ইসরাইল কীভাবে ‘স্টার্ট আপ নেশন’ হয়ে উঠল ?

ইসরাইল কীভাবে ‘স্টার্ট আপ নেশন’ হয়ে উঠল ?

ব্যাবসায়িক জাতি হিসেবে বিশ্বজুড়ে ইসরাইলিদের খ্যাতির জুড়ি নেই। ভোজ্যপণ্য থেকে শুরু করে আইটি ব্যবসা-সব ক্ষেত্রেই এ জাতি সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বিশ্ববাসী এখন ‘স্টার্ট আপ নেশন’ বললে একমাত্র ইসরাইলকেই বোঝে। কিন্তু কীভাবে ইসরাইল স্টার্ট আপ নেশন হয়ে উঠল? এর কারণ অনুসন্ধান করেছেন দুজন বিশেষজ্ঞ জেফ বাসগ্যাং ও ওমরি স্ট্রেম। জেফ বাসগ্যাং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, অপরদিকে ওমরি স্ট্রেম সম্প্রতি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ইসরাইলি তরুণ উদ্যেক্তা। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন মারুফ ইসলাম


ইসরাইলের ‘স্টার্ট আপ নেশন’ হয়ে ওঠার নেপথ্য কারণ :

১. বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতি

ইসরাইল কীভাবে স্টার্ট আপ নেশন হয়ে উঠল তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ১১২টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ‘কেস স্টাডির’ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই কেস স্টাডিতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮২ শতাংশেরই বিশ্বব্যাপী কার্যালয় রয়েছে। এসব কার্যালয়ে যারা সিইও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তাদের সংখ্যা ৯১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ইসরাইলিরা বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবসাকে প্রসারিত করেছে। এবং শুধু ব্যবসা প্রসারিত করেই ক্ষান্ত হয়নি, নিজেদেরকেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে।

২. বৈদেশিক পুঁজি

ইসরাইলে যেসব ব্যবসায়িক কোম্পানি রয়েছে তাদের ৯১ শতাংশের ফান্ড বা পুঁজি আসে বিদেশ থেকে। এখানে বিদেশ না বলে যুক্তরাষ্ট্র বলাই ভালো। কারণ যক্তরাষ্ট্র থেকেই সবচেয়ে বেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আসে ইসরাইলে।

৩. অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার

গবেষণায় দেখা গেছে, ইসরাইলী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যেক্তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ উদ্যেক্তা পূর্বে কোনো না কোনো ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞরাই এখানে এসে স্টার্টআপ ব্যবসা শুরু করেন।

Top-10-Most-Innovative-Companies-in-Israel4৪. বড় ভাবনা, বড় পরিকল্পনা

এটা সত্যিই বিস্ময়কর যে ইসরাইলের উদ্যেক্তারা কখনোই তাদের ব্যবসাকে ছোট পরিসরে ভাবেন না। তারা ব্যবসা শুরুর আগেই পরিকল্পনা করে, বিশ্বের অন্তত কতটি দেশে তাদের ব্যাবসায়িক কার্যালয় থাকবে। জরিপে দেখা গেছে, খুব কম সংখ্যক উদ্যেক্তা আছেন যারা শুধু ইসরাইলের মধ্যেই ব্যবসা করতে চান।

৫. মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

ব্যবসার জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালের প্রয়োজন হয়। ইসরাইলিরা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জন্য নিজ দেশের বাইরে অনুসন্ধান চালায়। এক্ষেত্রে তাদের শতভাগ সাফল্য আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছ থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিতে বেশি পছন্দ করে ইসরাইলিরা। কারণ হিসেবে তারা জানায়, মার্কিনিদের রয়েছে বৃহৎ ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি মার্কেটিং এবং ভোক্তা ব্যবস্থাপনায় তাদের মেধা অসাধারণ।

৬. প্রতিদিনের পরিকল্পনা

ইসরাইলি উদ্যেক্তাদের যেমন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকে তেমনি প্রতিদিনের পরিকল্পনাও থাকে। তারা পাঁচ বছরের পরিকল্পনার পাশাপাশি পাঁচ দিনের পরিকল্পনা করে থাকে এবং তার পাশেই আজকের পরিকল্পনাও লিখে রাখে।

৭. প্রতিক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ

প্রতিক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে পছন্দ করে ইসরাইলি উদ্যেক্তারা। যদি কোনো ভোগ্য পণ্যের ব্যবসা শুরু করতে চান কোনো ইসরাইলি উদ্যেক্তা তবে তিনি প্রথমেই খুঁজে বের করেন ওই পণ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ একজন সিইও। তারপর মার্কেটিংয়ে নিয়োগ দেন বিপণন বিশেষজ্ঞকে, মানব সম্পদ বিভাগে নিয়োগ দেন মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞকে-এভাবে প্রতিটি সেক্টরে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন ইসরাইলি উদ্যেক্তারা।

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ অবলম্বনে

Sharing is caring!

Leave a Comment