সিডস্টারসজয়ী চার বাংলাদেশি উদ্যোগ

সিডস্টারসজয়ী চার বাংলাদেশি উদ্যোগ

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিত্যনতুন ও উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক ধারণার প্রতিযোগিতা ‘সিডস্টারস ওয়ার্ল্ড’। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বে সেরা হয়েছে ‘ফিল্ডবাজ’। সুইজারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চূড়ান্ত পর্বে সুযোগ পাচ্ছে তারা। সেরা ১০-এ স্থান পেয়েছে আরো তিনটি মোবাইলভিত্তিক ধারণা।


  • সিডস্টারস ওয়ার্ল্ড

প্রতিবছর ৬৫টি দেশে উদ্ভাবনী প্রকল্প উপস্থাপন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সুইজারল্যান্ডের সংস্থা ‘সিডস্টারস’। প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় সমস্যার সমাধানে কাজ করছে প্রতিযোগিতাটির মাধ্যমে—এমন সব উদ্যোগের সন্ধান করে তারা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কিছু প্রাথমিক শর্ত আছে, যেমন—প্রতিষ্ঠানের বয়স দুই বছরের কম হতে হবে, বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের কম হতে হবে এবং অন্তত একটি পণ্য থাকতে হবে।

খ্যাতনামা কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন—এমইএসটি, গুগল ফর এন্টারপ্রেনারস এবং মাইক্রোসফটের সঙ্গে যৌথভাবে সিডস্টারস উদীয়মান উদ্যোগ শনাক্ত ও আঞ্চলিকভাবে সহায়তা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বেটার স্টোরিজ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়েছে ‘সিডস্টারস ওয়ার্ল্ড ২০১৬’।

  • সেরার টিকিট ফিল্ডবাজের

‘সিডস্টারস ওয়ার্ল্ড ২০১৬’-তে দেশসেরা হয়েছে ফিল্ডবাজ। বড় কিংবা মাঝারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার উপযোগী ‘ফিল্ড ইনফরমেশন সলিউশনস’ সফটওয়্যার। এ সেবা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মীরা অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিক্রয়, বিপণন, সরবরাহ কার্যক্রম, কারিগরি মাঠপর্যায়ের যেকোনো কাজ সহজে করতে পারবেন।

ফিল্ডবাজ সফটওয়্যারের দুটি অংশ। মাঠকর্মীদের কাজ করার জন্য ‘ফিল্ডবাজ অ্যাপ’ এবং ম্যানেজারদের জন্য ‘মিশন কন্ট্রোল’। অ্যাপটি অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনে কাজ করে। মিশন কন্ট্রোল একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন, যেকোনো ব্রাউজারে ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপকরা কার্যালয়ে বসে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম তদারকি করতে পারবেন।

যেসব প্রতিষ্ঠান বা এনজিওর কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে এবং যাদের কর্মচারীদের একটি বড় অংশ মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রেই বেশি কাজে আসবে ফিল্ডবাজ। এসব মাঠকর্মী অফিসের বাইরে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেন এবং তাঁদের খাতাপত্রে কাজের হিসাব রাখেন। খাতাপত্রে মাঠকর্মীদের কাজের পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখা কঠিন ব্যাপার। জবাবদিহির অভাবে মাঠকর্মীরা অনেক সময় দায়িত্বে অবহেলা করেন এবং ভোক্তার কাছে ঠিকমতো পণ্য পৌঁছান না। এসব তথ্য বা মাঠকর্মীদের কাজের হাল অবস্থা সব সময় অফিসে বসে জানা সম্ভব নয়। এর সমাধান দেবে ‘ফিল্ডবাজ’।

মাঠকর্মীরা জিপিএসযুক্ত স্মার্টফোনে ফিল্ডবাজ অ্যাপস ব্যবহার করে তৃণমূল পর্যায়ে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দেন। তাঁদের কাজের পরিমাণ, সময় ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রতিষ্ঠানের অফিসে বসে কম্পিউটার বা ট্যাব-স্মার্টফোনে দেখা সম্ভব।

ফিল্ডবাজে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৪ জন। বর্তমানে হাবিব উল্লাহ বাহার প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, ফিল্ডবাজ তৈরি হয়েছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুর্বল মোবাইল নেটওয়ার্কের কথা মাথায় রেখে। নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা অবস্থায় কাজের তথ্যও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা আছে এতে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, হাইতি, ইথিওপিয়া ও কলম্বিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহার হচ্ছে অ্যাপটি। দেশে ক্রাউন সিমেন্ট, কেয়ার, ইউনিলিভার ও আগা খান ফাউন্ডেশন অ্যাপটি ব্যবহার করে।

সিডস্টারস ওয়ার্ল্ড ২০১৬-এ জয়ী হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগ) ফিল্ডবাজকে সিআইএফটিআইএস ট্রেড ফেয়ারে (পেইচিং, ২০১৬) প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনীত করে। ফিল্ডবাজ কানেক্টিং স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ (ঢাকা, ২০১৬) প্রতিযোগিতার অন্যতম বিজয়ী। সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ল্যাব একসেলারেটর প্রোগ্রামে (জার্মানি, ২০১৫) মনোনীত হয়।

প্রধান নির্বাহী হাবিব উল্লাহ বাহার জানান, গত বছরের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, কাজের ধরন ও পরিধির ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য ফিল্ডবাজসেবা দেওয়া হয়।

http://field.buzz থেকে ফিল্ডবাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

সুইজারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে তারা।

  • আরো তিন

kalerkantho-29-10-16-ns-11হ্যান্ডিমামা : মাঝরাতে বাইরে থেকে বাসায় এসে দেখলেন বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা। ওই সময় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সঙ্গে স্মার্টফোন থাকলে চিন্তা কম। ‘হ্যান্ডিমামা’ ব্যবহার করে পেতে পারেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির খোঁজ। ঘর ও আসবাব পরিষ্কার, ওয়্যারিং, টিভি, ফ্রিজ, এসি, ফ্যান ইত্যাদি ইলেকট্রনিকস পণ্য মেরামত এবং স্যানিটারি মিস্ত্রির খোঁজও আছে এতে। কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা শেষ করে হ্যান্ডিমামা ডটকো নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা শাহপরান। তিনি বলেন, হ্যান্ডিমামা ডটকোতে এখন প্রায় ৪০০ কর্মী আছেন, যাঁরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া চারজন ডেভেলপারসহ ৯ জনের একটি সার্বক্ষণিক দল কাজ করছে।

ক্লায়েন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারে পরান বলেন, ‘কোনো কাজের ফরমায়েশ এলে গ্রাহককে শুরুতেই কর্মীর নাম, ঠিকানা, আইডি কার্ড নম্বর পাঠিয়ে দিই। যাতে গ্রাহকরা নির্ভয়ে থাকেন। তবে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেবে হ্যান্ডিমামা—এ কথাও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, ভিন্ন ধরনের এ অনলাইন উদ্যোগ অল্প সময়েই বেশ সাড়া ফেলেছে। ফেনক্স বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের বিনিয়োগও পেয়েছেন তিনি।

হ্যান্ডিমামা এখন ঢাকার মোহাম্মাদপুর, ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা (ডিওএইচএস), মহাখালী (ডিওএইচএস) এবং উত্তরা এলাকায় সেবা দিচ্ছে।

http://handymama.co সাইট থেকে হ্যান্ডিমামার সেবাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ছাড়া সেবা নিতে সরাসরি কল করা যাবে ০১৯২৮২৯২৯২৯ নম্বরে।

সেলিস্কোপ : স্মার্টফোনের সাহায্যে আরো সহজে ব্যবসায় প্রসার ও পরিচালনা এবং সহযোগী সহায়ক অ্যাপ সেলিস্কোপ। অ্যাপটি তৈরি করেছে হিউম্যাক ল্যাব নামে দেশীয়  প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ১৪ মার্চ অ্যাপটি গুগল প্লেস্টোরে ছাড়া হয়। অ্যাপটির মাধ্যমে বিক্রয় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিক্রয় প্রতিনিধির অবস্থান শনাক্ত করা যায় ফোন থেকেই।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আবদুল মুকিত আহমেদ জানান, অ্যাপটি ব্যবসায়ের প্রশাসনিক, তদারকি এবং কর্মী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। এর মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক রিপোর্টিং এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এই অ্যাপের সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

মোবাইলে অতিরিক্ত খরচ কমানোর জাদুকরী অ্যাপ ম্যাডভাইজারের জন্য হিউম্যাক ল্যাব লিমিটেড গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সিডস্টারস ওয়ার্ল্ডের ঢাকা পর্বে জয়ী হয়। পুরস্কার হিসেবে ম্যাডভাইজারের উদ্যোক্তারা সুইজারল্যান্ড এবং সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পান।

আরএক্স ৭১ : অসুস্থতা বলে-কয়ে আসে না। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু রোগের ধরন দেখে অনেকেই বুঝতে পারে না কী ধরনের সমস্যা এবং কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। যদি কারো  চোখে ব্যথা থাকে, তাহলে মেডিসিনের ডাক্তারের কাছে না গিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ভুল ডাক্তারের কাছে গেলে বিপদ ও অর্থের অপচয়। এ সমস্যা দূর হবে স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। অসুস্থ রোগীরা সহজেই জানতে পারবেন তাঁদের কোন ধরনের ডাক্তার দেখাতে হবে। দেশে তৈরি তেমনি একটি অ্যাপ্লিকেশন আরএক্স ৭১ হেলথ।

এই অ্যাপে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ৯৭৯টি রোগ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত ডাটাবেইস নিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্যজ্ঞান মডিউল। প্রতিটি রোগের বর্ণনা, লক্ষণ, কারণ, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়, সাধারণ জিজ্ঞাসা, হেলথ টিপস রয়েছে এই অ্যাপে।

সাড়ে সাত হাজারের বেশি ডাক্তারের ছবি, ডিগ্রি এবং ভিজিটিং কার্ডের স্ক্যান কপি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অ্যাপটির ‘ডাক্তার ডিরেক্টরি’ বিভাগ। এখান থেকে চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাবে সহজে। ডাক্তারদের রেটিং করার মাধ্যমে খুব সহজেই সবচেয়ে ভালো ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাবে এই বিভাগ থেকে। ৭০০টিরও বেশি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে ‘হসপিটাল ডিরেক্টরি’ বিভাগে।

আরএক্স ৭১ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন বলেন, অ্যাপটির মাধ্যমে শিগিগরই চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা সাক্ষাৎকারের সেবা চালু করা হবে। এ ছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোকে অটোমেশনের জন্য হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিন শতাধিক দেশি খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগটি এবং বিনা মূল্যে নিজের ডায়েট প্ল্যান নিজেই তৈরি করা যাবে এ সেবার মাধ্যমে। ডায়েট প্ল্যান সিস্টেমটি একটি ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম।

মানুষের কাছে সহজে তথ্য পৌঁছে দিতে ব্যবহারবান্ধব ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় রাখার কাজটিও করছে আরএক্স ৭১।

অ্যাপটি ডাউনলোডের লিংক https://goo.gl/2w9glc 

সূত্র : কালের কণ্ঠ   favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment