স্বপ্নের সাথে আপোষ করতে রাজি নই : আমির খান
- লিডারশিপ ডেস্ক
আমার কাছে কখনোই এটা মনে হয় না যে আমি কাউকে উপদেশ দেব কীভাবে তার জীবনযাপন করা উচিত। কারণ আমি ধারণা প্রতিটা মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ রয়েছে, রয়েছে জীবনযাপনের নির্দিষ্ট ছক। আমি মনে করি, প্রতিটা মানুষই জানে নিজের জীবন থেকে সে কী চায় আর সেভাবেই সে জীবনযাপন করে বলে আমার বিশ্বাস। দিনের শেষে সবাই নিজের রাস্তা মানুষ নিজেই তৈরি করে নেয়।
আমি এই তরুণসমাজকে যা বলতে পারি সেটা হল আমার নিজের কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার স্বপ্ন। প্রকৃতপক্ষে আমি যখন যেটাই করি খুবই মনোযোগের সাথে করি। সেটা আমার অভিনয় অথবা পরিচালনা যেটাই হোক। কাজের সময় আমার সকল ধ্যান-জ্ঞান থাকে আমার কাজ। কারণ আমি জানি আমার কাজই আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে সহায়তা করবে আর আমি কোনোভাবেই আমার স্বপ্নের সাথে আপোষ করতে রাজি নই। সে কারণে আমাকে যদি অনেক সমালোচনা শুনতে হয় আমার তাতে আপত্তি নেই। আমি শুধু আমার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনো বাধা রাখতে চাই না।
আমাকে প্রথম থেকেই অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে এতো কম সিনেমায় অভিনয় করার জন্য। অনেকেই বলেছেন আমি হয়তো এই প্রতিযোগিতাময় সিনেমার জগতে টিকতে পারবো না। এমনকি ধীরে ধীরে আমি যখন আমার কাজের ধরন পরিবর্তন করলাম তখন আরও তীক্ষ্ণ সমালোচনার শিকার হলাম। আমি ভিন্ন ধারার কাজ শুরু করার পর থেকে সিনেমার সংখ্যা আরও কমিয়ে দিয়েছি। বছরে ৩টার জায়গায় একটা করে সিনেমা করা শুরু করলাম। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অন্যান্য মানুষের সমালোচনার সাথে সাথে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছ থেকেও নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া শুরু করলাম। এটা আমি বুঝি যে তারা আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, কিন্তু তাই বলে আমি আমার ধ্যানধারণার বাইরে যাইনি। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম সবসময়। এমনকি যখন আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি
গ্র্যাজুয়েশন শেষ না করেই ফিল্ম মেকিংয়ের ওপর পড়াশোনা করবো তখন আমার বাবা-মা পর্যন্ত ভয় পেয়েছিলেন। সবাই আমাকে একটাই উপদেশ দিয়েছিলেন যাই করি না কেন আমি যেন আমার স্নাতক শেষ করি। আমার হাতে যাতে আমার গ্রেডশিট থাকে। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন ছিল আমি কী জানি অথবা কী জানি না সেটা নির্ধারণ করার পরিমাপক একটা গ্রেডশিট কীভাবে হয়? প্রতিটি মানুষের সকল শক্তি লুকিয়ে আছে তার জ্ঞানের মাঝে। আমি জানি আমি কী করতে পারবো আর আমার জ্ঞানের পরিধি কতটুকু। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল। তাই আমাকে যতই সাবধান করা হোক না কেন আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। কারণ আমি মনে করি প্রতিটা মানুষই ভুল করে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে। মানুষ মাত্রই ভুল করবে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই এবং আমার ভুল করাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি অন্য কারো সিদ্ধান্তে নয়, নিজের সিদ্ধান্তে ভুল করে সেখান থেকেই শিখতে চাই এবং আমি আমার ভুল থেকেই সবচেয়ে বেশি শিখেছি। পেছনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। দিনের শেষে আমি সফল, এই ভাবনা আমার আনন্দের উৎস নয়। বরং, আমার আনন্দ এখানেই যে আমি আমার অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম সবসময়। আর আমার সাফল্যের মূলমন্ত্রও এটি।
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আমার জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী সিনেমা কোনটি? আমি বলবো কোনটিই না। বরং ‘সত্যমেভ জয়তে’ আমার জীবনের মোড় পরিবর্তনের পেছনে বিশাল ভূমিকা রাখে। আমি সবসময়ই পত্রিকা পড়তাম, খবর শুনতাম আর নিজের ভেতরে নিজেই বিরক্ত হতাম এই ভেবে যে আমি কি এই দারিদ্র্য পীড়িত, অসহায় অথবা অন্যায়ের শিকার মানুষগুলোর জন্য কিছুই করতে পারি না? সব কিছু কি আমার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে? কিন্তু যখন এই অনুষ্ঠান করা শুরু করলাম তখন নিজের মধ্যেই অন্যরকম এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। আমি বলবো আমি এই অনুষ্ঠান করি অন্যদের সাহায্য হয় বলে নয়, আমার নিজের ভেতরে প্রশান্তি অনুভব করি দেখে। আমি এই তরুণসমাজকেও বলবো, অন্য কারো জন্য কাজ করার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে এবং এই আনন্দ অন্য কোনো কিছুর সাথে তুলনা করার মতো নয়। তাই নিজের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারো মানুষের জন্য কাজ করো।
(মি. পারফেকশনিস্ট বলে পরিচিত বলিউডের অভিনেতা আমির খান ২০১৪ সালে ইয়ং ইন্সপিরেটরস নেটওয়ার্ক এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বর্তমান তরুণসমাজের জন্য কিছু অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যটির চুম্বক অংশ অনুবাদ করেছেন ইশরাত বিনতে আফতাব ।)