৬টি উদ্যোগ

৬টি উদ্যোগ

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

দেশের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রামীণফোন ও এসডি এশিয়ার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘জিপি এক্সেলারেটর’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা ভিত্তিক নতুন আইডিয়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাথমিকভাবে ৬০০টি দল নিবন্ধন করে। চার মাসব্যাপী নানা ধাপে বিচারকার্য শেষে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ছয়টি আইডিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী প্রকল্পগুলো নিয়ে এই প্রতিবেদন।


গ্রামীণফোন এবং এসডি এশিয়া যৌথভাবে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করে ‘জিপি এক্সেলারেটর’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী স্টার্টআপগুলো হচ্ছে ক্রাউডওয়্যার, জলপাই ইলেক্ট্রনিক্স, ডক্টরকই ডটকম, ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি, মাইক্রোটেক এবং বাড়িকই। বিজয়ী স্টার্টআপগুলো পাচ্ছে পাচ্ছে ১২ লাখ টাকার সিড ফান্ডিং। এ ছাড়া জিপি হাউসে অফিস স্পেস ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এ সময়ের মধ্যে গ্রামীণফোন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে স্টার্টআপগুলো।

ক্রাউডওয়্যার
বর্তমানে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্লাউড সিস্টেম। যে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক উন্নয়নের পেছনে ক্লাউড রিসোর্স বাড়ানো এবং সমৃদ্ধ থাকা জরুরি। এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবাকে সঠিকভাবে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এটি সহজ এবং নির্ভুলভাবে করতেই কাজ করছে ক্রাউডওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাজিন মুস্তাফিজ বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্রাউডওয়্যার প্রথম পর্যায়ে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। উদ্যোমী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ এখানে কাজ করতে পারবেন। ভবিষ্যতে এর ব্যাপ্তি আরও বৃদ্ধি করতে কাজ করছি। একসময় ঘরে বসে যে কেউ অ্যাপসের মাধ্যমে কাজগুলো সম্পূর্ণ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তাই বেকার সমস্যা মোকাবেলায়ও আমরা ভূমিকা রাখতে পারব। তিনি বলেন, আমরা তুলনামূলকভাবে আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভুল সমাধানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করছে। তাদের ক্লাউড সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকরা বিভিন্ন কাজ পোস্ট করতে পারবে, যা পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছোট কাজে বিভক্ত হয়ে যাবে ও যোগ্য কনট্রিবিউটরদের কাছে পেঁৗছে যাবে। কনট্রিবিউটররা এসব কাজ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সমাধান করবে। তারপর তারা মোবাইল মানি বা এয়ারটাইমের মাধ্যমে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবে। ক্রাউডওয়্যার পরে সব ছোট কাজ একত্র করে গ্রাহকের কাছে পেঁৗছে দেবে।

জলপাই ইলেকট্রনিক্স
প্রযুক্তির নানা ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। তবে সে সঙ্গে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। প্রায়ই ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করছে নানা প্রযুক্তি পণ্য। ঠিক এমনই এক প্রযুক্তি সেবা নিয়ে এসেছে জলপাই ইলেকট্রনিক্স। সম্প্রতি জিপি এক্সেলারেটরের প্রোগ্রামে জায়গা করে নিয়েছে এ সেবা পণ্যটি। এটি হচ্ছে সি্নফার। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রেজাউল কবির বলেন, গত বছর উত্তরার একটি বাসায় গ্যাস নিঃসরণ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন বিষয়টি সমাধানে আমরা সচেষ্ট হই। পরে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করি, যা এ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারবে এবং খুব অল্প সময়ে বেশ সাড়া ফেলে। আমাদের ঘরোয়া বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এটি। সি্নফার একটি গ্যাস লিক চিহ্নিত করার অ্যালার্ম, যা নির্ধারিত গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই সংকেত প্রদান করে। সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন রান্নাঘরে গ্যাস লিক করার কারণে গড়ে ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা রোধে সি্নফার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। জলপাই ইলেকট্রনিক্স আইওটি ও স্মার্ট হোম ইলেকট্রনিক পণ্যকে দ্রুত পরীক্ষামূলক পর্যায়ে নিয়ে এসে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড তৈরিতে সহায়তা করবে।

ডক্টরকই ডটকম
ডক্টরকই ডটকম স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোগী এবং চিকিৎসকদের যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। এই স্টার্টআপটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে_ চিকিৎসকরা যেন সহজেই রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। রোগীরাও যেন সহজেই চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। চিকিৎসকরা সহজেই রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করতে, কল করতে, টেক্সট পাঠাতে এবং তাদের অবহিত করতে পারবেন। ডক্টরকই ডটকমের উদ্যোক্তাররা জানান, এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে চিকিৎসক রোগীর রোগ, উপসর্গ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন। টেবিল আকারে তালিকার মতো করে একটি নির্দিষ্ট প্রোফাইলে সব তথ্য সাজানো থাকবে। এখানে ডাক্তার খোঁজা থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন তথ্য, ফোন নম্বর এবং দেখা করার সময় অনলাইনে বুকিং দেওয়া যাবে। অনলাইনে ডাক্তাররাও এ ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আরও বেশি অবগত হতে পারবেন।

ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি
ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সহজে সবার কাছে পেঁৗছে দিতে কাজ করছে ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক কী ধরনের সুবিধা দিচ্ছে, তার পরিপূর্ণ তথ্য একসঙ্গে থাকছে সাইটটিতে। যেখানে আপনি খুব সহজে তুলনা করতে পারবেন কোন ব্যাংক আপনার জন্য ভালো সুবিধা দেবে। এ ছাড়া থাকছে বাড়তি বেশ কিছু সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির সিআইও এমএএম তৌফিক বলেন, আমাদের এই কার্যক্রম ব্যাংক থেকে লোন বা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে। এ ছাড়া কোন ব্যাংক তার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দেবে, তাও সহজে জানতে পারবে। ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি একটি ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চলতি মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরে যাচাই করার চেয়ে এখানে সুবিধাজনক ব্যাংকের তথ্য পেয়ে যাবেন। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন রাখাই এ স্টার্টআপটির মূল উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ও ব্যাংক সম্পর্কে যাচাই করার প্ল্যাটফর্মটি অনেক সহজেই ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারকারীদের জন্য সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা সেবাদান করবে ‘ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি’। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যুক্ত হবে ইন্স্যুরেন্স সেবা এবং কৃষি ঋণ।

মাইক্রোটেক
বইয়ের ওপর মোবাইল ফোন ধরলেই জীবন্ত হয়ে যাবে বইয়ে থাকা পাখি, ঘোড়া বা সাপ। ‘নীলিমার বায়োস্কোপ’ শিশুদের বাংলা বর্ণমালা শেখার এমনই একটি অগমেন্টেড রিয়ালিটি অ্যাপ্লিকেশন। এটি তৈরি করেছে মাইক্রোটেক। সম্প্রতি জিপি এক্সেলারেটরে উঠে এসেছে তাদের এ প্রোজেক্টটি। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসনুন কিবরিয়া বলেন, এটি আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে সহজ করবে। বর্তমান সময়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিশুই মোবাইল ফোন বা ট্যাবের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। তাই এ অ্যাপ বা বই যুক্ত করলে খেলার মাধ্যমেই খুব সহজেই পাড়ানো যাবে। সার্ভিসটি নিতে চাইলে দুটি মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। একটি অ্যাপ, অন্যটি বই। গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। ভবিষ্যতে এটিকে আরও সহজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া মাইক্রোটেক মুদ্রিত বর্ণমালা শিক্ষা বইয়ের অ্যাপ্লিকেশনটির ‘বায়োস্কোপ’ মেন্যু দিয়ে স্ক্যান করলেই ত্রিমাত্রিক সব ছবি ফুটে উঠবে। বাংলা অক্ষরের সঠিক উচ্চারণের পাশাপাশি স্পর্শ করলে অক্ষরের সঙ্গে লেখা ছন্দও শোনা যায়। রয়েছে শিশুদের জন্য বর্ণমালা লেখা শেখার অনুশীলনী, যা গেমের মতোই শিশুদের লেখা শিখতে সাহায্য করবে। ইতিমধ্যে গুগল প্লেস্টোর ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ্লিকেশনটির জন্য একটি বইও প্রকাশ করেছে তারা।

বাড়িকই
আমাদের সবারই একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা রয়েছে। বাড়ির ঠিকানা, অফিস ঠিকানা আরও নানা ধরনের ঠিকানা। তবে সমস্যা হচ্ছে এই ঠিকানা ধরে আপনাকে খুঁজে বের করতে চাইলেও কম বেগ পেতে হয় না। বাড়ির নম্বর ঠিক আছে তো, রাস্তার নম্বর ঠিক নেই। এমন সমস্যায় পড়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এ সমস্যা থেকে রেহাই দিতে কাজ করছে বাড়িকই। তারা পুরো ঠিকানাটি শুধু একটি কোর্ডের মধ্যে নিয়ে আসবে। ফলে যে কাউকে যেমন আপনার ঠিকানা বলতে সহজ হবে। অন্যদিকে ঠিকানা খুঁজে পেতেও সহজ হবে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও আল-আমিন সরকার বলেন, আমাদের দেশে ই-কমার্স খাত এগিয়ে যাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে আমরাও ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা নিয়ে থাকি। কিন্তু এখাতে সমস্যা হয় ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে। দেখা যায়, ঠিকানা ধরে বাড়ি খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার গুগল ম্যাপে অনেক গলির ঠিকানা থাকে না। তাই ঠিকানাগুলোকে একটি কোর্ডে নিয়ে এলে তা সবার জন্য সহজ হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা বা অঞ্চলের ঠিকানা ডিজিটালকরণের লক্ষ্যে ‘বাড়িকই’ নামক দলটিকে নির্বাচিত করেছে জিপি এক্সেলারেটর। ঠিকানা খোঁজার জটিল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই ‘বাড়িকই’ পল্গ্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সহজেই কোনো ঠিকানা খুঁজে বের করতে লম্বা ঠিকানাকে জিও-কোঅর্ডিনেট সুবিধা সংবলিত শর্ট-কোডে রূপান্তর করে পল্গ্যাটফর্মটি। এ ছাড়া এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্ভুল ঠিকানা খুঁজে বের করার মাধ্যমে নিজেদের কর্মদক্ষতার বৃদ্ধি ঘটাতে পারবে। যেহেতু এটি জনসাধারণের সুবিধায় ব্যবহৃত হবে। তাই জিপিএ দলটিকে আরও নিখুঁত ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করার সুযোগ করে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে অ্যাপটি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তাদের ব্যবসার সফলতা বয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment