ক্ষুদ্র মূলধনে হয়ে উঠুন সফল ব্যবসায়ী

ক্ষুদ্র মূলধনে হয়ে উঠুন সফল ব্যবসায়ী

  • স্বর্ণা কাজী

আপনি ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত? কিন্তু আপনার আবার নয়টা- পাঁচটার অফিস পছন্দ না। তাই আপনি চান নিজ উদ্যোগে ব্যবসা করতে। যেখানে আপনি আপনার নিজের চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাতে পারবেন, অথবা আপনি আপনার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করতে চান। আর এজন্য কখনো হয়তো নিজ উদ্যোগে ব্যবসা করার জন্য চাকরী ছেড়ে দেয়ার ঝুঁকিও নিচ্ছেন। কিন্তু এতোকিছুর পরেও আপনার সফলতার অন্তরাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে একটাই ব্যাপার- আর তা হল পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। তবে আপনার স্বপ্নপূরণে ‘বিনিয়োগ’ একটি বড় ব্যাপার হলেও তা বাঁধা হতে পারেনা। বাস্তবিক অর্থে, নিজস্ব ব্যবসায়ী পুঁজি না থাকা সত্ত্বেও আপনার ব্যবসার প্রচার এবং প্রসার দুটোই সম্ভব যদি কিনা আপনার পরিকল্পনা সঠিক থাকে।


কেন ব্যবসা করতে অর্থের প্রয়োজন

প্রথমেই দেখা যাক কেন ব্যবসা করতে প্রথমেই অর্থের প্রয়োজন। ব্যবসার ‘প্রারম্ভিককালে’র কোনো নির্দিষ্ট রূপ নেই, এক এক ব্যবসার প্রয়োজন এক এক রকম। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য বিকল্প তহবিল গঠনের আগে ঠিক কি পরিমান অর্থের প্রয়োজন তা হিসাব করে ফেলাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখুনঃ

  • অনুমতিপত্রঃ আপনাকে দেশ বা এলাকাভিত্তীক বিশেষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী এবং নিবন্ধন করতে হতে পারে।
  • সরবরাহঃ আপনি কি কাঁচামাল কিনছেন? আপনার কি কম্পিউটার বা অন্য কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন?
  • সরঞ্জামঃ আপনার কি বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার প্রয়োজন?
  • অফিস স্পেসঃ এটি নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল, যেখানে ইন্টারনেটসহ বিবিধ খরচ রয়েছে।
  • সমিতি,চাঁদা , সদস্যপদঃ প্রতিমাসে আপনি কোন প্রকাশনা বা অন্তর্ভুক্তিকে চাঁদা দিবেন?
  • পরিচালনার খরচঃ এক্ষেত্রে প্রতিটি ছোটো খরচকেও হিসাবে আনা উচিত এবং অবশ্যই বাজার খরচটাকেও ভুলবেন না।
  • আইনী খরচঃ আপনি কি আপনার ব্যবসার উন্নতি বা আইনী বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আইনজীবীর সরণাপন্ন হয়েছেন?
  • কর্মচারী এবং ঠিকাদারঃ ব্যবসায় আপনার সাহায্যের জন্য যারা থাকবে, তাদের জন্যও প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা।

কম পুঁজিতে ব্যবসা করতে হলে যেকোন একটি কাজ করুন- হয় খরচ কমিয়ে দিন অথবা মূলধন বাড়িয়ে দিন। আপনার জন্য তিনটি উপায় রয়েছে যা আপনি চাইলেই অবলম্বন করতে পারেন।

success

উপায়-১. আপনার প্রয়োজনগুলোকে কমিয়ে ফেলুন

প্রথমত, আপনার ব্যবসার নকশাটিতে কিছু পরিবর্তন আনুন, যাতে করে উপরের উল্লেখিত খরচের তালিকা কিছুটা হলেও ছোট হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের কোনো প্রতিষ্ঠান চালু করতে চান, শুরুতেই সেখানে নিজে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে কমিয়ে ফেলতে পারেন অতিরিক্ত কর্মচারীর খরচটি। যতক্ষণ অফিস শুরু করার জায়গা অথবা সুযোগ না পাচ্ছেন, কাজ শুরু করতে পারেন আপনার ঘর থেকেই। সস্তায় প্রয়োজনীয় সরবরাহ সুবিধা পেতে পারেন এমন জায়গা খুঁজে বের করতে পারেন, এবং সাথে সাথে অতিরিক্ত দামী পণ্যগুলোকে আপাতত বাদ দিতে পারেন।

যদিও কিছু খরচ থাকেই যেগুলোকে বাদ দেয়া সম্ভব নয়। অনুমতিপত্র এবং যাবতীয় আইনী সহায়তা পেতে আপনাকে প্রয়োজনীয় খরচগুলো করতেই হবে। তবুও কিছু বুদ্ধিখরচ আপনার বাড়তি অর্থ খরচকে কমিয়ে দিতে পারে।

উপায়-২. একক প্রয়াস

এই উপায়ে আপনি খুব দ্রুতই ব্যবসায় সফলতা পেতে পারেন। তবে তার জন্য আপনাকে ধৈর্য্য ধরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে। খুব দ্রুত শুরু করার জন্য আপনি একটি ব্লগ অথবা এই ধরনের সেবামূলক কর্মকান্ড চালু করতে পারেন, তবে কিছুটা নিজস্ব সুযোগ, দর্শক এবং লভ্যাংশ কমিয়ে। যদি আপনি একজন নিজস্ব উদ্যোক্তা হিসাবে শুরু করেন, অনেক প্রাথমিক ব্যয় থেকে আপনি মুক্তিপেতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন সহজ আয়করের সুবিধা।

রাজস্বের যাবতীয় বিষয়গুলো একবার বুঝে গেলে আপনি নিজেই বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন আপনার বহুল আকাঙ্খিত ব্যবসাটিকে।

উপায়-৩. বহিরাগত উৎস

বহিরাগত উৎস থেকে তহবিল গঠন করা হতে পারে আপনার জন্য তৃতীয় উপায়। শুরুর মূলধনের জন্য হয়তো বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছেন, তাই আর বিস্তারিত বর্ণনাতে যাবো না। কিন্তু আরও ডজন ডজন পথ আছে মূলধন সংগ্রহ করার। কিছু কার্যকারী উৎস হল-

  • পরিবার এবং বন্ধুমহলঃ যদি আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে মূলধন সংগ্রহ করতেও পারেন, তবুও পরিবার এবং বন্ধুদের কথা ভুলবেন না। কারন এদের থেকেই আপনি পেতে পারেন সর্ব্বোচ সাহায্য।
  • দূত বিনিয়োগকারীঃ দূত বিনিয়োগকারীরা হল সেইসব অর্থবানেরা যারা নিজেদের সময়ের ব্যবসা পরিকল্পনাগুলোকে কাজে লাগায়। কিছু মালিকানার বিনিময়ে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকে যা আপনাকে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করতে পারে।
  • উদ্যোগী বিনিয়োগকারীঃ উদ্যোগী বিনিয়োগকারীরাও দূত বিনিয়োগকারীদের মতোই। তবে এরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চলমান কোনো ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করে।
  • গণ তহবিলঃ ভালো পরিকল্পনা এবং যথেষ্ট কাজ দিয়ে যে কারও কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এই তহবিল গঠন হয়- এটিই এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক।
  • সরকারী অনুমোদন এবং ঋণঃ ক্ষুদ্র ঋণদান প্রকল্প এবং বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসারে এই ঋণ প্রদান করে। অনেকেই আবারক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসারের লক্ষ্যে ঋণ এবং অনুমোদন প্রস্তাব করে থাকে।
  • ব্যাংক ঋণঃ ব্যাংক ঋণের দরজা সবসময়ই আপনার জন্য খোলা যদি আপনার ক্রেডিট -এর অবস্থা ভালো থাকে।

এভাবে বিভিন্ন উপায়ে অল্প পুঁজি দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার স্বপ্নের ব্যবসাটি। এজন্য আপনাকে হয়তো আরও কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি আত্নবিশ্বাসী এবং পরিশ্রমী হন এবং বিশ্বাস রাখেন নিজের ব্যবসা পরিকল্পনার উপর, কোনো কিছুই আপনার পথের বাঁধা হতে পারবে না। তাহলে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে আপনিই জয়ী হবেন। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment