সবুজযোদ্ধা

সবুজযোদ্ধা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

গ্রামের গাছগাছালিঘেরা সবুজ প্রকৃতির কোলে আহসান রনির শৈশব-কৈশোর কেটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ঢাকায় চলে আসার পর শহরের সবুজহীনতা, ইট-কাঠ-পাথরের যান্ত্রিক সভ্যতা আর মারাত্মক পরিবেশদূষণ ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। এ শহরে অগুনতি দালানকোঠা। কিন্তু কটা বাড়ির ছাদে বাগান আছে তা যেন হাতে গুনে বলে দেওয়া যায়। আহসান রনি একটা তাগিদ অনুভব করেন। এ শহরে সবুজ ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ২০১০ সালের শেষাংশে নৃবিদ্যা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই গড়ে তোলেন ‘গ্রিন সেভার্স’। শুরুতে সেটা ছিল কেবলই একটা নার্সারি। বছর গড়াতেই পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠনে রূপ নেয়। এর সঙ্গে যুক্তি হতে এগিয়ে আসে অনেক তরুণ।

  • নগর কৃষি ও ছাদবাগান

d865b0b51427e5c2e955efdd5e2e5452-img_7774ঢাকার বাসাবাড়ি, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাগান করে গ্রিন সেভার্স নগরে আবার সবুজ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘আমাদের গরজে আপনার খরচে’ স্লোগানে ‘নগর কৃষি ও ছাদবাগান’ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা ঢাকার প্রায় দেড় হাজার বাড়ি, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছে ছাদবাগান। পাশাপাশি গ্রিন সেভার্সের প্রত্যাশা, শহরবাসী বিষমুক্ত ফল ও শাকসবজি ফলাবেন। শুধু ছাদ নয়, বারান্দা, সিঁড়ি এমনকি জানালাতেও তারা বাগান করে দেয় এবং মাটির টবের বদলে ব্যবহার করে পানির বোতল, সুগন্ধির বোতল, জুতা, চামড়ার ব্যাগ, জিন্‌সের প্যান্ট, গাড়ির টায়ার, প্লাস্টিক-সামগ্রী যেমন মগ, জগ, পাইপসহ বিভিন্ন ফেলনা জিনিস।

শুধু বাগান গড়ে দেওয়া নয়, সেগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলোও গ্রিন সেভার্স শিখিয়ে দেয় হাতে-কলমে।

প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার আগারগাঁওয়ে তাদের কার্যালয়ে ‘কৃষিপাঠ’ নামের একটি আয়োজন থাকে, যেখানে গাছের পরিচর্যার ওপর বিস্তারিত আলোচনা চলে। ভ্রাম্যমাণ নার্সারি ও ক্লিনিক নিয়ে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হাজির হয়ে দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয় গাছ ও গাছের সেবা। এ ছাড়া জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের সহায়তায় তারা তৈরি করেছে প্ল্যানট’স ডক্টর (Plant’s Doctor) নামের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, যেখানে পাওয়া পায় ছাদবাগানের দরকারি তথ্য।

  • অক্সিজেন ব্যাংক

স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের ‘অবুঝ মনে সবুজের প্রতি ভালোবাসা’ জাগিয়ে তুলতে গ্রিন সেভার্স শুরু করে ‘জমাব পয়সা লাগাব গাছ, সবুজ রাখব চারপাশ’ স্লোগানে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ নামের অভিনব একটি উদ্যোগ। কাঠের বাক্সের এই ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের টিফিনের পয়সার বাঁচানো কিছু অংশ থেকে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে ওই স্কুলেই বৃক্ষরোপণ, বৃক্ষ পরিচর্যা, বাগান সৃজন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ পরিবেশ সচেতনতামূলক নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ২০০টি স্কুলে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ উদ্যোগটিকে তাদের স্কুল কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।

 

  • বিনা মূল্যে ছাদবাগান

সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রিন সেভার্স ছাদে বাগান করে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে। এ জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না, শুধু বাগান করার উপযুক্ত একটি ছাদ থাকলেই চলবে। এ প্রকল্পের আওতায় বাগান হবে ২৫০টি বাড়ির ছাদে।

গ্রিন সেভার্সের উদ্যোক্তা হিসেবে আহসান রনি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। পরিবেশ মেলায় একাধিকবার মিলেছে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড, চে গুয়েভারা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননার স্বীকৃতি পেয়েছে গ্রিন সেভার্সের অর্জন।

গ্রিন সেভার্সকে আরও বহুদূর নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন আহসান রনি। ‘প্রতিটি ছাদ হবে বাগান।’ নতুন প্রজন্মকে সবুজমনস্ক করে তোলার স্বপ্ন তাঁদের।

সূত্র : প্রথম আলো    favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment