর কোম্পানি পরে এমন সফলতা অর্জন করে যাতে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর এন্টিট্রাস্ট আইন জারি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে

প্রযুক্তি বাজারে নেতৃত্ব

১৯৮০ সালে কেউ আগে থেকে বুঝতে পারে নি যে গেটস জবসকে ছাপিয়ে যাবেন। আপনি যদি বলেন আপনি পেরেছিলেন আপনি অবশ্যই একজন বিলিওনিয়ার হওয়ার সামর্থ্য রাখেন। এটা স্পষ্ট ছিল যে যখন গেটসের মাইক্রোসফ্ট সেইসময়ের মৃতপ্রায় অ্যাপলে বিনিয়োগ করেছিল , এবং অ্যাপলের বোর্ড যখন জবসকে সিইও হিসেবে পুন:পদায়ন করল তখন প্রায় কেউই তার ভালো ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারে নি

01কিন্তু এখন সকলেই জানে জবসের ফিরে আসার পরিকল্পনা সঠিক ছিল , একসময়ের মৃতপ্রায় অ্যাপল খুব কমদিনের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিতে রুপান্তরিত হল। একসময়ের নেতৃস্থানীয় হেওলেটপ্যাকার্ড তার পথ হারিয়ে ফেলে এবং মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে জবস পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট কর্পোরেট নির্মাণের লক্ষ্যে কুপারটিনোতে কোম্পানির হেডকোয়ার্টার কিনে নিয়েছিলেন

মজার ব্যাপার হলো আমরা কখনোই নাম শুনি নি এমন অনেক স্টার্টআপ সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছে। অ্যাপল যদি এর পথ হারিয়ে ফেলে কোম্পানিগুলো হয়ত সময়ের পরিক্রমায় অ্যাপলকে ছাপিয়ে যাবে পয়েন্টলেস থাকার চেয়েও এন্টিট্রাস্ট খারাপ বিষয়। আপনি যদি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন তাহলে আইজ্যাকসনের বইটি পড়ুন বইটি বাজারের নিষ্ঠুর নিয়মে কিভাবে নিয়মিতভাবে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল

এক্সিকিউটিভদের বেতন প্রসঙ্গ

এবার এক্সিকিউটিভদের বেতনের কথায় আসা যাক। জবস মৃত্যুবরণ করার সময় তার সম্পদের মূল্য ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারপিক্সার এবং অ্যাপলের শেয়ার থেকে তার এই সম্পদ সৃষ্টি হয়। অ্যাপলে ফিরে আসার পর থেকে তার সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ানো পর্যন্ত তিনি বছরে ডলার করে বেতন নিতেন। এই সময়ের মধ্যে বোর্ড জবসকে একটি গাল্ফস্ট্রিম ভি (উড়োজাহাজ) কিনে দেয় এবং ১৪ মিলিয়ন শেয়ার অফার করে। জবস ২০ মিলিয়ন শেয়ার দাবী করে, এবং আইজ্যাকসনের মতে তার এই অনুরোধ বোর্ড সদস্য এল উলার্ডকে অসন্তুষ্ট করেছিল

এসবের মূল কথা হলো জবসের দাবী এবং গাল্ফস্ট্রিম এর বিষয়টি সে সময়ের অনেক সিইওকে আঘাত করেছিল এবং তারা ঘটনার নিন্দাও করেন। তবে ইতিহাস সাক্ষী, জবস তর্কসাপেক্ষে ইতিহাসের সবচেয়ে কম বেতন পাওয়া সিইও। তার উদ্ভাবনগুলো একটি মৃতপ্রায় কোম্পানিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানিতে রুপান্তরিত করে। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি সব মিলিয়ে পেয়েছেন একটি প্লেন এবং বিলিয়ন ডলার!

একজন সিইও তার কোম্পানিকে কতটা প্রভাবিত করতে পারেন জবসের জীবন থেকে তা আমরা বুঝতে পারি। তাদের প্রভাব তাদের বেতনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়। কখনো তারা জবসের মত কম পাবেন আবার কখনো বেশি পাবেন। যারা বলেন, ‘‘স্টিভ জবস অন্য রকম ছিলেন, জিনিয়াস ছিলেন তিনি তার প্রাপ্য পেতেই পারেন, আপনারা লাভের গুড়টুকুই শুধু খেতে চানতাদেরও ভুল বলা হবে। ৯৭ সালে যখন জবস আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপলের সিইও হিসেবে যোগ দিলেন তখন এর শেয়ারের মূল্য দেখলেই ব্যাপারটি বোঝা যায়

অনেকেই ১৫ বছর আগে কেনা অ্যাপল শেয়ারের ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না কারণ ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত জবসের ট্র্যাক রেকর্ড নিখুঁত ছিল না। তাঁর অপরিণত আচরণের জন্য ১৯৮৫ সালে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন; সে সময় জবস এমন নাজুক অবস্থায় ছিলেন যে অ্যাপল বোর্ড তার চেয়ে জন স্কালিকেই বেশি পছন্দ করেছিল

Optimized-stayhungry-940x626ব্যর্থতা থেকে শেখা

উল্লেখ্য, অ্যাপল থেকে চলে যাওয়ার পরও জবস খুব শীঘ্রই সাফল্যের মুখ দেখতে পাননি। জবসের পরবর্তী সৃষ্টিনেক্সট জবসের সময় কেমন যাচ্ছিল সে ব্যাপারে আইজ্যাকসন বলেন, “এর ফল ছিল বেশ কিছু নয়নাভিরাম পণ্য এবং সেগুলো বাজারে চোখধাঁধানো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।’’ কিন্তু অ্যাইজ্যাকসন তার ভুলগুলো সম্পর্কে বলেন, “ এটা ছিল সত্যিই শেখার মত অভিজ্ঞতা।

কথাগুলো মনে করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক খারাপ ব্যাংক এবং কার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরণের ‘‘বাজারে চোখ ধাঁধানো বিপর্যয়এর মুখোমুখি করতে দেয়া হয় না হয়ত ধৃষ্টতার মতো শোনাবে তবু বলছি, পর্দার আড়ালে যা থেকে যাচ্ছে তা হলো রাজনীতিবিদরা ব্যাংক এবং কার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা ঢেকে রাখছেন সবসময় এবং বিষয়টি কোনো পক্ষের জন্যই কল্যাণকর নয়। ভোক্তারা ঈশ্বরকে এজন্য ধন্যবাদ দিতে পারেন যে বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও জবসের ওয়াশিংটন পুলের পথ ধরার উপায় ছিল না। তিনি এবং তার ভোক্তারা বেশি লাভবান কারণ তার ভুলগুলোকে সাবসিডাইজ করা হয় নি

পিক্সারের ক্ষেত্রে শুরুটা মোহনীয় ছিল না। জর্জ লুকাস যখন তার ডিভোর্সের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন জবস তখন তার কাছ থেকে এটি কিনে নিয়েছিলেন। আইজ্যাকসনের মতে, এরপর পিক্সার জবসের জন্য মোটামুটি অর্থ উপার্জনের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়। তবে এটা এমন ছিল যে একসময় জবস পিক্সারের জন্য একজন ক্রেতা খুঁজছিলেন যাতে এখানে লগ্নিকৃত ৫০ মিলিয়ন ডলার তিনি ফেরত পান সৌভাগ্যক্রমে জবস ক্রেতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। কারণটয় স্টোরি অনাকাঙ্ক্ষিত সাফল্যের পর যখন এর শেয়ার বাজারে ছাড়া হয় তখন হঠাৎ এর মূল্য দাঁড়িয়ে যায় . বিলিয়ন ডলার

ব্যর্থতা একজন শিক্ষক এবং যদি তাকে তার মতো কাজ করতে দেয়া হয় তা সাফল্যের দিকেই নিয়ে যায়। অনেকবার ব্যর্থতার স্বাদ পাওয়া জবস অ্যাপলে ফিরে এসেছিলেন এবং এমন একজন অভিজ্ঞ নেতা পেয়ে এর শেয়ারহোল্ডারগণই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গ

এবার কথা বলা যাক কর্মসংস্থান বিষয়ে। রিপাবলিক্যান পার্টির মধ্যে প্রাথমিক নির্বাচনের সময় এবং তারপর প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পেইনের সময় মিট রমনিকে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিক্যান দুই দলের প্রার্থীরা নিয়মিতভাবে অশুভ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি কীভাবে তার অর্থ বানিয়েছেন সেটাই ছিল তাদের অভিযোগের তীর। তাঁর সংকীর্ণ কুৎসা রটনাকারীরা বলতেন, রমনি অসহায় কর্মীদেরকে ছাঁটাই করে এবং কোম্পানি লুট করে এই সম্পদ তৈরি করেছেন। আমার মনে হয় জবস এই কুৎসা রটনাকারীদের সাথে একমত হতেন না তিনি আইজ্যাকসনের কাছে অ্যাপল ম্যাকিনটশের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন,“যখন একটি টিম তৈরি করা হয় তখন সহজেই সেখানে কিছুবিপ্লেয়ার ঢোকানো যায় এবং তারা তখন আরো কিছুবিপ্লেয়ারকে আকর্ষণ করে, এবং অতিসত্ত্বর আপনি তাদের সাথে কিছুসিপ্লেয়ারও দেখতে পাবেন ম্যাকিনটশের অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যেপ্লেয়াররা শুধুপ্লেয়ারদের সাথেই কাজ করতে চায়, তার মানে আপনিবি’ প্লেয়ারদেরকে সেই দলে নিতে পারেন না।সংক্ষেপে জবস কর্মসংস্থান বাড়াতেন পিছিয়ে পরা কর্মীদেরকে ছাঁটাই করার মাধ্যমে। যদি মুনাফা না হয়, ইনভেস্টমেন্ট হবে না, চাকরিও সৃষ্টিও হবে না

কীভাবে একটি সফল কোম্পানি পথে পা বাড়াতে পারে সে বিষয়ে জবসের ভিশন গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয় যখন তিনি ১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ফিরে আসেন। রমনিরবেইন ক্যাপিটালদুর্বল কোম্পানিগুলোকে ক্রয় করে তারপর সেবা শুশ্রুষা করে সেগুলোকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল জবস অ্যাপলের এমন সময়ে সেখানে ফিরে আসেন যখন সেটি৯০ দিনেরও কম সময়ে দেউলিয়া হয়ে যেত।এবং আইজ্যাকসন লিখেছেনতার ফিরে আসার প্রথম বছরই জবস তিন হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেন যা কোম্পানির ব্যালান্স শিটকে বাঁচিয়ে তুলেছিল। রমনির মতো জবস বুঝেছিলেন সাফল্যের এবং কর্মসংস্থানের দ্রুততর উপায় প্রায়শই কর্মসংস্থান ধ্বংস করা। জবস বি টিম প্লেয়ারদেরকে ছাঁটাই করেছিলেন এবং এর বিনিময়ে তিনি

বিশ্বমানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছিলেন। মানুষ রমনি সম্পর্কে যাই ভাবুক তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার সম্পর্কে যাই বলুন তা শুধু নোংরা রাজনীতিরই অংশ হয়ে থাকবে

মুনাফার প্রসঙ্গ

আজকের দুনিয়ায় মুনাফার বিষয়টি নিয়ে তাঁদেরকে অশুভ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে জনপ্রিয় হওয়া সহজ। তবে জবস আইজ্যাকসনকে বলেন, “মুনাফা করা অসাধারণ একটি ব্যাপার কারণ মুনাফাই আপনাকে অসাধারণ পণ্য তৈরি করতে সমর্থ করে তুলবে।সত্য কথা বলতে জবস বিশ্বাস করতেন পণ্য মুনাফার চেয়ে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করা উচিত। কিন্তু সহজ সত্য হলো মুনাফা এবং এর ঘাটতিই জবসকেলিসাবানানো বন্ধ করে আইপড, আইফোন এবং আইপ্যাড বানাতে বাধ্য করেছিল। জবস ছিলেন পণ্য অন্ত:প্রাণ মানুষ। পণ্যের প্রতি তার টান তাকে মহতী উদ্ভাবনের দিকে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার কাজ শেষ পর্যন্ত মুনাফার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল এবং কারণেই ব্যর্থ উদ্যোগগুলো স্বমহিমায় ফিরে এসেছে বিস্ময়করভাবে

মুনাফাযা আপনাকে অসাধারণ পণ্য তৈরি করতে সামর্থ্য দেয়।এই কথাটি মনে রাখা উচিত এবং শিখে রাখা উচিত। শেষপর্যন্ত মুনাফাই উদ্যোক্তাকে জ্ঞান এবং আলো দেখায় যা বিনিয়োগকারীদেরকে আকর্ষণ করে এবং উদ্যোক্তাকে সঠিক পথ দেখায়। স্টিভ জবস ধনাঢ্য হয়ে উঠেছিলেন কারণ ভবিষ্যত সম্পর্কে তার ভিশন ক্রমবর্ধমান ভোক্তাদের চাহিদার সাথে মিলে গিয়েছিল এবং ব্যাপারটিই তার কোম্পানিতে অর্থের ধারা বইয়ে দিয়েছিল। ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের বইস্টিভ জবসপড়ার পর পাঁড় সমাজতন্ত্রীও স্বীকার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন যে মুনাফা উপার্জন করা একটি ভালো ব্যাপার

সূত্র: ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাবের ওয়েবসাইট

Sharing is caring!

Leave a Comment