দিনমজুর আলপনার লাখপতি হওয়ার গল্প
- ফারহানা ইসলাম অন্তরা
বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া এলাকার আলপনা বেগম দিনমজুর থেকে অর্থিকভাবে কেবল স্বচ্ছলই নয়, লাখপতি হয়েছেন হাঁস পালন করে।
দেশিজাতের হাঁস-মুরগি লালন পালন করা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবারই ৫-১০ টি হাঁস পালন করে থাকেন। কিন্তু শুধুমাত্র হাঁসের খামার থেকে যে লাখপতি হওয়া যায় সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন বরগুনা জেলার নলবুনিয়া এলাকার আলপনা বেগম। তার কাছে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই বছর আগে তিনি দিনমজুরিতে কাজ করতেন বিভিন্ন জায়গায়। এবং এই কাজ করে তার কাছে তিন হাজার টাকার মতো অবশিষ্ট থাকে। তিনি এই টাকা দিয়ে ১৫ টি হাঁস কিনেন। এই হাঁস ডিম দেয় এবং সেটা থেকে আবার নতুন হাঁস হয়। এভাবে ১৫ টি হাঁস থেকে প্রায় ৫০-৬০ টির মতো হাঁস হয়। তার ডিম বিক্রি করেন এবং ডিম থেকে নতুন হাঁসও হয়। এখন তার ৪০০ টির বেশি হাঁস আছে।
কিভাবে হাঁস লালন পালন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে খাবার দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বিলের দিকে, দুপুর এবং বিকেলের মাঝামাঝি সময়ে একবার খাবার দেয়। প্রথমে প্রতি দুই মাস পর ভ্যাক্সিন করাতে হয় এবং তারপর ৬ মাসে ভ্যাক্সিন করাতে হয়৷
ডিম দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের পিছনে ব্যয় হয় ১০০-১২০ টাকার মতো। কিন্তু তিনি এই হাঁস থেকে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা, সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে গড়ে তার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় হয়।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা তার বাসা থেকেই ডিম নিয়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় ২৪০-২৫০ টি ডিম দেয়। এতে তার ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেকাংশেই বেশি।
তার আগের আর্থিক পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে বলেন, তিনি আগে খুবই কষ্ট করে সংসার চালাতেন। টাকার অভাবে তিনি তার ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারছিলেন না। তার টিনের ছোট একটি আধভাঙ্গা ঘর ছিলো। কিন্তু হাঁসের খামার দিয়ে অনেকটাই লাভবান হয়েছেন৷ তিনি এখন বিল্ডিংয়ের বাসা করেছেন। তার সংসার এখন অনেক ভালো যাচ্ছে। এখন তার ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারছেন।
নতুন উদ্যোগক্তাদের জন্য তার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যাবসায়ই দ্রুত সফলতা পাওয়া যায় না। কম খরচে লাভবান হওয়ার এটি একটি সফল ব্যবসা। আলপনা বেগমের এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে তার এই খামার। আলপনা বেগমের মতো এরকম উদ্দ্যোগ নিয়েই অনেক কর্মহীন মানুষ স্বাবলম্বী এবং লাভবান হতে পারেন।
ফারহানা ইসলাম অন্তরা
সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি