গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা

গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

গ্লাডিওলাস ফুল ইদানিংকালে আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর ইংরেজি নাম Sword lily ও বৈজ্ঞনিক নাম Gladiolus sp. গ্লাডিওলাস ফুল কমবেশি সারাবছরই আমাদের দেশে উৎপাদন করা হয়। গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রঙএর হয়ে থাকে। যেমনসাদা, হলুদ, গোলাপী, লাল, ফিকে লাল, বেগুনী ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা প্রভৃতি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করা হচ্ছে।

বাজার সম্ভাবনা

গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রঙ- এর  হয়ে থাকে। বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অনুষ্ঠানের স্থান সাজানোর জন্য  এই ফুলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কাঁটা ফুল হিসেবে ফুলদানিতে রাখলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ফুল ফুটতে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন রঙ-এর গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন আমাদের দেশে বাড়ছে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি, ফুল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। গ্লাডিওলাস ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় মূলধন

এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষের জন্য প্রায় ২০০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)  শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

ব্যাংকঃ

সোনালী ব্যাংকঃ http://www.sonalibank.com.bd/

জনতা ব্যাংকঃ http://www.janatabank-bd.com/

রূপালী ব্যাংকঃ http://www.rupalibank.org/rblnew/

অগ্রণী ব্যাংকঃ http://www.agranibank.org/

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকঃ www.krishibank.org.bd/

এনজিও

আশাঃ http://asa.org.bd/

গ্রামীণ ব্যাংকঃ http://www.grameen-info.org/

ব্রাকঃ http://www.brac.net/

প্রশিকাঃ http://www.proshika.org/

আয়-ব্যয় ও লাভের হিসাব

গ্লাডিওলাস ফুল উৎপাদন খরচ

১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ফসল উৎপাদন খরচ

খরচের খাত

পরিমাণ

আনুমানিক মূল্য (টাকা)

বীজ/চারা

৫০০টি

৭৫০০

জমি তৈরি

চাষ ও মই

৮০০

পানি সেচ

২ বার

৪০০

শ্রমিক

১০ জন

১৫০০

সার

প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার

এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এর জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।

কীটনাশক

প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার

নিজস্ব/দোকান

জমি ভাড়া

একবছর

৪০০০

মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।

সম্ভাব্য আয়ঃ

সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করলে গড়ে প্রতিদিন ৬৭৫টি স্টিক পাওয়া যায়। প্রতিটি স্টিক যদি গড়ে ৩.০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয় তাহলে মোট আয় হবে:

৬৭৫×৩ = ২০২৫.০০ টাকা (প্রতিদিন)। তাহলে ৩০ দিনের আয় হবে ২০২৫×৩০=৬০৭৫০.০০ টাকা

সুতরাং সম্ভাব্য নীট লাভ হবেঃ

৬০৭৫০.০০- ১৪২০০.০০ = ৪৬৫৫০.০০ টাকা

উল্লোখ্য, ব্যয়ের হিসাব ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ।

গ্লাডিওলাস ফুল উৎপাদন কৌশল

চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি

জলবায়ু

মাটির প্রকৃতি

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস গ্লাডিওলাস চারা রোপণের সবচেয়ে উপযোগী সময়।

দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি গ্লাডিওলাস চাষের জন্য উপযোগী। এ গাছ স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে জন্মাতে পারে না। মাটির পি এইচ ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকলে চাষের জন্য ভালো।

জাত

আমাদের দেশে চাষ করা হয় এরকম ২টি জনপ্রিয় গ্লাডিওলাস জাত হলো- প্রজাপতি ও মিনিয়েচার। প্রজাপতি শ্রেণীর ফুল আকারে বড় হয় ও মিনিয়েচার শ্রেণীর ফুল আকারে ছোট হয়ে থাকে।

বংশবিস্তার

১. বীজ, গুঁড়ি কন্দ ও গুঁড়ি কন্দের গায়ে জন্মানো ছোট ছোট কন্দ থেকে গ্লাডিওলাসের বংশবিস্তার করা যায়।

২. বীজ থেকে তৈরি চারাতে ফুল আসতে অনেক সময় লাগে এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। তাই বীজ দিয়ে সাধারণত বংশবিস্তার করা হয় না।

৩. ফুল দেয়া শেষ হলে গাছ শুকিয়ে যায়। এ সময় মাটি খুঁড়ে গ্লাডিওলাসের কন্দ তুলে নিয়ে এর গায়ে জন্মানো ছোট কন্দগুলো আলাদা করে নিতে হবে।

৪. এর কন্দগুলোর গায়ে লেগে থাকা মাটি পরিষ্কার করে নিয়ে কন্দগুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।

৫. শুকানোর পর কন্দগুলো কিছুটা অন্ধকার শুকানো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

৬. এগুলো সুপ্ত অবস্থা অতিক্রম করে গজানো শুরু করলে নতুন ফুল গাছের জন্য মাটিতে রোপণ করতে হবে।

