সাজিদ যেভাবে সফল হলেন
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
তরুণ উদ্যোক্তা কাজী সাজিদুর রহমান প্রচলিত ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরে চিন্তা করে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ তৈরির কারখানা করেছেন। পর্যায়ক্রমে প্লেট-বাটি-গ্লাসও তৈরি করেন। ধৈর্য এবং সাহসকে সাফল্যের নিয়ামক মানছেন।
সাজিদের বাড়ি খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ২০০৩ সালে বিএসসি শেষ করেন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ছোট পর্যায়ে ঠিকাদারী দিয়ে। তবে সবকিছু গুটিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কাজী পেপার কাপ বা কেপিসি ইন্ডাস্ট্রি। এখন দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এককভাবে কাগজের তৈরি কাপ, প্লেট, বাক্স সরবরাহ করছেন তিনি।
এসব উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে তিনি হয়েছেন বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশন তাকে দিয়েছে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০১৬’। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে কেপিসি’র গ্রাহক সংখ্যা ১৯০টিরও বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়াতে অল্প কিছু কাপ রপ্তানিও করেছেন তিনি।
কেপিসি ইন্ড্রাস্ট্রির শুরুর বিষয়ে কাজী সাজিদ বলেন, মাত্র ১০ লাখ টাকা নিয়ে কারখানা শুরু করেছিলাম। এরপর একটি বেসরকারি ব্যাংক ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইন্ড্রাস্ট্রির বয়স হয়েছে মাত্র সাড়ে চার বছর। প্রতি বছরই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ব্যাপক হারে। তিনি বলেন, বর্তমানে তার প্রকল্পের বাজারমূল্য ৬ কোটির মতো। রূপগঞ্জে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, আশা করি আগামী ডিসেম্বরে তার প্রকল্পের মোট মূল্য ১৬ কোটি হবে। শুরুতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ৪ জন। এখন আছে ৪০ জন। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ তা ১০০ ছাড়াবে। এটা গ্রিন ইন্ড্রাস্টি হবে। যেখানে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কর্মপরিবেশ সম্পন্ন (কমপ্লায়েন্স) থাকবে। কারখানার পাশেই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধাও থাকবে।
কাগজের কাপের সম্ভাবনা বিষয়ে কাজী সাজিদুর রহমান বলেন, একটা গার্মেন্টস পণ্য একজন ইউরোপিয়ান ব্যবহার করছে হয়তো এক মাস, ওইব্যক্তি দিনে ১০টা পেপার কাপ ইউজ করে। সে হিসাবে এটার ভলিউম অনেক বেশি। ইউনিট প্রাইস কম হওয়ার পরও সংখ্যায় বেশি হওয়ার কারণে সেটা অনেক বেশি। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখি তারা প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন কাপ ব্যবহার করে। প্লাস্টিক কাপ তারা নিষিদ্ধ করে হাইজেনিক পণ্যের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে। এ শিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে তিনি বলেন, বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের সচেতনতা। জনসচেতনতা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। সরকার ইতিবাচকভাবে নিলেও নীতির কারণে হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী এটা গ্রিন ব্যাংকিং প্রোডাক্টের আওতায় থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যে লিস্ট তার মধ্যে এটার নাম আসেনি। পেপার কাপ ইন্ড্রাস্টি করার জন্য দক্ষতা থাকতে হবে। অপারেটর না থাকায় অনেকে ঠিকমত চালাতে পারছে না।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো ব্যবসা করতে হলে বা কোনো পণ্য বাজারে নিয়ে আসতে হলে আগে থেকে সুযোগ-সুবিধা থাকে না, তৈরি করতে হয়। আর যে কোনো কিছু শুরু করার জন্য ছোট থেকে শুরু করা। প্রথমেই বড় কিছু করে ফেলব এমন চিন্তা করা ঠিক না। আমি যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাই তখন মনে করি না আমার সিদ্ধান্তটাই সঠিক। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি যখন কেউ ব্যবসায়ী হতে চায় তখন তার বড় ভুলের জায়গাই এটা। এক্ষেত্রে আমি যে কাজটা করেছিলাম সেটা হলো আমি সবার সঙ্গে পরামর্শ করতাম। আমার ভবিষ্যৎ চিন্তা খাবার প্যাকেজিংয়ের ১০০ ভাগ প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে মাকে নিয়ে হজে গিয়ে ইফতারের সময় কাগজের কাপ দেখেই প্রথম ধারণা আসে। এরপর দেশের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মেলাতে থাকি। তিনি বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আসা। সাজিদ বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, এটা সবসময় আমার মনের মধ্যে ছিল। তাই নতুন এ পণ্যটা নিয়ে কাজ শুরু করি। এ পণ্য ১০০ ভাগ পরিবেশ বান্ধব এবং ১০০ ভাগ স্বাস্থ্যসম্মত।