করিৎকর্মা কামাল
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ভালোবাসার মানুষের জন্মদিন। এক তোড়া ফুল আর একটা কেক পাঠাতেই হবে। কিন্তু এক শহরে নেই দুইজন। ছটফট লাগছে তো? কী করবেন? আপনার দোরগোড়ায় ভালোবাসা আর আবেগ পৌঁছে দেবে কে? দরকারি একটা কাগজ বাসায় ফেলে এসেছেন, ২ ঘণ্টার মধ্যে মিটিংয়ে সেই কাগজ লাগবে, বাসায় এমন কেউ নেই যে এসে দিয়ে যেতে পারবে, কী করবেন? ছোট্ট একটা অনলাইন শপ শুরু করেছেন, অনেক শখের একটি। ক্রেতা থাকেন উত্তরা আর আপনি নারিন্দা, জিনিস না দেখে ক্রেতা নেবেন না, প্রতিদিন ক্রেতার বাড়ি বাড়ি ছোটা তো আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, সমাধান কি? হোম বা অফিস ডেলিভারি দেওয়ার জন্য এমন কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
পিক অ্যান্ড ড্রপ ঠিক এমনই একটা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। আপনার চাহিদা মতো তারা পাশে দাঁড়াবে সব সময়। পিক অ্যান্ড ড্রপের প্রতিষ্ঠাতা কামাল মো. শরীফ। বিস্তর পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানিতে, এছাড়াও কাজ করেছেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। কিন্তু চাকরি তার সঙ্গে যায় না। ভালোও লাগে না। তাই সব ছেড়ে ছুড়ে সেবা ও পেশা এক সঙ্গে বেছে নিতে প্রতিষ্ঠা করেন পিক অ্যান্ড ড্রপ।
নিজের কথা বলতে গিয়ে কামাল বলেন, বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলাটা বিভিন্ন জেলায় জেলায় কেটেছে। কাজ করতে করতে মনে হলো নিজের জন্য একটা কিছু করা দরকার। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে মনে হলো যে, ই-কমার্সের সঙ্গে যোগ দেওয়া যায়। যারা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পার্সেল সার্ভিস দেওয়া।
কাজের শুরুটা সম্পর্কে কামাল জানালেন, “প্রথমে ছয়টা মাস শিখেছি কীভাবে কাজ করতে হয়। তখন শুধুমাত্র একজন ক্লায়েন্ট ছিল। প্রতিদিন কাজ ছিল দুই একটা পার্সেল। তখন নিজেও ডেলিভারি দিতেন, আর স্বপ্ন দেখতেন একদিন অনেক বড় হবে এই প্রতিষ্ঠান। ডেলিভারি ম্যান মনে করে অনেকেই টিপসও ধরিয়ে দিয়েছে হাতে। ধীরে ধীরে তিনজন থেকে পাঁচজন হলো ক্লায়েন্ট।এক বছরে ক্লায়েন্টের সংখ্যা দেড় শতাধিক, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চারটি বিভাগীয় শহরসহ মোট ডেলিভারি ম্যান ৫০ জনেরও অধিক।
প্রথম দিকে অফিস ছিল নিজের বাড়ির ছাদে। বৃস্টিতে কখনও পণ্য ভিজে যাওয়ার সংকট, হিসাব মেলানো, ঈদের আগে ভয়ঙ্কর কাজের চাপ। সব মিলিয়ে পিক অ্যান্ড ড্রপ পিছিয়ে পড়েননি। ছোট একটা অফিসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে কামাল অ্যান্ড টিম।
কাজটি বেশ কঠিনই বলে মনে হয় কামালের। তবু মানুষের স্বপ্ন বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বলে কথা। কামাল বলেন, প্রতিটি জিনিসের সঙ্গেই তো আসলে অনেক ধরনের ভাবনা থাকে। কারও জন্মদিন, কারও অফিসের প্রোগ্রাম, কারও ভালোবাসা। সব কিছু মিলে প্রতিটা প্রোডাক্টকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হয় এবং সেভাবেই সবগুলো প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিতে হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে পিক অ্যান্ড ড্রপের প্রতিটি ক্লায়েন্ট যোগাযোগ, ডেলিভারি স্ট্যাটাসসহ সব তথ্য পান ফেসবুক পেইজে। ফোনের হ্যাপা প্রায় নেই বললেই চলে। ডিজিটালাইজড বলে যাকে।
পিক অ্যান্ড ড্রপের সেবা গ্রহণকারীদের নাকি সিংহ ভাগই নারী উদ্যোক্তা। নিজের বাড়িতে বসেই কিছু করার চেষ্টা থেকেই তারা উদ্যোক্তা আর যুক্ত হয়েছেন পিক অ্যান্ড ড্রপের সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে সম্পূর্ণ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম। নিয়মিত পণ্যের পাশাপাশি কেক, খাবার, পেইন্টিং, ক্রাফটস সবই ডেলিভারি দেওয়া হয় ক্লায়েন্টের চাহিদায়।
হোম ডেলিভারি সার্ভিস দিতে আগ্রহীদের জন্য কামাল জানান, “প্রতিটা পার্সেলের যদি আলাদা আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে পারেন তবেই এই পেশায় আসুন। কারণ প্রতিটি পার্সেলের পেছনেই থাকে স্বপ্ন।”
স্বপ্ন বাড়ি পৌঁছে দিতে দিতেই এক বছরে পা রাখলো পিক অ্যান্ড ড্রপ। কামালও এগিয়ে যাচ্ছেন দূরন্ত গতিতে। হোম ডেলিভারি নিয়ে আরও অনেক স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তাকারী হিসেবে এগিয়ে যেতে যান তিনি ও তার পিক অ্যান্ড ড্রপ।