যেভাবে বদলে গেল ফেনীর তরুণদের জীবন
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ফেনীর ফুলগাজীর খোন্দকার লোকমান হোসেন। কয়েক বছর আগে ৪ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে খালি হাতেই দেশে ফেরত আসতে হয়েছে তাকে। একদিকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ অন্যদিকে মাথার ওপর ঋণের বোঝা। চক্ষু লজ্জার ভয়ে এলাকায় বেগার খাটাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বন্ধুদের পরামর্শে একটি অস্ট্রেলিয়ান দুধেল গাভী দিয়ে শুরু করেন দুধের ব্যবসা। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার গাভী আছে ১৫টি। এসব গাভীর দুধ বিক্রি করে পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। শুধু খোন্দকার লোকমান হোসেনই নন, তার মতো ফেনী, ফুলগাজী ও আশপাশের এলাকার অনেক তরুণ পেশা বদল করে ডেইরি ব্যবসায় ঝুঁকছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুধ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় লোকমানের পাশাপাশি ফুলগাজীতে তরঙ্গ ডেইরি ফার্ম, আমানত ডেইরি ফার্ম, ফ্লোরা ডেইরি ফার্ম, আল্লাহর দান ডেইরি ফার্মসহ বেশকিছু ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠেছে। এসব ফার্ম বদলে দিয়েছে ওই এলাকার বেকার যুবকদের ভাগ্য। এখান থেকে উত্পাদিত দুধ যাচ্ছে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ফুলগাজী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কামাল্লা গ্রামের দেশ ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মটিতে ৫৬টি গরু রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন উত্পাদন হয় প্রায় ২০০ লিটার দুধ। এসব দুধ উপজেলা শহরসহ ফেনীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এ থেকে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
ফ্লোরা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী লোকমান হোসেন জানান, বর্তমানে তার ৭০ ফুটের শেডে ১৫টি গাভী রয়েছে। এসব গাভীর দুধ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। দুধ বিক্রি করে মাত্র চার বছরেই লোকমানের পরিবারে এসেছে অর্থিক নিরাপত্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করার পর চাকরির পেছনে না ছুটে গ্রামের এক খণ্ড জমির ওপর তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ডেইরি খামার। শুরুতে দুটি বাছুর ও একটি শেডের ঘরসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জম বাবদ ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ দিয়ে শুরু হয় খামারটির পথ চলা। শরীফ, সুমন ও মুকুল নামে ওই তিন বন্ধুর গড়ে তোলা খামার বর্তমানে ফেনীর আদর্শ ডেইরি খামারে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে এ খামারে অন্তত কোটি টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। এছাড়াও খামারে এখন মাছ চাষ, পশুর প্রয়োজনীয় খাবার তৈরিসহ নানা কার্যক্রম চলছে।
খামারি সাইফুদ্দিন আহমেদ মুকুল জানান, তিনি ও শরীফ হিসাববিজ্ঞান, অন্য বন্ধু সুমন তিতুমীর কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স শেষ করেন। ইচ্ছা করলে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করে উদ্যোক্তা হওয়াটাকেই স্বাচ্ছন্দ্যের মনে করেছেন। নিজেদের মনোবল, ঐকান্তিক চেষ্টা আর সততাই তিন বন্ধুকে এমন সফলতা এনে দিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খোন্দকার লোকমান বলেন, কয়েক বছর ধরে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও খামারটিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায়নি। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ঋণ দেয়ার বিষয়টি বললেও তা কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। তিনি তার খামারসহ আশপাশের খামারগুলোয় দ্রুত বিদ্যুত্ সংযোগ স্থাপন ও কম সার্ভিস চার্জে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
প্রাণী রোগ ও খামার ব্যবস্থাপনার ওপর উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তাদের দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে যুবকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন আল্লাহর দান ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আলাউদ্দিন।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু আল মানসুর জানান, এ তিন যুবক বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্যও আদর্শ হতে পারে। তারা তাদের কৃষি খামারে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসার উন্নতি করছে। শিক্ষিত যুবকরা কৃষি খাতে এলে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এ খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারবেন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।