কোয়েল পুষে অভাব দূর

কোয়েল পুষে অভাব দূর

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কামাল হোসেন (৪৫)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অভাব যাঁর নিত্যসঙ্গী। এদিক-ওদিক খুঁটে যা আয় হয় তা দিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার হয় না। বেকারজীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন তিনি। শুরু করেন কোয়েল পাখি পালন। এক-দুই করে কোয়েল পাখি ডিম দেয়, তা দিয়ে বাচ্চা হয়, ভরে ওঠে খাঁচা। বদলায় কামালের দুঃখের দিনের গল্প।

গত মাত্র চার মাস থেকে কোয়েল পালন শুরু করেন কামাল। এখন কোয়েলের ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন। ইতিমধ্যে তাঁর সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই কোয়েল পালন করে সংসারের অভাব দূর করছে।

দীঘিনালার কবাখালী বাজারের কাছে ‘কামাল কোয়েল হ্যাচারি’। সেখানে বর্তমানে এক হাজার ৩০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ডিম দিচ্ছে। প্রতিটি ডিম পাইকারি চার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাত্র চার মাস আগে আমি কোয়েল পালন শুরু করি। ময়মনসিংহের জারিয়া এলাকায় একটি কোয়েলের খামারে গিয়ে ১০ দিন থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করি। পরে সাভার এলাকায় আরেকটি খামারেও ১০ দিন প্রশিক্ষণ নিই। এরপর ৭০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে খামারের ঘর নির্মাণ করে ৬০০ বাচ্চা এনে শুরু করি কোয়েল পালন। ’

কামাল হোসেন বলেন, ‘সংসারজীবনের দীর্ঘ সময়েও অভাব ঘোচেনি। সর্বশেষ ভরসা থেকে কোয়েলের খামার করি। কোয়েল পালনের পর থেকে এখন অনেক সুখেই কাটছে সংসারজীবন। আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে আর ছোট মেয়ে স্কুলে। এখন সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে সংসার চালাতে পারছি। ’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একটি কোয়েলের ওজন হয় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। দুই মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। পর্যাপ্ত খাদ্য পেলে একটানা ১৮ মাস ডিম দেয়। কোনো ত্রুটি হলেও কমপক্ষে এক বছর একটানা ডিম দিতে পারে।

কামালের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত দীঘিনালার জাহিদ হোসেন জানান, তিনি তিন মাস আগে কামালের কাছ থেকে ১২টি কোয়েল পাখি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেগুলো ডিম দেওয়া শুরু করলে লাভজনক দেখে পরে ঢাকা থেকে কয়েক দফা চার-পাঁচ শ করে বাচ্চা এনেছেন।

মারিশ্যা এলাকার রিমন মিয়া জানান, প্রথম অবস্থায় ধারণা নেওয়ার জন্য তিনি দুই মাস আগে কামালের কাছ থেকে ২০০ কোয়েল নিয়ে খামার শুরু করেন। এগুলো ডিম দেওয়া শুরু করলে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে চয়-সাত হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

তারাবুনিয়া এলাকার রাজিত চাকমা জানান, তিন সপ্তাহ আগে তিনি ১৪০টি কোয়েল নিয়ে খামার শুরু করেন। এর মধ্যে ১০টি পুরুষ কোয়েল। বাকিগুলোর মধ্য থেকে কিছু কোয়েল আনার আট দিন পর থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করেছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জওহরলাল চাকমা বলেন, ‘কোয়েল পাখির ডিম খেয়েও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। কোয়েল পালন অনেক লাভজনক। মাত্র কয়েক মাসে কামাল কোয়েল পালন করে সাফল্য অর্জন করেছেন। আগ্রহীদের আমরা টেকনিক্যালি সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment