সফল উদ্যোক্তার ২ ডজন বৈশিষ্ট্য
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
উদ্যোক্তা বলতে বুঝায় এমন একজন ব্যক্তি যিনি উৎপাদনের সকল উপকরণ সমূহের মধ্যে সফল সমন্বয় সাধন করেন এবং ব্যবসায় প্রত্যাশিত মুনাফার ব্যবস্থা করেন। একজন উদ্যোক্তার মাঝে শিক্ষা, ত্যাগী মনোভাব, তৎপরতা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, ঝুঁকি গ্রহণের যোগ্যতা, নেতৃত্ব, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা, সততা, পরামর্শ ও সমালোচনার প্রতি সাড়া এছাড়াও আরও অনেক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ সবাই তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্যোক্তাদের বৈশিষ্ট্য নিরুপনের চেষ্টা করেছেন। এমন ২৪টি কার্যকরী বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো :
১। আপনি কি উপভোগ করেন
আপনি আপনার ব্যবসা থেকে কি পেতে চান? আর্থিক সন্তুষ্টি, স্থায়িত্ব, আপনার ব্যবসার আকার বৃদ্ধি করতে এ সব কিছুই একজন উদ্যোক্তার চাওয়া থাকে। কিন্তু এসব কিছু আপনাকে অর্জন করতে হলে আপনাকে ব্যবসা উপভোগ করতে হবে। আপনাকে অনেক সহনশীল হতে হবে।
২। ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা
ঝুঁকি গ্রহণের গুনটি উদ্যোক্তার মাঝে অবশ্যই থাকতে হবে। উদ্যোক্তার কাজটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী কাজ। তাই তার উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বাজারও অনিশ্চিত। এই অনিশ্চিয়তা থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি গ্রহণের মন মানসিকতা থাকতে হবে। অন্যথায় অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। কারন ঝুঁকির পরিমান যেখানে যতো বেশি মুনাফার সম্ভাবনাও সেখানে ততো বেশি।
৩। আত্মসমালোচনা করুন
একজন সফল উদ্যোক্তা আত্মসমালোচনা এবং নিজের কার্যক্রম পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুল চিহ্নিত করতে পারেন এবং অকপটে স্বীকার করেন। তারপর যতো তারাতারি সম্ভব তার ভুল গুলো সমাধান করার চেষ্টা করেন। তিনি নিজের ভুল সমাধান করার জন্য অন্যের পরামর্শ গ্রহন করেন। এই মন মানসিকতা তাকে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
৪। পরিকল্পনা করুন
আপনার ব্যবসার জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি প্রতিটি ব্যবসার অবস্থা, গবেষণা বিশ্লেষণ এবং তথ্য কম্পাইল করে থাকে। আপনি আপনার ব্যবসা পরিকল্পনা A to Z লিখে রাখবেন। যদি কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় পরিবর্তন করবেন।
৫। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহন
কাজের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহন উদ্যোক্তার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আজ করতে গিয়ে বাস্তব জীবনে অকৃতকার্য হলে তিনি নিরাশ হন না। বরং ব্যর্থতার কারণগুলো খুঁজে বের করে পরবর্তীতে যাতে এগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে দিকে সচেষ্ট থাকে। ব্যর্থতাই যে সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে দর্শনে তিনি অটল বিশ্বাসী থাকেন।
৬। বুদ্ধিমানের মতো আর্থিক পরিচালনা করুন
কোনো ব্যবসা এন্টারপ্রাইজ এর আয়ু হয় তার প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ। আপনি আপনার ব্যবসার পরিচালনার জন্য যাবতীয় খরচ, মেরামত সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন ইত্যাদির জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের জন্য যাবতীয় বিল পরিশধের জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন। আপনার কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ, পণ্য সেবা প্রদান করার জন্য আপনাকে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আর্থিক দিকটা বুদ্ধিমত্তার সাথে হ্যান্ডেল করতে হবে।
৭। বহুমুখি কর্মমুখী সম্পন্নতা
একজন সফল উদ্যোক্তা একই সঙ্গে বহুবিধ কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতা ও প্রয়োজন বোধে অগ্রপশ্চাৎ ভেবে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করার যোগ্যতা রাখেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক দায়িত্ব যেমন- পণ্য নির্বাচন, পণ্য বিপণন, অর্থসংস্থান, কর্মী নির্বাচন ও নিয়োগ প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
৮। স্বাধীনচেতা
উদ্যোক্তারা আত্ম নির্ভরশীল এবং স্বাধীনচেতা হয়ে থাকে। তারা সাধারনত অন্যের নিয়ন্ত্রন বা পরের উপর নির্ভরশীল হওয়া পছন্দ করে না। এ বৈশিষ্ট্য তাদেরকে আত্ম নির্ভরশীল হওয়ার প্রেরনা যোগায় এবং ব্যবসায় উন্নতি করতে প্রলুব্ধ করে।
৯। সাংগঠনিক ক্ষমতা
উৎপাদনের উপকরন সমূহকে সংগঠিত করে কার্যকর প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত ক্ষমতা থাকা উদ্যোক্তার একটি উল্লেখযোগ্য গুণ। এজন্য ভুমি, শ্রম, মূলধন, প্রযুক্তি ইত্যাদি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও এসবের কার্যকর সমন্বয় বিধানের ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।
১০। প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়া
প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া বর্তমানে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। উন্মুক্ত অর্থনীতিতে একটি পণ্য বা একই ধরনের পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একজন উদ্যোক্তাকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। একই সাথে তাকে টিকে থাকার জন্য তাকে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এ কারনে উদ্যোক্তাকে প্রতিযোগিতাশীল হতে হবে। প্রতিযোগীতাশীল হওয়া ছাড়া বর্তমানে কোন বিকল্প নেই।
১১। কাজের প্রতি অঙ্গিকার
উদ্যোক্তাগণ তাদের হাতে নেয়া কাজের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। কাজ যতো জটিল ও কঠিন হোক না কেন তা সফল ভাবে সম্পন্ন না করা পর্যন্ত উদ্যোক্তাগণ কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন।
১২। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা
আধুনিক জটিল ব্যবসায়িক যুগে উদ্যোক্তাকে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল তথ্য জানা থাকতে হবে এবং অভিজ্ঞতার অধিকারী হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যবসায়ের প্রতিযোগীতা মোকাবেলা ও বিশ্ব পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা অর্জন আবশ্যক।
১৩। সুযোগ সন্ধানী উদ্যোক্তা
যেসব উদ্যোক্তা বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে কাজ করে থাকেন সেসব উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠানকে একদিন অনেক উপরে নিয়ে যায়। এ ধরনের উদ্যোক্তা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করেন। তাই তাদের সফলতার হার উল্লেখযোগ্য। সুযোগ সন্ধানী উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে শিক্ষিত, সচেতন, মেধাসম্পন্ন এবং সাহসী হয়ে থাকেন।
১৪। সমাজ উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা
সমাজ উন্নয়ন তথা সমাজের তরুন ও যুবশক্তির সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ এবং সংখ্যা গরিষ্ঠ গন মানুষের স্বার্থে তাদেরকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক কর্ম কান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে সমাজের উন্নতি সাধন করে থাকে। নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের সফল রুপকার অদ্ধাপক ডঃ ইউনুস সামাজিক উদ্যোক্তার উজ্জ্বল উদাহারন হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
১৫। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টা
উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হতে হবে। উদ্ভাবন অর্থ কেবল নতুন কোন পণ্য বা সেবার আবিষ্কার নয়, পুরনো কোন পণ্য বা সেবাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা, নতুন বাজার সৃষ্টি করা, কাঁচামালের নতুন উৎস সন্ধান করা এবং কাজের সুবিধার জন্য নতুন কোন কৌশল আয়ত্ত করাকেও বুঝায়। কোন উদ্যোক্তা শুধু সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির কারনেই তার নিজের অবস্থানকে উন্নত করতে পারবে এবং বর্তমান বাজারে টিকে থাকতে পারবে।
