চলো, নতুন পৃথিবীর জন্য লড়াই করি : চার্লি চ্যাপলিন

চলো, নতুন পৃথিবীর জন্য লড়াই করি : চার্লি চ্যাপলিন

ইতিহাসের অন্যতম সেরা কমেডিয়ান এবং নির্মাতা তিনি। পৃথিবী তাকে চেনে নির্বাক অভিনেতা হিসেবে। কোনো সংলাপ ছাড়াই শুধু অনবদ্য অঙ্গভঙ্গি দিয়েই মানুষকে হাসাতেন। হাসানোর ফাঁকে ফুটিয়ে তুলতেন সমাজের অসঙ্গগতি, মানুষের বেদনা আর অপ্রকাশিত আর্তনাদ। তিনি চার্লি চ্যাপলিন। তার সম্পর্কে সত্যজিত রায় বলেন,‘যদি একটি নাম বেঁছে নিতে হয় যিনি সিনেমার প্রতীক স্বরূপ তবে সেই নামটি হলো চার্লি চ্যাপলিন।’ ১৮৮৯ সালে তিনি জন্মগ্রহন করেন। একই সালে পৃথিবীতে জন্ম হয় ফ্যাসিবাদী হিটলারের। চ্যাপলিন ১৯৪০ সালে নির্মান করেন ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। হিটলারকে এবং হিটলারের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডকে ব্যঙ্গ করে অসীম ঝুঁকি নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন এই সিনেমাটি। এই সিনেমায় দেখা যায় চ্যাপলিন স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছেন। ৭৫ বছর আগের সেই বক্তৃতা এখনো সমকালীন সমাজের ব্যবস্থার সাথে প্রাসঙ্গিক। চ্যাপলিনের বিখ্যাত সেই ভাষনটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন মো. সাইফ


‘যদি একটি নাম বেঁছে নিতে হয় যিনি সিনেমার প্রতীক স্বরূপ তবে সেই নামটি হলো চার্লি চ্যাপলিন।'
‘যদি একটি নাম বেঁছে নিতে হয় যিনি সিনেমার প্রতীক স্বরূপ তবে সেই নামটি হলো চার্লি চ্যাপলিন।’

আমি দুঃখিত! আমি সম্রাট হতে চাইনা। সেটা আমার কাজও নয়। কাউকে শাসন কিংবা কাউকে জয় করতে চাইনা আমি। আমি সাহায্য করতে চাই যদি সম্ভব হয় ইহুদি, বিধর্মী, কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ সহ সবাইকে। আমরা সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে চাই। মানুষ আসলে এমনই। দুঃখ দুর্দশা নয় বরং আমরা একে অপরের সুখে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা কাউকে ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞা করতে চাই না। এই পৃথিবীতে সবার জন্যই জায়গা রয়েছে এবং বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবী সবাইকে জায়গা করে দিতে পারে। বেঁচে থাকার পথ মুক্ত এবং সুন্দর কিন্তু সে পথ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

লোভ মানুষের আত্মাকে বিষাক্ত করেছে, পৃথিবীকে আবদ্ধ করে দিয়েছে ঘৃণায় আর আমাদেরকে নিয়ে গেছে দুর্দশা এবং রক্তপাতের দিকে। আমরা গতিময় করেছি জীবন কিন্তু আমাদের স্বত্তাকে করেছি বন্দী। আমাদের জ্ঞান আমাদেরকে হতাশ করে তুলছে। চতুরতা খুবই কঠোর এবং নির্দয় করেছে আমাদের। আমরা অনেক কিছুই চিন্তা করি কিন্তু অনুভব করি খুবই সামান্য। যান্ত্রিক হওয়ার চেয়ে আমাদের মানবিক হওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন। চতুরতার চেয়েও আমাদের বেশি দরকার দয়ালু ও ভদ্র হওয়া। এইসব গুণাবলী ছাড়া জীবন সহিংসতাপুর্ণ হবে এবং হারিয়ে যাবে।

উড়োজাহাজ এবং বেতার আমাদের পারস্পরিক দুরত্ব কমিয়েছে। এইসব আবিষ্কারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সকলের মাঝে একতার লক্ষ্যে মানুষের মধ্যে ভালো কিছু গড়ে তোলা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা। যারা আমাকে শুনতে পাচ্ছো তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-হতাশ হয়ো না। আমাদের উপর এখন যে দুর্দশা সেটা লোভ এর বহিঃপ্রকাশ, কিছু মানুষের তিক্ততার ফল যারা মানুষের অগ্রগতি দেখে ভয় পায়। মানুষের ঘৃণার অবসান ঘটবে, স্বৈরশ্বাসকের পতন হবে, জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের কাছে ফিরে যাবে। এভাবে মানুষ যতদিন মারা যাবে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ততদিন মরবে না।

সৈনিকরা!! তোমরা নিজেদেরকে বর্বরদের কাছে বিকিয়ে দিও না-যারা তোমাদের অবজ্ঞা করে, দাস করে রাখে, জীবনের স্বাধীনতাকে বন্দী করে রাখে, যারা তোমাকে বাধ্য করে বলতে কী করতে হবে, কী চিন্তা করতে হবে এমনকি কী অনুভব করতে হবে সেটাও! যারা তোমাদের চালায়, নিয়ন্ত্রণ করে, গবাদিপশুর মতো আচরণ করে এবং ব্যবহার করে কামানের মুখে বিপজ্জনক কাজে। তোমরা নিজেদের এইসব অস্বাভাবিক মানুষের হাতে তুলে দিও না-যারা যান্ত্রিক মানুষ, পাশাপাশি তাদের মন এবং হৃদয় ও যান্ত্রিক। তোমরা যন্ত্র নও! তোমরা গবাদি পশুও নও! তোমরা মানুষ। তোমার মধ্যে আছে মানবতার প্রতি ভালবাসা! তোমরা ঘৃণা করতে পারো না। প্রেমহীনরাই শুধুমাত্র ঘৃণা করবে-ভালবাসাহীন এবং অস্বাভাবিক তারা। সৈনিকরা !! তোমরা দাসত্ব নয়, যুদ্ধ করো স্বাধীনতার জন্য।

সেন্ট লুক এর ১৭তম অধ্যায়ে লিখা আছে, ‘সৃষ্টিকর্তার রাজ্য মানুষের মাঝেই রয়েছে।’ একটি মানুষ কিংবা একটি জাতি নয় বরং সকল মানুষের মাঝে। তোমাদের মাঝে! জনগণ, ক্ষমতা আছে তোমাদের হাতে-যন্ত্র তৈরি করার ক্ষমতা, সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা! তোমরা, এই জনতারই ক্ষমতা আছে, মুক্ত ও সুন্দর জীবন গড়ার, জীবনের যাত্রাকে আনন্দময় দুঃসাহসিক করে গড়ে তোলার।

এসো, গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা ব্যবহার করি, আমরা একত্রিত হই সবাই। চলো সবাই একটি নতুন পৃথিবীর জন্য লড়াই করি, একটি সভ্য পৃথিবী যেখানে মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে,যেখানে একটি তরুনকে সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে দিবে,যেখানে বয়স্ক ব্যক্তিরা নিরাপত্তা পাবে। এসব বলেই চেতনাহীন নরপশু গুলো ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু তারা মিথ্যে বলেছে! তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। কোনোদিন করবেও না!

charlie_chaplin_by_shadagishvili-d49ngo6স্বৈরশাসকরা নিজদেরকে মুক্ত করে রেখেছে কিন্তু মানুষকে বানিয়ে রেখেছে দাস। চলো এবার আমরা সেই প্রতিশ্রুতি পূরনের লক্ষ্যে লড়াই করি! জাতিগত বাঁধা দূরে সরিয়ে,লোভ এর সাথে সাথে ঘৃণা এবং অসহ্যতাকে দূরে সরিয়ে চলো আমরা পৃথিবীকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করি! এসো লড়াই করি একটি যুক্তিবাদী পৃথিবীর জন্য,যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রগতি মানুষকে নিয়ে যাবে সুখের দ্বারপ্রান্তে।।.
সৈনিকেরা !! গণতন্ত্রের জন্য চলো সবাই এক হই!

সূত্র : চার্লি চ্যাপলিনের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট। favicon594

Sharing is caring!

Leave a Comment