অনলাইন ব্যবসায় ভাগ্য পরিবর্তন
- ঋতুপর্ণা চাকী
একটি মাত্র স্মার্ট ফোন, তাতে পছন্দমতো পণ্য দেখে অর্ডারকরলে বাড়িতে বসেই এক থেকে দুই দিনের মধ্যে হাতে পাওয়া যাচ্ছে সেই কাঙ্খিত পণ্যটি। আজ থেকে কয়েক বছর আগে বিষয়টি অকল্পনীয় হলেও বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে সেটিই সম্ভব হয়েছে।
অল্প পুঁজিতে ঘরে বসে এই অনলাইন ব্যবসা করেই ভাগ্য পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছে বহু মানুষ। অর্থ উপার্জনের নতুন এক সম্ভবনা হয়ে উঠেছে অনলাইন ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বহু মানুষের কর্মক্ষেত্রও। খুব অল্প পুঁজি আর সময়ের কোনো নির্দিষ্ট বাধ্য-বাধ্যকতা না থাকায় মানুষের অন্যতম আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়ে উঠেছে এই অনলাইন ব্যবসা। বর্তমানে বেড়েছে এর গ্রহনযোগ্যতা। বেড়েছে লেনদেনও ব্যাপক হারে।
অনলাইন ব্যবসা বলতে মূলত বোঝায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে ব্যবসাহিক কাজকর্মগুলো পরিচালিত হয়। একজন মানুষ খুব সহজেই এখন ইন্টারনের মাধ্যমে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে এই অনলাইন ব্যবসাটি শুরু করতে পারে। এর জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না।
এমনকি এই অনলাইন ব্যবসাটি করতে কোনো ধরণের দোকান বা ঘর ভাড়া নেওয়ারও প্রয়োজন নাই। নিজের বাড়িতেই সকল প্রকার ব্যবসায়িক কাজ করা সম্ভব। যা ছোট ছোট উদ্যেক্তারের জন্য ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে এখন অনলাইন ব্যবসায় নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে ১৩০০। কিন্তু অনিবন্ধিত ও ফেসবুক মিলিয়ে রয়েছে লক্ষ্যধিক অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে যে শুধু ক্রেতা বিক্রেতাই লাভবান হচ্ছে তা কিন্তু না। ক্রেতার তাঁর নিদিষ্ট পছন্দ অনুযায়ী জিনিস অর্ডার দেওয়া থেকে শুরু করে তার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত এই কাজে যুক্ত থাকে আরো কিছু মানুষ। যা তাঁদের কাছে হয়ে উঠেছে নিদিষ্ট একটি কর্মক্ষেত্র বা আয়ের প্রধান উৎস।
অনলাইনে বিক্রেতা প্রতিনিয়তই আনতে পারছে নিত্য নতুন পরিবর্তন যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে জিনিসটি কিনতে। তাদের এসব নতুন নতুন অইডিয়াতে ক্রেতাদের বিপুল পরিমাণ সাড়া পাওয়ায় অনেকে অনলাইন ব্যবসাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
করোনার সময়ে এরকম আমরা অনেক মানুষকে দেখেছি তারা চাকরি হারিয়ে হয়ে উঠেছে এরকম ছোট ছোট উদ্যোক্তা এবং এনেছে সফলতাও। যা তাঁদের পারিবারিক অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করেছে।
করোনার সময়ে যখন বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখন নিজের অফুরন্ত সময়কে কাজে লাগাতে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি অধিকারী। প্রথমে সে শুরু করে মেয়েদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জুয়েলারি দিয়ে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার বিক্রি বাড়তে থাকে। সে নিয়ে আসে নিজের পরিবারে আর্থিক সফলতা।
তার সাথে এই বিষয়ে কথা বললে জানা যায়, খুব সীমিত পুঁজি নিয়ে তিনি প্রথমে মেয়েদের জুয়েলারি দিয়ে শুরু করে। তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়লে পরে মেয়েদের জন্য শাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের পোশাকও বিক্রি করতে শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। যা তাকে এই অনলাইন ব্যবসাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ঘরে বসেই যেহেতু সকল কাজ সম্পূর্ণ করা যায় এজন্য যেমন তার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না আবার অন্য দিকে তিনি আর্থিক দিক দিয়েও হয়েছেন স্বাবলম্বী। তিনি আরো বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবেই দেখতে চান।
অনলাইন ব্যবসার ফলে দেশের অর্থনৈতিতে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভবনা। বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, চাকরির আশা ছেড়ে মানুষ এখন স্বাবলম্বী হতে স্বাধীনভাবে নিজেদের ব্যাক্তি উদ্যেগে তৈরি এ ধরনের অনলাইন ব্যবসার দিকে বেশী ঝুঁকছে। যা তাদের নিজেদের পাশাপশি অন্যদেরও কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।