১৬। কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা
উদ্যোক্তারা যখন কোন কাজে হাত দেন তখন নিজেকে ঐ কাজে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করে। কোন কাজ অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় থাক তারা তা পছ্দ করেন না, এ জন্য নিজেকে ক্ষমাও করেন না। শিল্প পণ্য উৎপাদন একটি জটিল কাজ এটা জেনেও কাজে হাত দেন এবং সাফল্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পিছুপা হয় না।
১৭। নমনীয়তা
উদ্যোক্তাকে কোন কোন ক্ষেত্রে নমনীয় ভাব দেখাতে হয়। প্রয়োজনবোধে পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে কার্যক্রম এবং লক্ষ্যের সমন্বয় সাধন করতে পারেন এমন গুণ তার থাকতে হবে। কারন অনমনীয় ও রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব কোন সফল উদ্যোক্তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
১৮। বিক্রয়ের জন্য জিজ্ঞাসা করুন
একটি ব্যবসা উদ্যোক্তার সবসময় মনে রাখতে হবে কোন ব্যবসার মুল উদ্দেশ্য থাকে বিক্রয়। আপনাকে আপনার পন্যের ভালো ভাবে মার্কেটিং করতে হবে। বিজ্ঞাপন দিতে হবে যেন গ্রাহকরা আপনার পণ্যটি ক্রয় করে। গ্রাহককে পণ্য ক্রয় এর জন্য জিজ্ঞেস করতে হবে। কিভাবে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
১৯। আপনার গ্রাহক সম্পর্কে জানুন
কোন ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল গ্রাহক চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে আপনার ব্যবসা সম্বন্ধে জানানো। একজন গ্রাহকের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে ধারনা নেওয়া। একজন উদ্যোক্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে গ্রাহককে সন্তুষ্ট করা।
২০। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে
একজন উদ্যোক্তাকে তার সাফল্যের বিষয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কার্যক্রম গ্রহনে দৃঢ় মনোবল আর চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রয়োজন হয়। আত্মবিশ্বাস না থাকলে যে কোন কাজ ভাল ভাবে সম্পাদান করা সম্ভব না। ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহন থেকে সাফল্য লাভ করা পর্যন্ত উদ্যোক্তার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
২১। যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকতে হবে
বর্তমান যুগ ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। একজন খুব সহজেই আরেকজনকে যে কোন তথ্য মুহূর্তের মাঝে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। বর্তমান যুগের অবাধ তথ্য প্রবাহের কারনে উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় যোগাযোগ দক্ষতা থাকা আবশ্যক। উদ্যোক্তাকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে।
২২। নেতৃত্ব দানের অধিকারী
একজন উদ্যোক্তাকে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কর্মীদের মাঝে দলীয় অনুভুতি সৃষ্টি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। একজন উদ্যোক্তার গতিশীল নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীদেরকে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য প্রেরনা যোগায়।
২৩। কঠোর পরিশ্রমী
একজন উদ্যোক্তাকে তার ব্যবসা সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। উদ্যোক্তাকে তার প্রত্যাশিত সাফল্য আনয়নের জন্য কঠোর পরিশ্রমী হতে হয়। ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদ্যোক্তাকে প্রবল সাহস এবং অবিরাম পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতার দার প্রান্তে পৌছাতে হবে।
২৪। মানসিক শক্তি থাকতে হবে
ব্যবসায় করতে অনেক সমস্যার সামনে পড়তে হয়। সে সকল সমস্যা ছোট বড় অনেক ধরনের থাকতে পারে। আপনার মাঝে প্রচুর মানসিক শক্তি থাকতে হবে।