জমি তৈরি

১. জমি ভালোভাবে কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হবে।

২. চাষের পর গোবর ও সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।

৩. গোবর ও সার জমিতে ছিটানোর পর জমি আবার ভালোভাবে চাষ দিতে হবে।

৪. জমিতে সমান দূরত্ব বজায় রেখে সারি করতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৩০-৪৫ সে.মি. রাখলে চাষের সময় সুবিধা হবে।

কন্দ রোপণ

১. প্রতি সারিতে ২০-৩০ সে. মি. দূরে দূরে কন্দ রোপণ করতে হবে।

২. গর্তের ১০ সে.মি. গভীরে কন্দ রোপণ করতে হবে।

৩. কন্দ রোপণের সময় যতটা সম্ভব বড় ও পুষ্ট কন্দ ব্যবহার করতে হবে। সামান্য অঙ্কুরবিশিষ্ট এবং শেকড় বের হচ্ছে এরকম কন্দ রোপণের জন্য বেছে নিতে হবে।

সার প্রয়োগ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গ্লাডিওলাস ফুল চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচ নিষ্কাশন

১. মাটিতে রসের অভাব হলে নিয়মিত প্রয়োজনমত গ্লাডিওলাস চাষের জমিতে সেচ দিতে হবে।

২. কন্দের গোড়ায় যেন বৃষ্টি বা সেচের পানি না জমে সেজন্য দুই সারির মাঝে নালা তৈরি করে নিতে হবে।

রোগবালাই তার প্রতিকার

গ্লাডিওলাস ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময় পরিচর্যা

১. জমিতে আগাছা থাকলে পোকামাকড়, রোগ জীবাণু ও ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

২. গাছ বড় হলে ফুলগুলোকে সোজা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ঠেস দিতে হবে।

৩. মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং মাটি ঝরঝরে রাখতে হবে।

ফুল সংগ্রহ

গাছের নিচের দিকের দুই একটা ফুল ফোটা শুরু করলে গ্লাডিওলাসের পুষ্পমঞ্জরী সংগ্রহ করতে হবে। ধারালো ছুরি দিয়ে ডাটা কেটে গ্লাডিওলাস ফুল সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে ফুল সংগ্রহের উপযোগী হয়।

উৎপাদিত ফুলের পরিমাণ

প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করলে গড়ে প্রতিদিন ৬৭৫টি স্টিক পাওয়া যায়।

প্রশিক্ষণ

গ্লাডিওলাস ফুল চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে চাষের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষন প্রদানকারী সংস্থা:

ব্রাকঃ http://www.brac.net/

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরঃ www.dyd.gov.bd

বিসিকঃ http://www.bscic.gov.bd/

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরঃ http://www.dwa.gov.bd/

অনুষ্ঠানের স্থান ও ঘর সাজানোর জন্য গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।

রাজশাহীতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষে সাফল্য

ক্ষেতে হয় ধান নয়তো পাট আর মৌসুমভেদে বিভিন্ন সবজি। কিন্তু এই চিরাচরিত ধারণা থেকে বের হয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ির কৃষকরা আজকাল গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করছেন। যদিও এখন অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ শুরু করেছেন তারা তবে আগামি বছর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে এই ফুল চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

গোদাগাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কদমশহর, বিজয়নগর, কাদিপুর ও আমানতপুর এলাকার পাঁচজন কৃষক ১৩ শতক জমিতে প্রদর্শনী আকারে পরীক্ষামূলকভাবে বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুলচাষ করেছেন।

কদমশহরের কৃষক আখলাকুর রহমান বাবু বলেন, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুলের করম সংগ্রহ করি। ৩ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে গিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ১টি গাছ থেকে ১টি ফুলের স্টিক ও ২টি করম রয়েছে। ১টি ফুলের স্টিক ৮ টাকা এবং ১টি করম ৩ টাকা দরে বিক্রি করেছি। জমিতে ২ হাজার ২০০টি ফুলের চারা গাছ রয়েছে। গাছ ভালো থাকায় ফুলের ফলনও ভালো হয়েছে। ফুল চাষে কারিগরিভাবে সহায়তা করেছে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার।

উপজেলার আমানতপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম কালু গত বছর পাঁচ কাঠা জমিতে রজনিগন্ধা ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তিনি জানান, রজনিগন্ধার চেয়ে গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় চলতি বছর আড়াই শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন। জমিতে ফুলের চারা ভালো রয়েছে। ২ হাজার ফুলের চারা থাকায় ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবেন। ফুল চাষে খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত তিনি ফুল বিক্রি করেছেন ৮ হাজার টাকার।

উপজেলার বিজয়নগরের কৃষক শফিকুল ইসলাম চলতি বছর ৩ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করছেন। তবে আগামি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে জমিতে বেশি করে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করবেন বলে  তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ি কৃষি কর্মকর্তা ড.সাইফুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ায় ধান ও গমচাষ করতে গিয়ে তেমন লাভবান হচ্ছে না কৃষকরা। তাই বিকল্প ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

জলবায়ু মোকাবিলা করে ফসল চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হন এজন্য উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন উচ্চ ফলনশীল জাতের শাকসবজিসহ ফসল চাষে গুরুত্ব দিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে উপজেলার ৫ জন কৃষককে ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুলের করম সরবরাহ করা হয়। ফুলচাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফুলের ফলন পাওয়া যায় এবং সারাবছরই ফুলচাষ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

চন্দনাইশ সাতকানিয়ায় ফুল চাষ হচ্ছে অনেক গ্রামে

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকায় মৌ-চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এ দুটি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কয়েকবছর ধরে শত শত একর জমিতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলচাষকে ঘিরে বিপুল পরিমান জমিতে করা যেতে পারে মৌমাছির চাষ। এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা ফুলের খেতে মৌ-চাষ করা গেলে ফুল বিক্রির পাশাপাশি একই খেত থেকে কোটি টাকার মধুও উৎপাদন করা সম্ভব হবে। একইসাথে কর্মসংস্থান হবে শত শত নারী পুরুষের।

ফুলচাষ প্রধান এলাকা সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের চরখাগরিয়ায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় কয়েক’শ নারী পুরুষ ফুলবাগানে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কাজ করছে। এখানকার কৃষকরা এলাকার বিশাল বিল জুড়ে ফুল আবাদ করে নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। কৃষকদের এই সফলতা দেখে এলাকার শত শত বেকার যুবকও এগিয়ে এসেছে ফুল চাষে। ফুলচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুল চাষ করে ইতিমধ্যে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে এলাকার শত শত যুবক এবং জীবনকে বদলে দিয়েছে অনেক কৃষক। একইসাথে সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের। পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায় চরখাগরিয়ার শতাধিক একর জমিজুড়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের। ফুল চাষীরা জানায় এখানে চাষ করা ফুলের মধ্যে রয়েছে লালগোলাপ, সাদাগোলাপ, রজনীগন্ধা, ভুট্টাফুল, গাঁদা, বেলি, কামিনী, গ্লাডিওলাস, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরমফেনিয়া, জারবরা, রতপুসটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টারকলি, ও চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো অসংখ্য প্রজাতির ফুলের । ফুলের খেতে কর্মরত অবস্থায় এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় খাগরিয়ার সফল ফুলচাষী মুজিবুর রহমানের সাথে। মুজিব জানায় একসময় বিশাল সংসারে অভাব লেগেই ছিল। এখন ফুল চাষ করে নিজেকে গড়ে তুলেছে স্বাবলম্বী হিসাবে এবং দূর হয়েছে পরিবারের অভাব অনটন। ফুলচাষ করে মুজিব নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও তার জানা নেই ফুল বাগানে মৌ-চাষ করে অতিরিক্ত আরো আয় করার বিষয়টি। সে জানায় তাকে কারিগরী সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানে সহযোগিতা করা হলে সে নিজেই মৌ-চাষে এগিয়ে আসবে এবং অন্য ফুলচাষীদেরও মৌ-চাষে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে।

বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ফুলের খেতে বাক্স বসিয়ে সেখানে মৌমাছির চাষ করতে যেরকম সুবিধা পাওয়া যায় সেটি আর কোনভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে এপিস মেলিফেরা জাতের মাছি বাক্সে বন্দী করেই মৌ-চাষ করা হলে লাভ বেশী হয়। জানা যায় এক একর ফুল খেতে সঠিকভাবে মৌ-চাষ করা গেলে বছরে ৫ লক্ষ টাকার মধু উৎপাদন করা যায়। পাশাপাশি অন্যান্য মৌ-চাষীদের কাছে মাছি বিক্রি করেও অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ থাকে।

সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কাঞ্চনা, ছদাহা, বাজালিয়া, চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী, বরমা, হাশিমপুর, এলাকার শত শত একর জমিতে চাষ হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের। এসব জমিতে কৃষকেরা অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে সারাবছর ফুলের চাষ করে থাকে। সম্পুর্ন তিন ফসলী আবাদী জমিতে শুধুমাত্র ফুলচাষ করে ইতিমধ্যে সহস্রাধিক লোক নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে। এসব ফুলচাষীদের সাফল্য দেখে আরো অনেকেই ফুলচাষে জড়িয়ে পড়েছে। অথচ হাজার হাজার ফুলচাষীদের কারো জানা নেই ফুলের খেতে মৌমাচির চাষ করে মধু উৎপাদনের মাধ্যমে আরো লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। এসব ফুলচাষীদের সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে মৌ-চাষের যাবতীয় সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সকল উপকরন ক্রয়ে সহজশর্তে ঋনদানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে শুধুমাত্র চন্দনাইশ সাতকানিয়ার ফুলচাষীদের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করে অতিরিক্ত আরো কয়েক কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে কৃষি বিশেষজ্ঞ শৈবাল কান্তি নন্দী জানান মুলতঃ ফুল ও সরিষা চাষপ্রধান এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে মৌ-চাষ গড়ে ওঠে। সে হিসাবে চন্দনাইশ সাতকানিয়ায় গড়ে উঠা ফুল চাষকে ঘিরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌ-চাষ করা গেলে শুধু মধু উৎপাদন করে কোটি টাকা আয় করা যাবে। একইসাথে পুস্টির চাহিদা পুরনের পাশাপাশি শতশত লোকের কর্মসংস্থান হবে বলেও জানান এই কৃষি বিশেষজ্ঞ।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment