মন্দায় রাশিয়ার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংকট বাড়ছে
দি প্রমিনেন্ট ডেস্ক: ব্যবসায়ীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে মস্কোয় প্রতিষ্ঠা করা হয় গেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। কিন্তু যখনই এ পার্ক পুরোদমে চালু করা হয় এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে, ঠিক সে সময়ই ইউক্রেন সংকট ঘিরে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। এর সঙ্গে যোগ হয় তেলের কম দাম। সংবাদ: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস
পার্কটির মালিক প্রতিষ্ঠান রেডিয়াস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস ভ্যান রিয়েট আগে যখন দর্শনার্থীদের পার্কটি ঘুরিয়ে দেখাতেন, তখন তিনি পার্কটি আরো বড় করা নিয়ে তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলতেন। কিন্তু ২০০৯ সালের পর অর্থনৈতিক মন্দায় পড়া রাশিয়ায় শুধু পার্কটি যেন চালু থাকে, তিনি সেটাই চান। এই পরিস্থিতিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির ব্যবসায়ীরা। শিগগিরই এ সংকট দূর হবে এমনও কোন আভাষ নেই।
গত ১২ মাসে ডলারের বিপরীতে রুবলের মান কমেছে ৪৪ শতাংশ। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভও প্রায় শেষ হয়ে আসছে। মস্কো ও এর আশপাশে প্রচুর ব্যবসায়িক জায়গা খালি পড়ে রয়েছে এবং ভাড়াও কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে বর্গফুট প্রতি ৪ হাজার ৬০০ রুবলে (৭১ ডলার)।
বাণিজ্যিক আবাসন সেবাদানকারী কোম্পানি সিবিআরইর শিল্প বিভাগ ও পণ্যাগারের পরিচালক অ্যানটন অ্যালিবিয়েভ বলেন, ২০০৯ সালের সংকটের সময় ৯৯ শতাংশ চুক্তি হতো ডলারে, আর এখন ৯০ শতাংশ চুক্তি হয় রুবলে।
তবে ভাড়া হ্রাসের সুযোগ নিতে অনেক কোম্পানি আরো সস্তা অথবা উন্নত পণ্যাগার ভাড়া নিচ্ছে। অ্যালিবিয়েভ বলেন, আমরা এখন একটি খুব সক্রিয় বাজারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যে কার্যক্রমের বেশির ভাগই হচ্ছে স্থানান্তর।
রাশিয়ার চলমান সংকটের অন্যতম বড় প্রভাব পড়েছে নতুন গাড়ি বিক্রির ওপর। অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোপিয়ান বিজনেস বলছে, ২০১৫ সালের প্রথম সাত মাসে রাশিয়ার নতুন গাড়ি বিক্রি কমেছে ৩৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে জেনারেল মোটরস ৫০ হাজার স্কয়ার মিটারের একটি যন্ত্রাংশ বিতরণ কেন্দ্র খোলার ঘোষণা দিয়েছি। অথচ এক মাস পরই রাশিয়ার বাজার থেকে বেশির ভাগ ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাশিয়ার পারিবারিক আয় কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৪ সালের শেষ থেকে দেশটির পারিবারিক আয়ে পতনের সূচনা হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ১৫ বছরের শাসনকালে প্রথমবারের মতো পারিবারিক আয় কমছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলো থেকে খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে দেশটিতে কার্যক্রম চালানো সুপারমার্কেট চেইনগুলোকে এখন স্থানীয় সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য আশাবাদ সৃষ্টি হলেও চীনের ইউয়ানের মান পতন ও কমতে থাকা তেলের দামের নেতিবাচক প্রভাব কত দিন দেশটির অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি’স এরই মধ্যে সতর্ক করে বলে দিয়েছে, আগামীতে রাশিয়ার মন্দা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সত্য হলে ২০১৬ সালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের যে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা ধুলোয় মিশে যাবে।