ক্যারিয়ার সহায়ক কোর্স
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
দেশে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের বাধা অতিক্রমের পর অনেকের স্বপ্ন থাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার। অনেক বিষয়ে পড়ার সুযোগ, মানসম্মত পড়াশোনা, আর্থিক সহজলভ্যতা ও সামাজিক নিরাপত্তা- সব মিলিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পছন্দের শীর্ষে থাকে অনেকের। সেই তালিকায় এখন এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন দেশও যুক্ত হচ্ছে। বাইরের নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেতে, বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে, চাকরি বা ব্যবসার জন্য অথবা নিছক আগ্রহের কারণেও অনেকে ভাষা শিখছেন। তবে প্রায় সবার লক্ষ্যই ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক! বিদেশে পড়াশোনা এবং ভালো ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা মনে হয় ভাষা। এর সঙ্গে আছে জিআরই বা জিম্যাট পরীক্ষা। তবে এসব পরীক্ষায় ভালো করলে ভর্তির শতভাগ নিশ্চয়তা তো থাকছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তি-উপবৃত্তির সুযোগও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, লক্ষ্য ঠিক রেখে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলে অবশ্যই ভালো ফল অর্জন করা সম্ভব। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে অবশ্য শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস প্রয়োজন হয়।
বাড়তি কী?
জিপিএ-৫, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ সবই আছে আপনার। তবু প্রতিযোগিতার বাজারের দরকার পড়ে অন্য কিছুর। কিংবা বাড়তি কিছুর। এই অন্য কিছু এবং বাড়তি কিছুটাই হচ্ছে বিদেশি ভাষা। নিজের ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিকে ছাড়া তৃতীয় ভাষা যদি জানা থাকে, সেটাই হয়তো আপনাকে আরও এগিয়ে দেবে।
আইইএলটিএস : ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষার নাম- IELTS|। এর পূর্ণ রূপ International English Language Testing System, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া বা কাজ করতে যেতে চান তাদের ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা প্রমাণের জন্য IELTS পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
জিম্যাট : গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট বা জিম্যাটে মোট ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা নেওয়া হবে। অ্যানালাইটিক্যাল রাইটিং ৩০ মিনিট, ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ৩০ মিনিট, ভারবাল ৭৫ মিনিট ও কোয়ান্টিটেটিভ ৭৫ মিনিট।
জিআরই : গ্র্যাজুয়েট রেকর্ডস এক্সামিনেশনস বা জিআরই হলো কম্পিউটার অ্যাডাপটিভ পরীক্ষা অর্থাৎ কম্পিউটারে বসেই পরীক্ষা দিতে হবে। ২০১১ সালে এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু বদল আনা হয়েছে। যেমন এখন থেকে এতে কোনো প্রশ্ন বাদ দিয়ে পরের প্রশ্নে এগিয়ে যাওয়া যাবে। পরে সময় থাকলে আবার সেই প্রশ্নে ফিরে আসা যাবে। পুরো পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এতে ৬টি বিভাগ থাকে। প্রতি বিভাগের পর এক মিনিট বিরতি দেওয়া হবে। দুটি ভারবাল রিজনিং, দুটি কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং, একটি গবেষণামূলক এবং একটি লিখিত অংশ।
প্রস্তুতি পর্ব
এই পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী নিজেকে প্রস্তুত করে গড়ে তোলার জন্য চাইলে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। পরীক্ষাগুলোয় ভালো ফলের জন্য ব্যারনস, কাপলান, প্রিন্সটন ইত্যাদি বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক সহায়তা প্রদান করে। তবে সবকিছুর বাইরে একজন শিক্ষার্থীকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হন।
ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট
যে ভাষা শিখবেন সেই দেশে ‘ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে পড়াশোনাও করে নিতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন দোভাষী হিসেবে কাজ করতে পারবেন, তেমনি সেই দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে পারবেন অনায়াসে।
বিদেশি ভাষা সব সময়ই কাজ ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই বিদেশে যাওয়ার আগে সেই দেশের ভাষা জানা থাকলে সহজেই ভালো ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারবেন।
ভাষা শিক্ষার পাঠশালা
ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। তবে এই ক্ষেত্রে আপনাকে চোখ-কান খোলা রেখে প্রতিষ্ঠান বাছাই করতে হবে।
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য তিন মাসের শর্ট কোর্সসহ জুনিয়র, সিনিয়র, ডিপ্লোমা নানা ধরনের কোর্স রয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল : ফুলার রোড, এখানে আছে ব্রিটিশ কাউন্সিল রিসোর্স সেন্টার। ভেতরে বড়সড় লাইব্রেরি, মুভি কালেকশন, তথ্যকেন্দ্র এবং সাজানো-গোছানো মনোরম ক্যাফেটারিয়া। বাইরের রাস্তাও নিরিবিলি। চমৎকার ও মনোরম এই পরিবেশে ভাষা শিখে নিতে পারেন।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ : ক্যাফে লা ভ্যারান্ডা। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের এই আকর্ষণীয় ও মুগ্ধকর ক্যাফেটেরিয়ায় বসে ফ্রান্স ভাষার চর্চা শুরু করতে পারেন। সম্পূর্ণ ফ্রান্সের এনভায়রনমেন্ট অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে এই ক্যাফেটারিয়াটি। অসাধারণ বললে কম বলা হয়। ব্যাকগ্রাউন্ড কোয়ালিটি মিউজিক, হালকা আলো, মনোমুগ্ধকর সি্নগ্ধতার ছোঁয়া আপনাকে মনোযোগী ছাত্র করে তুলবে।
গ্যেটে ইনস্টিটিউট : যেতে পারেন ধানমণ্ডির জার্মান কালচারাল সেন্টার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে। এ ছাড়াও শহরে একটু চোখ মেলে তাকালেই পেয়ে যাবেন ভাষা শেখার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ভাষা শেখার পাশাপাশি এসব সেন্টারে ফিল্ম মেকিং, ফটোগ্রাফি, ড্যান্সসহ নানারকম ইভেন্ট থাকে। সেসবেও মন দিতে পারেন।
এ ছাড়াও ভাষা শেখার জন্য আরও রয়েছে জাপানিজ কালচারাল সেন্টার, ব্র্যাক ইনস্টিটউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ, ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার ইত্যাদি। চীনা ভাষা শিখতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া ইন্টারনেটে ভাষা শেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই, ভিডিও এবং অডিও পাওয়া যায়। তাই ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা সম্পর্কে জানা এখন অনেকটাই সহজ।
ক্যারিয়ার
বিদেশি ভাষা শিখে আপনি দেশেও পেয়ে যাবেন অসংখ্য কাজ। আর বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির জন্য বিদেশি ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কলারশিপ কিংবা বাইরে ক্যারিয়ারের জন্যও ভাষার বিকল্প নেই। তাই চাইলে আজই নিজেকে বিদেশি ভাষা শেখার মনোযোগী ছাত্র হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন।