উদ্যোক্তা নাকি চাকরিজীবী
- বিপ্লব শেখ
পেশা নির্বাচন জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তটাই আপনার জীবনযাত্রা ও পরিচয় বহন করবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই সিদ্ধান্ত কতটা গুরুত্ব বহন করে। তবে আপনাকেই বেছে নিতে হবে আপনার পছন্দসই পেশাটি। আর এই পছন্দ হতে পারে ব্যবসা অথবা চাকরী। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন পেশাটি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য ভালো? ব্যবসা নাকি চাকরি?
আগের দিনে মনে করা হতো শিক্ষা কম থাকলেই মানুষ ব্যবসা করে। আর শিক্ষিত মানুষরাই চাকরি করে। কিন্তু এখনকার দিনে এই চিত্র ভিন্ন। লেখাপড়া শেষ করে বা চলাকালীন নিজের মেধা, মন, দক্ষতা ও চিন্তাচেতনাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন অনেকেই। আবার অনেকে নির্দিষ্ট চাকরি পাওয়ার আশায় পড়ালেখা করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই জানে না তাদের লক্ষ্য। তারা পড়ালেখা ঠিকই করছেন। কিন্তু তারা জানেন না, কী চাকরি তারা করবেন বা আদৌ কোনো চাকরি পাবেন কিনা। আবার অনেকের চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতেই বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিপূর্ণ সাহস ও যথাযথ সমর্থনের অভাবে উদ্যোক্তা বা ব্যবসাও শুরু করতে পারছে না।
কারণ এদেশে এখনো অনেকেই ব্যবসাকে খাটো করে দেখে। আসলেই কি তাই? নাকি ক্যারিয়ার হিসাবে ব্যবসাই অধিক ভালো? যেখানে একটি চাকরি পেতে পড়ালেখার পিছনেই জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে শিক্ষার্থীরা। তারপরও অনিশ্চয়তা! চাকরি নামক সোনার হরিণ পাওয়ার দৌড়ে ব্যর্থ হয় অনেকে। কিন্তু তারপরও তারা ঝঁকি নিতে রাজি নন। কারণ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হতে হলে যে ঝঁকি নিতেই হবে।
তাহলে কোন পথে যাবেন আপনি?
অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন নাকি চাকরি দিবেন? নিজের ক্ষমতায়নে চাকরি করতে চান? তবে আপনাকে হতে হবে উদ্যোক্তা বা করতে হবে ব্যবসা। আর যারা একটু সাহসী, চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন এবং চিন্তাভাবনা একটু ভিন্ন ধরনের তারা সহজেই উদ্যোক্তা হতে পারেন। কথায় আছে যত বড় ঝুঁকি তত বেশি সাফল্য। তাই উদ্যোক্তা হতে হলে বা যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। আর একবার ঝুঁকি নিয়ে শুরু করে দিলেই শেষ নয়। আপনাকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী এবং কাজ করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সাথে। তবে এখানে আপনার সম্ভাবনা বিপুল। এখানে সাফল্যের কোনো শেষ নেই। কর্মদক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে আপনি যেতে পারবেন অসীম সাফল্যে এবং আয়ের কোনো সীমাবদ্ধতাও নেই এখানে।
কিন্তু চাকরি করলে আয় সীমিত ও নির্দিষ্ট। এখানে আপনার ক্যারিয়ারেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন চাকরি মানেই নিশ্চিত ক্যারিয়ার। মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতে পাওয়া এবং জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। জীবনযাপনের নিশ্চয়তা থাকলেও এখানে খুব বেশি উন্নতি করার জায়গা নেই। আপনাকে থাকতে হবে পরাধীন। ঘড়ির কাঁটা ধরে আপনাকে অফিসে হাজির হতে হবে। কাজ করতে হবে অন্যের ইচ্ছায় ও অন্যের স্বপ্ন পূরণে। আবার এদিক সেদিক হলেই রয়েছে চাকরি যাওয়ার ভয়।
তবে আপনি নিজে উদ্যোক্তা হলে বা আপনার নিজের প্রতিষ্ঠান থাকলে আপনাকে কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না। যখন খুশি অফিসে যেতে পারবেন। কিন্তু এখানে আপনার ছুটির দিন বলতে কিছু নেই। আপনার স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে হতে পারে পুরো সময়। কারণ কাজটা যে নিজের জন্য, নিজের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য। এখানে ঘুমের সময় ছাড়া বাকি পুরো সময়টাজুড়েই আপনার মাথায় ঘুরপাক খাবে নিজের প্রতিষ্ঠানের ভাবনা। ব্যবসাটি কীভাবে সম্প্রসারিত হবে, কীভাবে আয় বাড়বে সেই চিন্তায়।
কিন্তু চাকরিতে এই ধরনের কোনো চাপ নেই। সারাদিনের অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে সবার সাথে সময় কাটাতে পারবেন, আড্ডায় মেতে থাকতে পারবেন। আবার সাপ্তাহিক ছুটি তো আছেই। কিন্তু আপনি যদি উদ্যোক্তা হন এই ধরনের কোনো সুযোগই আপনার থাকছে না। সবসময়ই আপনাকে প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবতে হবে।
তবে আপনি উদ্যোক্তা হলে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবসা পাবে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে এমনটা নয়। চাকরিতে আপনার পজিশনটা কখনোই আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে দেওয়া হবে না। তাকেও ছুটতে হবে অজানা ভবিষ্যতের দিকে। তাহলে আপনিই ভাবুন পেশা হিসাবে কোনটি চান বা কোন পেশাটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।