তাহাদের উদ্যোগ…
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
লাইট অব হোপ
২০১৩ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে লাইট অব হোপের যাত্রা শুরু। আর এর পেছনের কারিগর বাংলাদেশী চার তরুণ নাজমুল আরেফীন, ওয়ালী, মারুফ, সোয়েব। লাইট অব হোপ মূলত সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে ল্যাপটপ অথবা প্রজেক্টর দিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরির প্রচেষ্টা।
ডেল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে বিশ্বের ৮০০ প্রকল্পের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে বাংলাদেশী দলের লাইট অব হোপ। এতগুলো দলকে পেছনে ফেলে তৃতীয় হওয়া বড় প্রাপ্তিই বলা যায়। যা-ই হোক না কেন প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে এসে লাইট অব হোপ কাজ শুরু করেছে দেশের জন্য। বাংলাদেশে সাতটি ডিজিটাল স্কুল, ৬৫টি লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার তৈরির পাশাপাশি শিশুদের নিয়ে নানা রকম শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করেছে লাইট অব হোপ।
এবং এত দিনে তাদের সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রোমেল, সানি, মুকুল, আনিকা, সাথীসহ আরো অনেক তরুণ-তরুণী। লাইট অব হোপ স্বপ্ন দেখে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশের প্রাইমারি শিক্ষার মানকে উন্নত করার, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে। সারা দেশের এক লাখ প্রাইমারি স্কুলে লাইব্রেরির পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিজ্ঞানাগার আর মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে কাজ করছে লাইট অব হোপ টিম।
ব্যাটারি লো ইন্টারএকটিভ গেম
ছোট্ট থাকতে যেদিন প্রথম গেম খেলার শুরু হয়, সেদিন থেকেই গেমের প্রতি তার ভালোবাসাটা ছিল অন্য রকম। তাই মনের গহিনে উঁকিঝুঁকি দিত যদি গেম বানাতে পারা যেত! এমন ভাবনাই জুড়ে ছিল ছোট্ট মিনহাজ-উস-সালেকীন ফাহিমর মনে। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করতেই তার হাত ধরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ইত্যাদি আনকোরা প্রযুক্তিসহ ওয়েব, ডেক্সটপ এবং অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করে ব্যাটারি লো।
গল্পটা একটু খুলে বলি। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) পড়ুয়া ফাহিম যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন গেম বানানো শুরু করলেও সঙ্গীর অভাবে একসময় থেমে যেতে হয় তাকে। কিন্তু এর পরের বছরই সঙ্গী হিসেবে পান সতীর্থ আসিফ ইকবাল এবং বড় ভাই ইশতিয়াক আহমেদকে। সেই দুই তরুণের স্বপ্নজুড়ে গেম বানানোর নেশা। মোট কথা স্বপ্নের কেন্দ্রটা সবারই ছিল এক। সেই স্বপ্ন সত্যি করতেই জন্ম নিল তাদের দল ব্যাটারি লো।
শুরুতেই মাইক্রোসফট আয়োজিত ইমাজিন কাপ ২০১৫-এর ‘গেম ডেভেলপমেন্ট’ ক্যাটাগরিতে রানার্সআপ হয় তাদেরই বানানো গেম। সেই থেকে নিজেদের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে পরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। একটি দল থেকে শুরু করে আজ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া ব্যাটারি লো ইন্টারএকটিভ বাংলাদেশে প্রথম অকুলাস রিফট ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমের নির্মাতা। তাদের তৈরি অগমেন্টেড রিয়েলিটি আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গেম এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
একই সঙ্গে পুরোদমে চলছে ওয়েব, ডেক্সটপ এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের কাজ। লক্ষ্যটা সহজ— দেশে বসে দেশী হাতে বিশ্বে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনকে খানিকটা সহজ করা, আর চমত্কার সব গেম উপহার দেয়া, যা এতটাই আকর্ষণীয় হবে যে, খেলতে খেলতে আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি লো হয়ে যাবেই!
জেসিআই ঢাকা ওয়েস্টের প্রেসিডেন্ট
আইইউটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ুয়া জিয়াউল হক ভুঁইয়ার গল্প খানিকটা ভিন্ন। উদ্যোগী তরুণদের নিয়ে সমাজের গঠনমূলক পরিবর্তন করতে ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের পীড়াপীড়িতে জেসিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। সেসময় জেসিআই সম্পর্কে ঠিকমতো ধারণাও ছিল না তার। কিন্তু কাজ করতে করতে তিন বছর পর এই সংগঠনের সঙ্গেই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয় তার। কাজ এবং যোগ্যতা দিয়ে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিতও হয়ে গেলেন। আর এখন তার নেতৃত্বেই চলছে জেসিআই ঢাকা ওয়েস্টের নানা কার্যক্রম।
এবার জেসিআই সম্পর্কে একটু ধারণা না দিলেই নয়। জেসিআই প্রধানত কাজ করে জাতিসংঘের গ্লোবাল গোলস ফর সাস্টেইনেইবল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। সারা বিশ্বে ১২০টিরও বেশি দেশে আছে জেসিআই। জেসিআই বাংলাদেশের ১৪টা শাখার একটি হলো জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট। জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট মূলত সমাজের কিশোর এবং তরুণ-তরুণীদের মানসিক গঠন, যুবসমাজকে বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা-পরবর্তী ক্যারিয়ারের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। এছাড়া শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধিত্ব, পরিবেশ, ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তুলতেও কাজ করছে জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট।
ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে কতটা উন্নতি সাধন করা যায়, তা এখন দৃশ্যমান। জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট বিশ্বাস করে এই ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগই পরবর্তীতে সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।