অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় বাংলার টালি

অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় বাংলার টালি

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

খুলে গেছে বিরাট এক সম্ভাবনার দরজা। বিস্ময়কর শিল্প নৈপুণ্য নিয়ে বাংলার টাইলস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে। মাটি আর পানি মিশিয়ে বানানো হচ্ছে তুলতুলে কাদা। রোদে শুকানো হচ্ছে। পুড়িয়ে?তৈরি করা হচ্ছে মাটির সোনা। নাম তার কাদামাটির খাঁটি সোনা- বাংলার টাইলস। বাংলার মাটির তৈরি টাইলস রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে। পোড়ামাটির সোনায় হতাশা কেটে গেছে মৃৎশিল্পীদের। আধুনিক শিল্পের একটি নতুন প্রয়াসে অভাব কাটিয়ে এখন নতুন আশায় স্বপ্নের জাল বুনছে টাইলস কারিগররা।


 

ইউরোপের বাজারে বাংলার টাইলস

ভাবতে অবাক লাগে বিদেশীদের কাছে টাইলসের কদর বাড়ছে। বাংলার মাটির তৈরি টাইলস?যাচ্ছে ইতালি ও আমেরিকায়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজাইনের টাইলস অর্ডার দিচ্ছে ইতালি ও আমেরিকার আমদানিকারকরা। ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশও বাংলার টাইলস আমদানির চিন্তা-ভাবনা করছে। বিদেশীরা আমদানির পর পোড়ামাটির টাইলসে বিশেষ একধরনের কেমিক্যাল লাগিয়ে- রং উজ্জ্বল করে মজবুত ও টেকসই আধুনিক টাইলস হিসেবে ব্যবহার করছে। এই টাইলস সিরামিক টাইলসের মতোই মেঝে ও দেয়ালে ব্যবহার করা যায়।

বিশাল কর্মযজ্ঞে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা

সাতক্ষীরার টালি এখন অর্থনৈতিক খাত। কারণ মাটির তৈরি টালি শুধু বিদেশীদের নজর কাড়েনি, ঘুরিয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকাকেও।কোন মেশিন বা যন্ত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ হাতের তৈরি টালি দখল করে নিয়েছে ইউরোপের বাজার। প্রায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। দিন দিন কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। মাটি ও পানি হচ্ছে টালি ও টাইলসের প্রধান উপকরণ। পারিশ্রমিক ছাড়া খরচ বলা যায় একেবারেই কম। তারপরও একটি টাইলসে সর্বসাকুল্যে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩ টাকা। প্রতিটি টাইলস ইতালিতে বিক্রি হয় ১৭ টাকা দরে। প্রায় ৬ গুণ বেশি দামে। কলারোয়ার পালপাড়া থেকে ট্রাকে করে টাইলস প্রথমে পাঠানো হয় সমুদ্রবন্দর মংলায়। সেখানে ট্রাক থেকে নামিয়ে বন্দর শেডে সযতেœ প্যাকিং করা হয়। তারপর সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম, সিঙ্গাপুর হয়ে ইতালি ও আমেরিকায় যায় বাংলার টাইলস।

সাতক্ষীরা থেকে ইতালি নগর

টালির সাম্রাজ্যে সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী কলারোয়া উপজেলা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুরারীকাঠি গ্র্রাম। মুরারীকাটি-শ্রীপতিপুরে মাটির কারিগররা গড়ে তুলেছে বাহারি টালির এক সাম্রাজ্য। ব্যাপক পরিমাণে ইতালিতে টালি রফতানির কারণে কুমারপাড়া এখন ইতালি নগর নামেই অধিক পরিচিত। টালি কারখানাগুলোতে এখন বছরে উৎপাদন হয় ৭০০ থেকে ৮০০ কনটেইনার। বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ কন্টেইনার টালি মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ইতালি যায়। কারি কারি ডলার, স্টার্লিং আর ইউরোতে সমৃদ্ধ করেছে দেশের অর্থনীতিকে। নতুন আশা জাগিয়েছে রফতারি ক্ষেত্রে।

যাচ্ছে টালি- আসছে ডলার

ভেবে দেখুন একবার- কত গর্বের কথা, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এদেশের মাটি দিয়ে গড়া টালি মেঝে, ছাদে, দেয়ালে টাইলস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। টালি রফতানি আয়ের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও শিল্পকে তুলে ধরেছে বিশ্ব দরবারে। আশার খবর হচ্ছে- ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দিন দিন বাংলার মাটির তৈরি করা টালির চাহিদা বাড়ছে।টালি কারখানাগুলোতে অন্তত দুই হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে। কলারোয়ার মাটির টাইলসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান- ক্লে টাইলস, কটো ইনোভেটর, আরনো এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, জে.এস ট্রেডার্স, ডি.চন্দ্র পাল, নিকিতা ইনটারন্যাশনাল, কটো ইনোভেটর লিমিটেড। কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি, শ্রীপতিপুর ও মির্জাপুর এ তিনটি গ্রামে টালি কারখানা রয়েছে প্রায় ৩২টি।টালির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ব্যক্তিরা টালির কারখানা গড়ে তুলেছেন। প্রতিবছর কলারোয়ায় উৎপাদিত টালি রফতানি করেই অর্জিত হচ্ছে পাঁচ-ছয় কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যাপ্ত পুঁজি, ভাল বাজারদর জ্বালানি কাঠের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে দেশের মাটির তৈরি টালি দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে রফতানি করা সম্ভব। সরকারের অনুপ্রেরণায় দেশেও টালির তৈরি বাড়িঘর নির্মাণ বাড়ানো সম্ভব। হাতের তৈরি এই টালিকে আরও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে দেশের বিল্ডিংয়ে কারুকার্যময় টাইলস হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া গেলে দেশের অভ্যন্তরেও বড় বাজার সৃষ্টি হবে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment