দুগ্ধপণ্য : বগুড়ার দই

দুগ্ধপণ্য : বগুড়ার দই

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

বগুড়ার দই গুণে মানে স্বাদে অতুলনীয়। বগুড়ার দইয়ের নাম শুনলে জিভে জল আসে! বগুড়ার দইয়ের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে গেছে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী দই একবার খেয়ে আবার খাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্বাদ আর মানের কারণে এই দইয়ের সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও। বগুড়ার আনাচে কানাচে বাহারী নামে বগুড়ার দই বিক্রি হচ্ছে। দই যেন মিশে আছে বগুড়ার প্রাণে প্রাণে। বগুড়ার চেলোপাড়ার কুড়ানু ঘোষ এবং শুটকা ঘোষসহ আরও কয়েকজন ঘোষের হাত ধরে এই দই তৈরি শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার আগ থেকে। ঘোষদের কাছে হাতে খড়ি হয় বাঘোপাড়ার রফাত, খান্দারের মহররম, নবাববাড়ি রোডের গৌর গোপালের। এভাবে চলতে চলতে বগুড়ায় বর্তমানে দই দোকানের সংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক।

দই বাণিজ্য শুরু হয়েছিল বগুড়ার শেরপুর এলাকায়। সেই ১৯৬০ সালের কথা। গৌরপালের সরার দই তখন নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারে সরবরাহ করা হতো। এ কারণে সে সময় এই দই নবাববাড়ির দই নামে পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর দই তৈরিতে শহরের গৌরপাল, মহরম আলী এবং বাঘোপাড়ার রফাত আলীর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তখন ফেরি করে দই বিক্রি হতো। সময়ের বিবর্তনে বগুড়ার দই ঘরের আহসানুল কবির দই তৈরি ও বাজারজাতকরণে নতুনত্ব আনেন। তিনি ছোট ছোট হাঁড়িতে দই বানিয়ে প্যাকিং এবং সংরক্ষণে আনেন নতুন ধারণা। ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে তাঁর হাত ধরেই নতুন বাণিজ্যিক ধারায় বগুড়ার দইয়ের আভিজাত্য ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তারপর দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বগুড়ার দই ব্যবসা ও সুনাম ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বগুড়া জেলার প্রায় ১০০ দোকানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার দই বিক্রি হয়। এই দই বিক্রির বার্ষিক হিসাব একশ’ কোটি টাকারও বেশি। রাজধানী ঢাকাসহ স্থানীয় বাজারে বছরে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার দই বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, বগুড়ার দইয়ের বাজার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমেরিকা, ফিলিপিন্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রফতানি হচ্ছে বগুড়ার দই। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারী তত্ত্বাবধানে রফতানির উদ্যোগ নিলে ফি-বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এজন্য দরকার সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা।

দইমেলা

তাড়াশের দইমেলা নামটা অনেকের কাছেই অপরিচিত। দইয়ের আবার মেলা হয় নাকি। দই নিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বসে একদিনের দইমেলা। দই আর দই। তাড়াশ চলন বিলের অংশ। সিরাজগঞ্জের এই উপজেলা এক সময় ডাকাতদের অভয়ারণ্য ছিল। গল্প-উপন্যাসে তাড়াশের ডাকাত কাহিনী ঠাঁই পেয়েছে। সেই ডাকাত অভয়ারণ্যে দইয়ের মেলা, ভাবা যায়! জানা গেছে প্রতি বছর মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথির দিনে বসে এই দইমেলা। তাড়াশ উপজেলার জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণের মাঠটিকে স্থানীয় জনগণ রসিক রায়ের মাঠ নামেই চেনে। মেলার দিনে এই মাঠজুড়ে দই আর দই। ডালিতে ডালিতে পসরা সাজানো সব দইয়ের ভা-ো। চলনবিল এলাকা ঘোষেরা তৈরি করেন হরেক রকমের এই মিষ্টি দই। বগুড়া থেকেও দই বিক্রেতারা আসেন এই মেলায়। এখানে ৫০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ২০০ টাকা কেজি দরের দই পাওয়া যায়।থাকবে না গরু সঙ্কট

এস এম মুকুল
গবেষক ও কলাম লেখকfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment