নতুন প্রজন্মের নতুন উদ্যোগ

নতুন প্রজন্মের নতুন উদ্যোগ

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

মিনহাজ চৌধুরী

সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ড্রিঙ্কওয়েল

‘ড্রিঙ্কওয়েল’ মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পানি সমস্যা নিয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করা যুগান্তকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ চৌধুরী এর আগে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক এবং জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব সম্পর্কিত ৫ বছরব্যাপী একটি প্রজেক্ট সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা বিষয়ে তার বিস্তর গবেষণা ইউনিসেফ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, ইউএস অ্যাম্বাসেডর অব বাংলাদেশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়, যা ড্রিঙ্কওয়েলের সাফল্যের মুকুটে নতুন একটি পালক সংযোজন করে। মিনহাজ চৌধুরী ‘এক্সটার’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে রাজ্য ভিত্তিক স্বাস্থ্য বীমা প্রজেক্টে পরামর্শদাতা এবং আরও একটি বৃহত্ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মানোন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে তার অসাধারণ অবদানের জন্য ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, এসএক্সএসডব্লিউসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সৃজনশীল উদ্যোগগুলোর জন্য বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৫ সালের অনূর্ধ্ব-৩০ বছর বয়সী সেরা ৩০ জন তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় তিনি স্থান পান।

০০০

মো. আতিকুর রহমান সরকার

সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লি.

পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। পেশাকেই নেশা হিসেবে নেওয়ার মানুষ তিনি। একটি ভালো ইলেক্ট্রনিক ব্র্যান্ড তৈরির উদ্দেশ্যে আতিকুর রহমান সরকার ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু করেছিলেন। সেখানেই থেমে থাকেননি। তার প্রতিষ্ঠান এখন সৌরশক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং ক্লিক কুকিং নিয়ে কাজ করছে। আর সবার মতো শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ শুরু করেননি আতিকুর। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করাও তার কাজের একটি লক্ষ্য ছিল। তার প্রতিষ্ঠানে ৪৮ জন কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছে সোলার কন্ট্রোলার এবং সোলারের ইপিসি হিসেবে কাজ করে এমন ইনভার্টার। তাদের তৈরি মুস্পানা সবুজ চুলা এবং কিল কুকিং স্টোভ জিএসিসিইউএন ফাউন্ডেশনের স্পার্ক ফান্ড পেয়েছে।

০০০

আরিফ মো. ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া

সহ-প্রতিষ্ঠাতা, লাইট অব হোপ

২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর করার সময় জার্মানিতে ‘লাইট অব হোপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আরিফ মো. ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া, যা পরবর্তীতে ডেল এডুকেশন চ্যালেঞ্জে রানারআপ হয়। ২০১৫ সালে তিনি ব্র্যাক থেকে অব্যাহতি নিয়ে সম্পূর্ণভাবে লাইট অব হোপে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন পর্যায়ের উন্নয়ন খাতে কাজ করার ৬ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এরমধ্যে আছে শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পানি ও স্যানিটেশন। তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইইই থেকে। লাইট অব হোপ কাজ করছে শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনাকে আরও আকর্ষণীয় ও মজাদার করে তুলতে। আনন্দমূলক শিক্ষা পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা শিক্ষার বিষয়বস্তু তৈরির পাশাপাশি শিশু ও অভিভাবকদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এছাড়া কম খরচে সৌরশক্তি চালিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করেছেন তারা।

০০০

হাবিব উল্লাহ বাহার

সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ফিল্ডবাজ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইটি প্রকৌশলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা হয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির জন্য ছুটোছুটি করে অথবা নামমাত্র বেতনে ফ্রিল্যান্সিং করে। সেদিক থেকে হাবিব উল্লাহ বাহারের জীবনের গল্প একেবারেই ভিন্ন। বুয়েট থেকে সিএসইতে পড়াশোনা শেষ করে শুরুতে সিম্ফনিসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। তবে ২০১১ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সিক্স ডিগ্রি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘এনিগমা’ নামে একটি ট্যাব বাজারজাত করেন, যদিও এতে তেমন একটা লাভ করতে পারেননি। তবে তার স্বপ্ন ছিল একটি বিলিয়ন ডলার ব্র্যান্ড দাঁড় করানো, যার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তিনি পাচ্ছিলেন না। এরমধ্যে হঠাৎ করে পরিচিত হন জার্মান নাগরিক এলেক্স রবিনসনের সঙ্গে। ২০১৪ সালে তার সঙ্গে মিলে শুরু করেন ‘ফিল্ডবাজ’-এর কাজ। প্রথমে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করার জন্য ইউরোপে ফিল্ডবাজের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। পরে যদিও এর প্রধান কার্যালয় এদেশে স্থাপন করেন। আর ততদিনে বাজারে মোটামুটি একটা অবস্থানে পৌঁছে যান তারা। বর্তমানে ফিল্ডবাজের বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ডলার এবং তিনি ২০১৯-২০এর মধ্যেই একে ১০০ কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে চান। ফিল্ডবাজ মূলত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য মূল প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করে, যাতে করে মাঠপর্যায়ের বিপণনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নির্ভুলভাবে তারা পেয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কলম্বিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ফিল্ডবাজ ব্যবহার করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা করা যায়, হাবিব উল্লাহ বাহার ও এলেক্স রবিনসনের হাত ধরে কয়েক বছরের মধ্যেই ফিল্ডবাজ এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আইটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

০০০

শামস জাবের

কো-ফাউন্ডার, টেক স্কুল

বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে কজন রোল মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, টেক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শামস জাবের তাদের অন্যতম। মূলত শিশুদেরকে টেকনোলোজি ভিত্তিক শিক্ষা, বিশেষ করে রোবটিক্স শিক্ষা প্রদান করে থাকে টেক স্কুল (টিটিএস)। এরমধ্যেই সারা দেশের শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের কাছে টেক স্কুল দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শামস জাবের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সম্পন্ন না করেই টেক স্কুল প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করে দেন। শামস চাইছিলেন বাস্তব প্রকৌশল জ্ঞান ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মকে নতুন কিছু করতে উত্সাহিত করতে। তারই ধারাবাহিকতায় টেক স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরুতে ঢাকার নতুন বাজারে একটি কারিগরি স্কুল ও বান্দরবানে একটি টেক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। টেক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তাদের জ্ঞানকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তিনি। তার কাজের পুরস্কার স্বরূপ এরইমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ শেষ করে তখন থেকেই শামস ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, স্বপ্ন দেখছেন টেক স্কুলের অগ্রযাত্রাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকেও বহু দূরে নিয়ে যাওয়ার।

০০০

হুসেইন মো. ইলিয়াস

সহ-প্রতিষ্ঠাতা, পাঠাও

২৭ বছর বয়সী ইলিয়াস ও তার বন্ধু সিফাত্ আদনান ৩ জন ডেলিভারি এজেন্ট নিয়ে ২০১৫ সালের মাঝে ‘পাঠাও’ শুরু করেন। বিন্দু বিন্দু বালুকণা থেকে বিশাল সিন্ধু গড়ে তোলার কাজটি বেশ ভালোভাবেই করেছেন তারা, এক বছরের মধ্যে তাদের ডেলিভারি টিম ৩ জন থেকে ৬০ জনে পরিণত হয়। এর পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীতে ৫টি শাখা খুলেন তারা। এখন ‘পাঠাও’ দিনে ৫০০টি ডেলিভারি করে এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় ডেলিভারি সেবার জন্য পাঠাও রাইড নামক ২০০টি মোটরযান রয়েছে তাদের। ভবিষ্যতে পুরো বাংলাদেশজুড়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করার চিন্তাভাবনা করছেন তারা। ইলিয়াস স্বপ্ন দেখেন, এই কোম্পানি নিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাবেন।

০০০

আদনান ইমতিয়াজ হালিম

সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, সেবাডটএক্সওয়াইজেড

৩২ বছর বয়স্ক আদনান ইমতিয়াজ হালিম ‘সেবাডটএক্সওয়াইজেড’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। সেবাডটএক্সওয়াইজেড মূলত ক্লিনিং থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে যে ধরনের সার্ভিসের প্রয়োজন তার সব কিছুই সরবরাহ করে থাকে।  আদনান পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ারিং সমাজের চোখে খুব উঁচু দরের পেশা হলেও তাতে মন টেকেনি তার। ভালো বেতনের কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে আদনান শুরু করেন সেবা। প্রথমের কিছুটা কষ্ট হলেও বর্তমানে সেবার কর্মচারীর সংখ্যা ৪০-এর উপরে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে, তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সেবা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। অনেক অল্প বয়সেই সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছেন আদনান। এই সেবা বাংলাদেশের সকল প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তার।

০০০

খোবাইব চৌধুরী

প্রতিষ্ঠাতা, স্টাইলাইন কালেকশন

মডেস্ট লাইফস্টাইলের এক অন্যতম প্লাটফর্মের নাম স্টাইলাইন কালেকশন লিমিটেড; যার পথচলা শুরু হয় খোবাইব চৌধুরীর হাত ধরে। ২০১৫ সালে শুরু হয় এর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সময়ের হিসেবে সাফল্যকে মাপা যায় না, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো স্টাইলাইন কালেকশন। সাফল্যের সূচক এতটাই উঁচুতে ওঠে যে, এটি ২০১৬ সালের অগাস্টে বাংলাদেশ থেকে প্রথম স্টার্টআপ হিসেবে অংশগ্রহণ করে মালয়েশিয়ার এমএজিআইসি এক্সেলেটর প্রোগ্রামে। এই প্রোগ্রামটি এই উপমহাদেশ তো বটেই, এমনকি সারাবিশ্বের সবার কাছে বেশ সমাদৃত এবং একে এশিয়ার মধ্যে আমেরিকার ওয়াই-কম্বিনেটরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। খোবাইব চৌধুরী বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সম্পন্ন করে প্রথমে কাজ করেন স্যামসাং বাংলাদেশের সঙ্গে। এরপর দুটি উদ্যোগ নেন—টেক ফিয়েস্তা এবং অনালাইন কেনাকাটা। প্রথমটি ছিল একটি আউটসোর্সিং আইটি ফার্ম এবং দ্বিতীয়টি ছিল ই-কমার্স মার্কেট। এই অনলাইন কেনাকাটাই পড়ে পরিণত হয় স্টাইলাইন কালেকশনের মতো বিশাল কোম্পানিতে।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment