১৭ বছর বয়সেই ১১ কোম্পানির মালিক

১৭ বছর বয়সেই ১১ কোম্পানির মালিক

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

তখনো তিনি হাই স্কুলের গণ্ডি পার হননি, অথচ এর মধেই ১১টি ওয়েব বেইজড কোম্পানির মালিক হয়ে গিয়েছিলেন এরিক ফিজেলবার্গ। সেই ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ উদ্যোক্তার গল্প শুনুন এই প্রতিবেদনে।


সাধারণত দেখা যায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্ররা হাত খরচের টাকা দিয়ে শখের কোনো জিনিস কেনে। কিন্তু এরিক ছিলেন একটু অন্য রকমের। তিনি এই টাকা কখনও খরচ করতেন না। জমিয়ে রাখতেন। সেই সময় থেকেই তিনি চিন্তা করতেন ব্যবসা করার। আর সেজন্যই জমাতেন এই টাকা।

ব্যস, গ্র্যাজুয়েশন শুরু করার আগেই আপলোড করে দিলেন তার ওয়েবসাইটগুলো। মোট ১১টি সাইট খুলেছিলেন তিনি। সেগুলোর সবই বলা যায় নন-প্রফিটেবল ছিল। তার প্রজেক্টগুলোর মধ্যে এমন সাইটও ছিল, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিস্টারের প্রজেক্ট ওয়ার্কের বিবরণ দেওয়া থাকত, এমনকি সেগুলোর সমাধানও থাকত। মূলত এই ধরনের কাজের জন্যই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। এ প্রজেক্টগুলো ভালোই চলছিল। একসময় তার কাছ থেকে একটি কোম্পানি তার ওয়েব সাইট কিনতে চাইল। তিনিও রাজি হলেন। ১১টি থেকে তিনটি ওয়েবসাইট বিক্রি করে দিলেন তিনি। ট্রিকার টক, রামানিয়া ফাউন্ডেশন এবং ক্লাসলিফ নামের সাইটগুলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।

পোকাটা তার মাথায় ঢুকেছিল স্টিভ জবসের গল্প পড়ে ও শুনে। তাদের ক্লাসের আরও অনেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন এই স্টিভ জবসের কাজে। কিন্তু তার মতো করে বুকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে খুব কম মানুষই। বিখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা জবসের জীবনের শুরুটাও খানিকটা এলোমেলো। পড়ালেখায় মন ছিল না, বাদ পড়ে গিয়েছিলেন কলেজ থেকে। এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র একুশ বছর বয়সে মনের মতো কম্পিউটার বানানোর চিন্তা থেকে অ্যাপলের শুরু।

নিজের কম্পিউটার নেড়েচেড়ে সে রকমই কিছু করার ইচ্ছাটা হয়তো উঁকি দিয়েছিল ওয়েনসের মাথায়। ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিয়ে যেটা করে বসল তাতে অন্তত একদিক থেকে শুধু জবস কেন, অন্য সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে হয়ে গেছে মিলিয়ন পাউন্ডের মালিক। মাত্র সাত বছর বয়সে তার হাতেখড়ি কম্পিউটার চালানোয়। প্রথমে সারাক্ষণ এ যন্ত্রটি নিয়েই মেতে থাকতেন। ফলে অল্প কয়েক দিনে ওয়েব ডিজাইনের মতো জটিল সব কারবার তার আয়ত্তে চলে আসে। ১০ বছর বয়সে পেয়েছিলেন একটি মেকিন্টোশ কম্পিউটার। তখন এতে ছোটখাটো প্রোগ্রাম বানাতে শুরু করেন তিনি। চার বছর পর ২০০৮ সালে হাতখরচের পয়সা বাঁচিয়ে নিজের একটি ওয়েবসাইট খোলেন। নাম দেয় ম্যাক বঙ্ বান্ডেল। সেখান থেকে তার তৈরি প্রোগ্রাম বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ কিনতে পারতেন টাকার বিনিময়ে। ব্যবসায়িক বুদ্ধি অবশ্য ভালোই খাটিয়েছেন ছোট্ট এরিক। নিজের পাশাপাশি অন্যান্য নির্মাতার বানানো প্রোগ্রামও বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছিলেন তার সাইটে। কেউ একসঙ্গে অনেক প্রোগ্রাম কিনতে চাইলে কখনো ১০ শতাংশ দামে বিক্রি করে দিতেন তিনি। আর প্রতিটি প্রোগ্রাম বিক্রির কিছু অংশ কোষাগারে জমা হতো সেবামূলক কাজে ব্যয়ের জন্য। এতে অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। একই সঙ্গে ভারি হতে থাকে তার টাকার ঝোলা। দুই বছরের মাথায় আয় পৌঁছে যায় ৭০ হাজার পাউন্ডে।

দ্রুত সাফল্য পেয়ে থেমে যাননি তিনি। এরপর বেছে নিয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিজ্ঞাপনের কাজ। এরপর ব্রাঞ্চর নামে বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে নতুন একটি ওয়েবসাইট খোলেন তিনি। এখান থেকে মাসে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে যায় ইন্টারনেট ও আইফোনে। সেসব বিজ্ঞাপনে কেউ ক্লিক করামাত্র টাকা চলে আসে ওয়েনসের নামে। এরই মধ্যে এই ব্যবসা থেকে পাওয়া গেছে পাঁচ লাখ পাউন্ড। উইলিয়াম হিলের মতো বড় বড় কোম্পানি এখন তার সেবা গ্রহণ করে।

দুটি প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা তিনি নিজে। এর সদর দপ্তর তার ঘরে কম্পিউটারের সামনের জায়গাটুকু। এখানে তিনি আবার চাকরিও দিয়েছে আটজনকে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা কর্মীরা সবাই বয়সে তার চেয়ে বড়। তারা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানাভাবে সাহায্য করে তাকে। স্কুল শেষে ও সপ্তাহান্তে অবসর পেলে তিনি বসে যান ব্যবসার কাজে। সামনের বছরে দুটো শাখা খোলার পরিকল্পনা আছে তার। ব্যবসা নিয়ে কেউ কথা বলতে এলে বেশ ভারিক্কিভাব চলে আসে তার মধ্যে। নাকের ওপর চশমাটা পেছনে ঠেলে আরও শক্ত করে বসিয়ে নেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘১০ বছর পরে কেমন থাকব তা জানি না, কিন্তু ১০০ মিলিয়ন আয় না করা পর্যন্ত থামছি না।’ তিনি চান তার ছেলেবেলার নায়ক স্টিভ জবসের মতো তার নামও সবার মুখে মুখে প্রচারিত হোক।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment