উদ্যোক্তা খুঁজছে বাংলাদেশ
- পিয়া সাহা ও শফিকুল ইসলাম
উদ্যোক্তা এমন একজন মানুষ, যিনি যেকোনো উদ্দেশ্য সফল করার জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি নিতে জানেন। একজন উদ্যোক্তার মূল বৈশিষ্ট্য হলো নতুনত্ব নিয়ে কাজ করেন। ইংরেজি শব্দ Entrepreneur–এর বাংলা অর্থ উদ্যোক্তা।
বর্তমান বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বেকারত্ব। সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে সারা দেশে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার বেকার লোক আছেন। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজের সুযোগ পান না। এ বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার তরুণ-তরুণী উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেও চাকরি পাচ্ছেন না। বেকারদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই এমন শিক্ষিত বেকার।
বাংলাদেশ সরকার বেকারত্বের হার কমানোর জন্য তরুণদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করার জন্য নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে ২৪ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন উদ্যোক্তাদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এ–সংক্রান্ত এক বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলায় একটি করে ৬৭টি প্রশিক্ষণ সেন্টার থাকবে। সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য ৬৪ জন প্রশিক্ষক জেলা পর্যায়ে কাজ করবেন। এরই মধ্যে তাঁদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ সেন্টারের নামকরণ করা হয়েছে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও বিনিয়োগ সহায়তা কেন্দ্র।
দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে প্রশিক্ষণ ও মূলধনের অভাব। একজন তরুণ উদ্যোক্তা মূলধনের এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প’ বা ‘আইডিয়া প্রকল্প’র মাধ্যমে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবকদের তাঁদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন সেবা বা পণ্যসমূহ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি তাদের বিভিন্নভাবে মেন্টরিং সাপোর্ট, ফান্ডিংসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
এ অর্থের জোগান পাওয়া যাবে ব্যাংক থেকে। ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠায় পাওয়া যাবে বিনা জামানতে ঋণ। মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠায় মিলবে সহজ শর্তে স্বল্প সুদের ঋণ। নতুন উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মোট খরচের মাত্র ২০ শতাংশ উদ্যোক্তাকে বহন করতে হবে; বাকি ৮০ শতাংশ খরচে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। বর্তমানে দেশে ৫৭টি ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে। সব ব্যাংকই এসএমই ঋণ বিতরণ করছে। এসএমই ঋণকে আরও সহজলভ্য ও উদ্যোক্তাবান্ধব করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করেছে বিশেষ পুনঃ অর্থায়ন তহবিল। এ তহবিল থেকে ঋণ নিলে সর্বোচ্চ সুদহার মাত্র ১০ শতাংশ। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল ব্যবহারে করে ঋণ দিতে পারে ব্যাংকগুলো। এসএমই ঋণ সহজ করার জন্য পুরো প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।