বাজারে এলো উদ্যোক্তা-সহায়ক বই ‘এ জার্নি টুয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. সবুর খান রচিত নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা সম্বলিত ‘এ জার্নি টুয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠান আজ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলাপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান। সভাপতিত্ব করেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব উল হক মজুমদার, ট্রেজারার হামিদুল হক খান, স্টুডেন্ট এফেয়ার্স এর পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এ দেশে লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা তৈরি হবে। আর এই কঠিন সত্য সবুর খান উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ খুলেছেন, বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বই লিখেছেন।
তিনি আরো বলেন, যারা নিয়মিত লেখেন না তারা এমন কিছু লেখেন যা বড় ধরনের পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। এই বইটি তরুণ উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সাহায্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটা কাজ অন্যভাবেও করা যায়-এই চিন্তা যদি তোমার মাথায় আসে তাহলে তুমি নিশ্চিত থাকো যে তুমি একজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুতই উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে বলে যে ভবিষ্যৎবাণী করা হচ্ছে তা মূলত এদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের ওপর ভিত্তি করেই করা হচ্ছে। কারণ আগের চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ অনেক সহজ হয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া সহজ হয়েছে। এখন উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, উচ্চশিক্ষার সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনা। এমনভাবে সিলেবাস প্রণয়ন করা উচিত যাতে আমাদের শিক্ষিত তরুণরা ছাত্রবয়সেই ভাষার ওপর দক্ষ হয়ে ওঠে, যোগাযোগের ওপর দক্ষ হয়ে ওঠে এবং ব্যবস্থাপনার ওপর দক্ষ হয়ে ওঠে।
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জামান আহমাদ বলেন, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি না হলে দেশ কখনোই উন্নত হবে না। আমাদের তাই শিল্পের দিকে যেতে হবে। আর শিল্পের দিকে যেতে হলে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা দরকার। কিন্তু কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় সে ব্যাপারে সঠিক কোনো দিক নির্দশনা আমরা খুব একটা পাইনা। আশা করি এখন থেকে আমরা সেই দিকনির্দেশনা পাব সবুর খানের এই বই থেকে।
তিনি আরো বলেন, সুষম উন্নয়নের জন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষকেই উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উচ্চশ্রেণি, মধ্যবিত্ত শ্রেণি, তরুণ প্রজন্ম, তৃণমূল পর্যায়-সব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। তা না হলে উন্নয়র টেকসই হবে না এবং সুষম হবে না।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বই এর প্রকাশক এবং লেখক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাষ্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান ও মো. সবুর খান বলেন, বই লিখব, এটা কখনোই ভাবিনি। তবে যখন আমি ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ছিলাম তখন ২০০০ উদ্যোক্তা তৈরির একটি প্রকল্প হাতে নেই। সেই সময়েই বই লেখার অনুপ্রেরণা পাই। এখন ভালো লাগছে, বইটি ‘উদ্যোক্তা’ বিষয়ে নিয়ে লিখতে পেরেছি বলে। বইয়ে যা কিছু লিখেছি সবই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। বইটি পড়ে যদি একজন তরুণও উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পায় তাহলে শ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
বইটি ইংরেজিতে লেখার কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প, বাংলাদেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার অদম্য স্পৃহার গল্প আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চেয়েছি। তাই ইংরেজি ভাষাকে বেছে নিয়েছি। কারণ ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। এই বইয়ের বাংলা সংস্করণও খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশে বেশি বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে মো. সবুর খান বলেন, আমাদের দেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন। কিন্তু তারা বিনিয়োগ করার সময় আমাদের দেশের পরিবেশ নিয়ে ভাবেন না, আর্থসামাজিক ক্ষতির কথা ভাবেন না। ফলে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হলেও একদিকে ক্ষতিও হচ্ছে ভীষণ। আমরা যদি নিজেদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারি তবে তারা এদেশের মাটি ও মানুষকে বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ নেবেন। তাই বেশি বেশি করে দেশীয় উদ্যোক্তা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।
১৪৮ পৃষ্ঠার বইটিতে নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা কোম্পানি গঠনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে সহযোগিতা করবে। বইটিতে অত্যন্ত সহজ ভাষায়-দক্ষতা অর্জন, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, ক্রেতাকে সন্তুষ্ট রাখার কৌশল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, লোন প্রাপ্তি, প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরীর বিভিন্ন দিকসহ ব্যবসার খুটিনাটি ধারাবাহিকভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে এবং সহায়ক লিংক সমূহ দেয়া আছে যা উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক যে কাউকে পরিষ্কার দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।