অনলাইনে খাবারের ব্যবসা

অনলাইনে খাবারের ব্যবসা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

রাজধানীতে চলছে নতুন টেক আউট কালচার। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে প্রিয় রেস্তোরাঁর খাবার অর্ডার দেওয়া যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই খাবারটি আপনার ঠিকানায় পৌঁছেও যায়। এই কালচারকে এগিয়ে নিয়ে দেশে বর্তমানে বেশকিছু ফুড ডেলিভারি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। নতুন এই টেক আউট কালচার নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।


বেশ কয়েক বছর থেকে রাজধানীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নতুন কালচার—হোম ফুড ডেলিভারি সার্ভিস। যা নাগরিকজীবনে নিয়ে এসেছে নতুন মাত্রা। ব্যস্ত জীবনে ভিন্ন স্বাদের খাবার পেতে নির্ভরতা বাড়ছে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরে। এরমধ্যে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ফুডপান্ডা, হাংরি নাকি, ফুডমার্ট ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আপনার ঠিকানায় খাবার পৌঁছে দেয়। তবে তারা নিজেরা কোনো খাবার তৈরি করে না। আপনি যে এলাকায় আছেন, সেই এলাকারই কোনো নামকরা রেস্টুরেন্টের খাবার পৌঁছে দেবে আপনার কাছে। অনলাইন ছাড়াও মোবাইল অ্যাপস কিংবা মুঠোফোনে অর্ডার দিলেও খাবার মিলবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, দিন দিনই অনলাইনে খাবারের চাহিদা বাড়ছে। অর্ডার দেওয়ার পর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই খাবার পৌঁছে যায়। সময় বাঁচিয়ে ভালো খাবার পেতে প্রযুক্তির এই ব্যবহারকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিচ্ছেন এই সেবা। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, কর্মজীবীরা। তেমনি একজন নর্দান ভার্সিটির শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। পরিবার ছেড়ে রাজধানীতে আছেন এক মেসে বন্ধুদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, পড়াশোনার কারণে দেশের বাড়িতে যাওয়ার ফুসরত মেলে কম। তাই অনেকদিন ধরেই ফুডপান্ডার মাধ্যমে খাবার সংগ্রহ করছি। অর্ডার করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই খাবার চলে আসে। এছাড়া ভোজনরসিকদের জন্য এই টেককালচার সোনায় সোহাগা। কারণ মোবাইল ফোনে হাতের ছোঁয়ায় হাজির থাকছে মেন্যু কার্ড। অর্ডার করা মাত্রই খাবার পৌঁছে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বর্তমানে আরেকটি কালচার চালু হয়েছে, তা হলো—যারা ভালো রাঁধুনি, তারা ফেসবুকে পেজ খুলে নিজের ভালো খাবারটির অর্ডার নিয়ে থাকেন। এতে করে ঘরে বসেই রান্নার মাধ্যমে আয়ের একটি উত্স তৈরি হয়। আর এ সুবিধাটা নিয়ে থাকেন অনেকেই। কেননা বাসার ছোট কোনো অনুষ্ঠানের জন্য রান্নার ঝামেলা করা লাগে না বলেই ফেসবুক থেকে ভালো খাবারের অর্ডার দিয়ে মেহমানদারি করা যায়। সবমিলিয়ে ঢাকার এই নতুন টেক আউট কালচারকে সাধুবাদ জানাতে হয়। বলা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির এগিয়ে চলা অব্যাহত আছে।
  • ফুডপান্ডা

ফাস্টফুড, চায়নিজ কিংবা দেশীয় অনেক খাবারের দোকান চালু করেছে ‘হোম সার্ভিস’। তবে এক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডার আবেদন একটু বেশি। শুধু খাবারের অর্ডার সংগ্রহ করাই তাদের কাজ। যে যা খেতে চান, তাদের পছন্দের খাবার, পছন্দের জায়গা থেকে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছে ফুডপান্ডা। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে বহুজাতিক কোম্পানি ফুডপান্ডা যাত্রা শুরু করে এদেশে। সাড়ে ছয় শ রেস্টুরেন্টের সঙ্গে তাদের চুক্তি আছে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মতিঝিল, মিরপুর—সব জায়গায় তারা খাবার পৌঁছে দেন। প্রতিদিন এক হাজার লোক এভাবে খাবার নিচ্ছেন বলে ফুডপান্ডা জানায়। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটে সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু যে ওয়েবসাইট থেকেই অর্ডার দেওয়া যাবে, তা নয়। খাবারের অর্ডার দেওয়া সহজ করে দিতে ফুডপান্ডা তৈরি করেছে মোবাইল অ্যাপ। যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন থেকেও খাবারের অর্ডার দেওয়া যাবে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, রাশিয়াসহ পৃথিবীর ৩৬টি দেশে সেবা দিচ্ছে ফুডপান্ডা। এজন্য বিশ্বের ২২ হাজারের বেশি হোটেলের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে।

  • হাংরি নাকি

অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাসাবাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজটি রাজধানীতে ‘হাংরি নাকি’ প্রথম শুরু করেছিল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে মাত্র পাঁচটা বাইসাইকেল আর ১০টা মোটরসাইকেল নিয়ে তারা কাজ শুরু করেন। এখন তাদের ৮০টি মোটরসাইকেল আছে। কেবল ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটে কাজ করছেন তারা। তিন জেলার প্রায় ৭শ রেস্টুরেন্ট হাংরি নাকির মাধ্যমে গ্রাহকের দোরগোড়ায় তাদের খাবার পৌঁছে দেয়। সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খাবার ডেলিভারির কাজ পরিচালিত হয়। আর এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাকে আটটি ভাগে ভাগ করেছে। যেকোনো জায়গায় ওই এলাকার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পৌঁছাতে তাদের সময় লাগে এক ঘণ্টা। বিশেষভাবে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়, যাতে গরম খাবার গরম থাকে; আবার ঠান্ডা খাবার থাকে ঠান্ডা। সুবিধা হলো—ক্যাশ অন ডেলিভারি। ভালো মানের রেস্টুরেন্টে যেমন—পিত্জা ইন, আমেরিকান বার্গার, ভিলেজ, টেস্টবাড, ন্যান্দুস, বার্গার অ্যান্ড বুস্ট এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য।

  • ফুডমার্ট

২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের কাজ করছে ফুডমার্ট। ঢাকার প্রায় সাড়ে চার শ রেস্তোরাঁর খাবার তারা সরবরাহ করে থাকেন। একজনের যে এলাকায় বাসা, তারা সেখানকার খাবার দিয়ে থাকেন। তবে বেশি লোকের অর্ডার হলে তারা অন্য এলাকার খাবারও পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। রেস্টুরেন্টে যে দাম, অনলাইনেও তাই। বাড়তি কোনো টাকা লাগে না। আর এখন খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা ফি থাকলেও বেশির ভাগ সময়েই তা নেওয়া হচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, গুলশান ও ধানমন্ডির লোকজনই তাদের কাছে হোম ডেলিভারি সার্ভিস বেশি নিচ্ছেন।

  • খানাহিরো

ঘরে বসে অনলাইনে যেকোনো খাবারের অর্ডার দেওয়া যায় খানাহিরোডটকম থেকে। আর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এর অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই অর্ডার দিতে পারেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পছন্দের খাবারটি ঘরে পৌঁছে যাবে। খানাহিরোর অর্ডার নির্ভর করে যিনি অর্ডার দেবেন তার এলাকা ও সেখানকার রেস্টুরেন্টগুলোর ওপর। কোন কোন রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার দেওয়া যাবে, তার তালিকা সাইট বা অ্যাপেই পাবেন। একাধিক রেস্টুরেন্ট থেকেও আলাদাভাবে অর্ডার দেওয়া যাবে। ন্যূনতম ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার খাবার অর্ডার দিতে হবে, তা অবশ্য রেস্টুরেন্টের ওপর নির্ভর করে। অর্ডারের সময় কোনো পেমেন্ট করতে হবে না। খাবার ডেলিভারি হওয়ার পর হাতে হাতে তা ক্যাশ পে করতে হবে। ডেলিভারির জন্য আলাদা চার্জ দিতে হতে পারে, তবে তা কোন রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। শুধু ঢাকার ভিতরেই তাদের সেবা চালু আছে।

অনলাইনে খাবার অর্ডারের নিয়ম

আপনার পছন্দের খাবার অর্ডার করতে প্রথমেই ঢুকতে হবে ইন্টারনেটে। মোবাইলে গুগল প্লে স্টোর, গুগল স্টোর বা উইন্ডেজ স্টোর থেকে ফুডপান্ডা, হাংরি নাকি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। অথবা যেতে হবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে নিজের নাম, বাসার ঠিকানা বা অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের পর ইমেইল ও পাসওর্য়াড দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন সেবাটি। এরপর পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে প্রিয় খাবারটি অর্ডার করতে পারবেন। অর্ডার নিশ্চিত করলে কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার থেকে যোগাযোগ করা হবে আপনার সঙ্গে। খাবার পৌঁছে যাবে আপনি যেখানে আছেন সেখানে। চাইলে খাবার পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। অথবা অর্ডার দেওয়ার সময় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থাও রয়েছে।

আরও কিছু তথ্য 

বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ফুডজোন রয়েছে। এসব ফুড জোনের মধ্যে রেস্তোরাঁর খাবারই একমাত্র ওই জোনের অধিবাসীরা অর্ডার করতে পারবেন। এসব প্রতিষ্ঠানের খাবারের প্যাকেট এমনভাবে করা হয় যে ঠাণ্ডা খাবার ঠাণ্ডা আর গরম খাবার গরম থাকে। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার মধ্যে খাবার সরবরাহ করা হয় বলে নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা লেখাসহ কেক পাঠানোর সুযোগ আছে।

ও য়ে ব সা ই ট

জনপ্রিয় কয়েকটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো—

ফুডপান্ডা :www. foodpanda.com.bd

হাংরি নাকি :www. hungrynaki.com.bd

ফুডমার্ট :www. foodmart.com.bd

খানাহিরো :www. KhanaHero.com

ফুডবাংলা :www.FoodBangla.com favicon59-4

Sharing is caring!

1 Comment on this Post

  1. Ami kabar niya business korty chay

    Reply

Leave a Comment