তহুরা এখন স্বাবলম্বী
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নাটোরের সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া গ্রামের মেয়ে তহুরা খাতুন। তহুরা এখন স্বাবলম্বী। অনেকেরই উদাহরণ। তবে আজকের অবস্থানের পেছনের গল্পটা সহজ ছিল না অভাবের সংসারে বড় হওয়া তহুরা খাতুনের জন্য। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকায় বহুবার পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছিল। কিন্তু তিনি দমে যাননি। পরিবারের অভাব-অনটন আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন।
এইচএসসি পাস করার পর বাবাকে জানান কম্পিউটার শিখতে চান। কিন্তু বাবা রাজি হননি। একে তো মফস্বলের মেয়ে, তার ওপর অভাবের সংসার। কম্পিউটার শিখে কী করবে, এমনটাই ভাবতেন তহুরার বাবা। কিন্তু তহুরা এবারও এক রকম পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গ্রামের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিজের জমানো টাকা দিয়ে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল শেখেন। এ প্রসঙ্গে তহুরা বলেন, ‘২০০৭ সালে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটারে হাতেখড়ি। ২০১০ সালে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে আরেকটি প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণের পর একই বছর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে চাকরিও পাই এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করি। ২০১৪ সালে উপজেলা টেকনিশিয়ান হিসেবে নাটোর সদরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইনফো সরকার ফেজ-টু প্রজেক্টে যোগদান করি। ২০১৫ সালে তথ্যসেবা কেন্দ্রের সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণে যারা ওয়েব ডিজাইনের ওপর ভালো করেছে, তাদের ২০ জনকে নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়। দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় আমাকে। এরপর আমি ও আমার দল সিদ্ধান্ত নিই উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ওয়েব পেজ তৈরির কাজ করব। এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশন আমাদের সহযোগিতা করে। আমাদের অনুরোধে ডিসি ও ইউএনও স্যাররাও কাজটিতে সহযোগিতা করেন। তারা ১৫০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের প্রিন্সিপালসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি স্কুলে ওয়েব পেজ তৈরির কাজটি সম্পন্ন করতে স্কুলপ্রধানদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং আমাদের টিমকে ওয়েব পেজ তৈরির কাজটির দায়িত্ব দিতে পরামর্শ দেন। আমি ও আমার টিম এখন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ওয়েব পেজ তৈরির কাজ করছি, যার নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর থেকে আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমি পরিবারকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি নিজ খরচে বিএ পাস করেছি এবং বর্তমানে মাস্টার্স পড়ছি।’
তহুরা খাতুন আরও বলেন, ‘আমার মা-বাবা এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেন। প্রথমে কম্পিউটার শিখতে দিতে রাজি না হলেও আমার আজকের এই অবস্থানের পেছনে বাবার অনুপ্রেরণাই ছিল সবচেয়ে বেশি।’
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তহুরা দ্বিতীয়। তার বাবার নাম মো. আলাল শেখ ও মায়ের নাম মোছা. কল্পনা বেগম।