সাকিব আল হাসান কি জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলেন?
- লিডারশিপ ডেস্ক
সম্প্রতি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের একটি বক্তৃতার অংশবিশেষ ইন্টারনেটে বিপুল আলোচিত হয়েছে। ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে সহস্রাধিকবার। ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও জাতীয় সংহতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেছেন তিনি।
আমি বললাম, আমাদের একজন এমপি আছেন। সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। খুব ভালো গান করেন। তো উনি গান করতে কত টাকা নেন, আপনি জানেন? বললেন, ‘না, আমার তো কোনো ধারণাই নেই।’ আমি বললাম, আমার আছে। কারণ ওনার সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আপনার সঙ্গে যদি খুব ভালো বন্ধুত্ব থাকে, তাহলে মোটামুটি পাঁচ লাখ টাকায় রাজি হতে পারেন। আর যদি না থাকে তাহলে ১০ লাখ টাকা। আর যদি বিদেশে নিয়ে যান তাহলে ২৫ লাখ টাকা। আমি ধরে নিলাম যে সবার সঙ্গেই ওনার বন্ধুত্ব, উনি পাঁচ লাখ টাকা করেই নিচ্ছেন এবং মাসে ১০টা অনুষ্ঠান করেন। তাহলে কত টাকা পাবেন? ৫০ লাখ টাকা। কেউ কি জিজ্ঞেস করেন যে মমতাজ বেগম, আপনি কী পাস করেছেন?
তো আমি বললাম যে আসলে পয়সা তো নানাভাবে আয় করা যায়। তাঁর জন্য যে সব সময় আপনাকে মহাপণ্ডিত হতে হবে—এমন কোনো কথা নয়। আমি বলছি না যে আপনার ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে তাকে ক্রিকেট খেলতে নামিয়ে দেন। সাকিব আল হাসান তো ভালো লেখাপড়া জানা ছেলে, আমি জানি। কিন্তু কথাটা হলো আপনারা যেভাবে দেখছেন, জীবনটা এ রকম নয়। আমি আরও বললাম, আমাদের একজন বিখ্যাত শিল্পী আছেন কাইয়ুম চৌধুরী। মারা গেছেন কিছুদিন আগে। তাঁর একটা তেলরঙের পেইন্টিংয়ের দাম ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। কেউ তো খোঁজ করেননি কাইয়ুম চৌধুরী কী পাস করেছেন? সুতরাং মানুষের মেধার বিকাশ নানাভাবে হতে পারে। আমাদের সন্তানদের মধ্যে কিন্তু আমরা সেই সম্ভাবনাগুলো দেখার কোনো চেষ্টা করি না। আমরা শুধু পাস, ভালো রেজাল্ট চাই।
ক্লাসে তো একটা ছেলে ফার্স্ট হবে, একটা ছেলে সেকেন্ড হবে। তাই বলে যারা ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড, ফোর্থ—এগুলো হবে না, তাদের আমরা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেব? আমি তো বুঝতে পারি না! তাঁদের দিয়ে আর কিছু হবে না? আমি জানি না জামান ভাই (অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান) কত ভালো ছাত্র ছিলেন। তবে আমি ছিলাম না।
তো যা-ই হোক, আমি তারপর আবারও সেই ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, আপনি আইনস্টাইনের ছবি দেখেছেন? মহাবিজ্ঞানী, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলা হয় তাঁকে।’ বলেন যে, ‘না, আমি দেখিনি।’ লক্ষ করে দেখবেন, উনি যেখানেই যেতেন ওনার হাতে একটা ছোট্ট বাক্স থাকত। এবং সেই বাক্সটার মধ্যে কী থাকত জানেন আপনারা? একটা ভায়োলিন থাকত, একটা বেহালা! অত বড় একজন বিজ্ঞানী, তার যদি বেহালা শেখার সময় হয়ে থাকে, বেহালা বাজানোর সময় হয়ে থাকে, তাহলে আমরা এমন কী পণ্ডিত হয়েছি যে আমাদের একটু গান করার সময় হবে না? একটা কবিতা পড়ার সময় হবে না, একটা ছবি আঁকার সময় হবে না?
আমরা তো ছেলেমেয়েদের সেই সুযোগগুলো দিচ্ছি না। সেই জন্যই বলছি, আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জায়গাটা নতুন করে ভাবা দরকার। চিন্তাভাবনা করা দরকার। এটা ছিল একসময়। এটা কী করে যেন আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেল। আমরা এখন শুধু পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্থ করাচ্ছি। আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এটাও তার একটা বড় কারণ বলে আমার মনে হয়। আপনারা এখানে বিজ্ঞজনেরা আছেন, শিক্ষক আছেন, মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছেন। আপনারা সবাই ভাববেন যে আমরা এটা নিয়ে কী কাজ করতে পারি। কীভাবে আমাদের সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে, মানুষ হিসেবে, বাঙালি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। (সংক্ষেপিত)
সূত্র: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইউটিউব চ্যানেল।