সাবুদানার সদ্ব্যবহার
- ঋতুপর্ণা চাকী
সাবুদানা বা সাগুদানা নামটাতো আমাদের সবারই খুব চেনা। বর্তমানে এটি অমাদের দেশের প্রচলিত একটি খাবার। কিন্তু আপনি কি জানেন এই সাবুদানার মধ্যেই রয়েছে আমাদের শীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান?
প্রথমদিকে সাবুদানাকে ভাবা হতো শুধুমাত্র রোগীর পথ্য। কিন্তু বর্তমানে এই সাবুদানা জায়গা করে নিয়েছে মানুষের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায়। তবে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন থাকে, মূলত এই সাবুদানা কোথায় থেকে আসে। অনেকে ভাবেন, সাবুদানা হচ্ছে এক ধরনের ফল।
কিন্তু না! সাবুদানার মূল উপাদান হলো এক প্রকারের পাম গাছ। এই পাম গাছ সাধারণত ছয় থেকে সাত মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে অনেক সময় এই গাছ ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বাও হয়ে থাকে। আর সব থেকে অবাক করার মতো বিষয় হলো এই গাছে ২০ থেকে ২৫টির মতো পাতা হয়ে থাকে এবং এই গাছে মাত্র এক বারই ফুল ফোটে। একবার ফল ধরার পরই গাছটি মারা যায়। আর সাবুদানা পাওয়া যায় এই পাম গাছের কান্ডের নির্যাস থেকেই।
একটি পরিপূর্ণ পাম গাছ থেকে আমরা বছরে ১৪০ কেজি থেকে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত সাবুদানা পেতে পারি, অনেক ক্ষেত্রে এর কম বেশিও হতে পারে।
সাবুদানার পুষ্টি উপাদান
পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই সাবুদানা প্রোটিনের ভালো একটি উৎস। সাবুদানা পেশির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাবুদানাতে আছে যতেষ্ঠ পরিমাণ ফাইবার ও ক্যালসিয়াম। এ জন্য সাবুদানা এনার্জি বুস্টার হিসাবেও পরিচিত। সাবুদানার মধ্যে আরো রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি আমাদের দেহের ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। সাবুদানাতে আরো রয়েছে ৭.৫% প্রতিরোধী শর্করা। এই প্রতিরোধী শর্করা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
সাবুদানার মধ্যে আরো রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম।
সাবুদানার উৎপাদন
সাবুদানা মূলত উৎপাদিত হয় ইন্দোনেশিয়া, মালোয়েশিয়া, ফিজি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে। সাবুদানার চাহিদা সারা বিশ্বে বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সব দেশগুলোতে বেড়েছে এর উৎপাদনও। দেশগুলোর অর্থনীতিতে এখন সাবুদানা বড় ভূমিকা রাখছে।
সাবুদানার উপকারিতা
অসুস্থ ব্যাক্তিদের খাবার হিসাবে সাবুদানা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অন্যদিকে যে সব বাচ্চাদের ওজন কম তাদের খাদ্য তালিকায় সাবুদানা রাখা যেতে পারে। এতে দ্রুতই তাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে এবং তাদের ওজন অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আছে যা শিশুদের পেশি বিকাশে যেমন সাহায্য করে তেমনি শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
সুস্থ মানুষও খেতে পারে সাবুদানার বিভিন্ন রেসিপি। যেমন সাবুদানা দিয়ে তৈরি সাবুর খিচুড়ি, সাবুদানার ঘন ক্ষীর, সাবুদানার লাড্ডু, সাবুর বড়াতো আছেই।
এ বিষয়ে পুষ্টিবীদ ড. রঘুরাম চন্দের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সাবুদানা অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। এটি মুখের স্বাদ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। সাবুদানা হার্টের রোগের ঝুঁকিও কমায়। তাই এটি খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
সকল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকায় সাবুদানা এখন মানুষের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।