আঁখির স্পাইসি চিটাগাং
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর ছোট একটি স্বপ্ন দেখেন তিনি—নিজে কিছু করার। আর সেই স্বপ্ন থেকেই তার একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। বর্তমানে অনলাইন ক্যাটারিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে ঢাকায় জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠছে তার উদ্যোগে তৈরি ‘স্পাইসি চিটাগাং’।
ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা দেখে বড় হয়েছেন আঁখি। তার বাবা এবং শ্বশুর দুজনই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর আমি যখন ইচ্ছে করেই চাকরির প্রতি আগ্রহী হচ্ছিলাম না, তখন আমার স্বামী জিজ্ঞাসা করল, কী করতে চাও? এ সময় ভালো ও নতুন কিছু রান্না করা আমার নেশায় পরিণত হয়েছিল। তাই ভাবলাম যে, কাজটা প্রতিদিন করি, সেটা পেশা হিসেবে নিলে কেমন হয়? ব্যস, এই চিন্তা মাথায় আসার কিছুদিন পরেই ফেসবুকে পেজ ওপেন করলাম, বন্ধুদের ডাকলাম আমাকে সাহায্যের জন্য। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে প্রথম কাজের অর্ডার পেলাম। সেখান থেকে যে সাড়া আমি পেয়েছি, তারপর আর আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়নি কোনোদিন। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, আমার ক্লায়েন্টরাই আমাকে নতুন ক্লায়েন্ট জোগাড় করে দেয়।’
ক্যাটারিং সার্ভিসের কাজ শিক্ষিতদের জন্য না, অথবা এটা মেয়েদের কাজ না বলে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে একবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি আঁখি। নিজের কাজের প্রতি দৃঢ়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নিয়েছি। বিষয়টাকে অনেকে যেভাবে ভাবছে, আমি তার চাইতে আলাদা করে ভাবার চেষ্টা করেছি। আমার কোনো কাজই ছোট মনে হয় না। বিশেষত খাবার তৈরির কাজ।’
প্রতিটি উদ্যোগের সঙ্গে থাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। আঁখির কাজের ক্ষেত্রে তা ছিল বিশ্বস্ততা অর্জন। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে শুধু বিশ্বাস করে খাবার অর্ডার দেওয়া হয়, এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ নতুন পদ্ধতি। সবার কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলা এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এখনো খাবারের মান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজার ও রান্না সরাসরি আমি নিজ হাতে করি। আমার স্বামীও আমাকে সাহায্য করে।’ স্বামীর প্রসঙ্গে আঁখি বলেন, ‘আমার স্বামী আমার পাওয়ার ব্যাংক। সে ছাড়া এমন উদ্যোগ নেওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। শুধু প্রেরণা নয়, মাঝেমধ্যে বাজারে সে আমাকে সাহায্য করে।’
এই কাজের থেকে একটি চাকরিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল আঁখির পরিবার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে আঁখি হাঁটেন ভিন্ন পথে। এতে তার বাবা শুরুতে কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও পরবর্তীতে মেয়ের সফলতায় খুবই খুশি হন। আঁখি বলেন, ‘তাদের ইচ্ছা ছিল মেয়ে যেন সফল হয়। তাদের সেই ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করছি। তবে সেটা একটু ভিন্ন উপায়ে।’
ক্যাটারিং সার্ভিস নিয়ে ভবিষ্যতে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন আঁখি। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চাই নিজের একটা বড় ক্যাটারিং সার্ভিস থাকবে। এই দেশে প্রথম নারী মালিকানাধীন এবং নারী পরিচালিত ক্যাটারিং সার্ভিস। আমি চাই, আমার এই কাজটা অন্য মেয়েরা দেখুক। তারাও এমন কাজে এগিয়ে আসুক। আত্মসম্মান বোধ নিয়ে যেকোনো কাজের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু থাকবে না। তারা চাইলে সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারে।’