স্টিভ জবসের শেষ চিঠি
- লিডারশিপ ডেস্ক
স্টিভ জবসকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তিনি যে টেকনোলজির বরপুত্র, তাঁর হাত ধরেই বদলে গেছে তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়া, মৃত্যুকালে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি-এসব তথ্য মোটামুটি সবারই জানা। কিন্তু স্টিভ জবস মৃত্যুর আগমুহূর্তে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে লিখেছিলেন এক অমর চিঠি, তা কি সবাই জানি? সেই চিঠি পরে জাপানি, চায়নীজ, হিন্দি, উর্দু, আরবী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, রুশসহ প্রায় আঠারোটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়; শিশুদের মানসিক উৎকর্ষতা বিধান এবং তাদের সুন্দর মনন গঠনের লক্ষে একাধিক ভাষায় স্টিভ জবসের সেই অমর চিঠিসহ তাঁর জীবনী বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
কী ছিল সেই চিঠিতে? জবস লিখেছেন:
বাণিজ্যিক দুনিয়ায় আমি সাফল্যের একেবারে সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছি। যা আপনাদের কাছে সাফল্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। কিন্তু এ কথা ধ্রুব সত্য, কাজের বাইরে আমার সামান্যই আনন্দ ছিল। সম্পদের প্রলোভনে বিভোর ছিলাম সারা জীবন। আজ মৃত্যুশয্যায় শুয়ে যখন জীবনটাকে দেখি, তখন আমার মনে হয়, আমার সব সম্মান, খ্যাতি আর অর্জিত সম্পদ আসন্ন মৃত্যুর সামনে একেবারেই ম্লান, তুচ্ছ আর অর্থহীন। অ্যাপলের বিশাল সাম্রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রনে ছিল, কিন্তু মৃত্যু আজ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি অন্ধকার কবরে শুয়ে আছে সেটা আদৌ কোনো বড় ব্যাপার না। প্রতি রাতে নিজের বিছানায় শোয়ার আগে ভাবতাম, সারাদিন কী করলাম সেটাই আসল ব্যাপার। এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে অন্ধকার রাতে জীবনরক্ষাকারী মেশিনের সবুজ বাতিগুলোর দিকে চেয়ে আমার বুকের গহীনে হাহাকার করে ওঠে। মেশিনের শব্দের ভিতরে আমি নিকটবর্তী মৃত্যু দেবতার নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনুধাবন করতে পারি-শুধু সম্পদ না, সম্পদের সাথে সম্পর্কহীন জিনিসেরও মানুষের অন্বেষণ করা উচিত।
নির্বোধের মতো সম্পদ আহরণই সবকিছু নয়- আরো অনেককিছু মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর তা হলো- মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করা, সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করা আর তারুণ্যে একটি সুন্দর স্বপ্ন নিজের হৃদয়ে লালন করা। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটলেই মানুষ আমার মতো এক ভ্রান্ত মানুষে পরিণত হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার হৃদয়ে ভালবাসা অনুভব করার জ্ঞান দিয়েছেন। কেবলমাত্র এই নশ্বর দুনিয়ায় সম্পদের মোহে জড়িয়ে পড়ার জন্য নয়। এই যে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছি। কই, সব সম্পদ তো এই বিছানায় নিয়ে আসতে পারিনি। শুধু আজ সাথে আছে ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতার স্মৃতিগুলো। এগুলোই শুধু সাথে থেকে সাহস যোগাবে, আলোর পথ দেখাবে। ভালোবাসা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে- সম্পদ না খুঁজে ভালোবাসা খুঁজে নিতে হয়। সম্পদ কখনো শান্তি আনে না। মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসাই শান্তি আনে। পৃথিবীটাকে দেখুন। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটে হাহাকার করলে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেন না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী বিছানা কি জানেন? তা হলো- হাসপাতালের মৃত্য শয্যা। আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি একজন গাড়ি চালক রাখতে পারেন। আপনার নিযুক্ত কর্মচারীরা আপনার জন্য অনেক টাকাই আয় করে দিবে। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় সত্য গোটা পৃথিবী চষে, পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়ে দিলেও একজন মানুষও পাবেন না যে আপনার রোগ বয়ে বেড়াবে।
বৈষয়িক যে কোনো জিনিস হারালে আপনি পাবেন। কিন্তু একটা জিনিসই হারালে আর পাওয়া যায়না তা হলো মানুষের জীবন। মানুষ যখন অপারেশান থিয়েটারে যায় তখন সে কেবলই অনুধাবন করে- কেন জীবনের মূল্যটা আগে বুঝিনি! জীবনের যে পর্যায়েই আপনি আজ থাকুন না কেন- মৃত্যু পর্দা আপনার জীবনের সামনে হাজির হবেই। সাঙ্গ হবে জীবন। তাই, এই নশ্বর জীবনের পরিসমাপ্তির আগে পরিবারের জন্য, আপনজনের জন্য, বন্ধুদের জন্য হৃদয়ে সবসময় ভালোবাসা রাখুন। নিজের জীবনটাকে ভালোবাসুন। ঠিক নিজের মতো করে অন্যকেও।