‘যেখানে ভর্তি হতে পারলাম না, সেখানে আমি চ্যান্সেলর’
-
মো. আবদুল হামিদ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পদাধিকারবলে তিনি বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। আজ শনিবার (৪ মার্চ )ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ৫০তম সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এই বক্তব্য দেন।
আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরে কিছু বলতে চাই। নিজের কাছেই অবাক লাগে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। আমি ম্যাট্রিক থার্ড ডিভিশন। আইএ পাশ করছি এক সাবজেক্ট… লজিকে রেফার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আসলাম ভর্তি হওয়ার জন্য…তখন ভর্তি তো দূরের কথা, ভর্তির ফরমটাও আমাকে দেয় নাই। বন্ধু-বান্ধব অনেকে ভর্তি হইলো, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে তখন আমি যুক্ত। ভর্তি যখন হইতে পারলাম না, তখন দয়ালগুরুর কৃপায় গুরুদয়াল কলেজে (কিশোরগঞ্জে) ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম।
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতাম। প্রায়ই ঢাকা আসতে হত। বিভিন্ন হলে থাকতাম। এমন কোনো হল নাই তখনকার সময়ে যেখানে ঢুকি নাই। অবশ্য রোকেয়া হলে ঢুকি নাই। তবে রোকেয়া হলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলাম।
বন্ধু-বান্ধব যারা পড়তো তারা কনভোকেশন ক্যাপ-গাউন পরত। আমাদের কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তবে সমাবর্তনে আমাদের ডাকা হত না। যারা অনার্স-মাস্টার্সে ছিল, তাদের ডাকা হতো। কনভোকেশনে ক্যাপ-গাউন পরার খায়েস ছিল।
কিন্তু আল্লাহর কী লীলা খেলা বুঝলাম না, যেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হইতে পারলাম না, সেইখানে আমি চ্যান্সেলার হইয়া আসছি। বাংলাদেশে যতগুলি পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সবগুলির আমি চ্যান্সেলর। প্রায়ই সমাবর্তনে যেতে হয়। দেড়-দুইঘণ্টা ক্যাপ-গাউন পরে থাকতে হয়। আর এর মধ্যে বাতাসই ঢুকতে পারে না। গরম যখন থাকে তখন অবস্থা কাহিল।
যাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছি তাদেরকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। বক্তা যখন বক্তব্য দেয় তখন অডিয়েন্সের চেহারা দেখে বোঝা যায় তারা বক্তব্য গ্রহণ করেছে নাকি রিজেক্ট করছে। এখানে কিছুই আমি দেখি না। এত বেশি ফ্লাড লাইট এখানে (স্টেজে) দেওয়া হয়েছে… বেশি বেশি লাগে। এটা আলো আর আঁধারের একটা খেলা।
আমি ছাত্র রাজনীতি করছি। মহকুমার ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম। কলেজের ভিপি-জিএস ছিলাম। তখন ছাত্রদের সাথে আমরা এমনভাবে চলছি..ভালোভাবে চলছি যাতে তারা আমাকে ভোট দেয়। যারা ভর্তি হতে আসতো তাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে, তাদের ফরমও ফিলাপ করে দিতাম।
নিজের কথা কি বলব, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়াই, বিয়া একখান কইরা ফালাইছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির বয়স ৪৫-৫০ বছর। এই যদি বয়স হয়…। ২৫-২৬ বছর বিয়ার বয়স ধরা হয়। ২৫ বছরে কেউ যদি বিয়া করে, তাহলে ৫০ বছর বয়সে তার এক সন্তানেরই তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা। বাপ-পুত মিলাই ইউনিভার্সিটিতে থাকার কথা। বাপ নেতা আর ছেলে ছাত্র। এটা হইতে পারে না।
এই ছাত্র রাজনীতি যারা করে, তাদের রেগুলার ছাত্র হতে হবে। ৫০ বছর বয়সে যদি নেতৃত্ব দেয়, তাহলে যারা পড়ে তাদের সঙ্গে এডজাস্টমেন্ট হবে না। সুতরাং ডাকসু নির্বাচন ইজ অ্যা মাস্ট। নির্বাচন না হলে তাহলে ভবিষ্যত নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।
এখন বলতে পারেন, কিছুদিন আগে রেলমন্ত্রী বিয়া করছেন। এটা রেয়ার কেস। অসময়ের কিছু সবসময় ভালো হয় না। মৌসুমের কাঁঠাল যে মজা লাগে পরের কাঁঠাল এত মজা লাগে না।
ছাত্র খারাপ ছিলাম ঠিকই। বিএ পরীক্ষার সময় দুইবার জেলে ছিলাম। পরীক্ষা দিতে পারি নাই। বাড়ির লোকজন কথা বলে। চিন্তা করলাম… আইয়ুব খান-মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন তুঙ্গে। কিশোরগঞ্জে বিরাট জনসভা। বললাম, ভাইসব যতদিন আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে যাবে না ততদিন পর্যন্ত আমি বিএস পাস করতে চাই না।
আজকে একটু গলা বসে গেছে না হলে আরও কিছু বলতাম। আমরা প্রেমপত্র লিখতাম… তখন বিভিন্ন বই থেকে দেইখা কোটেশন তুইলা…এখন প্রেমপত্রও লেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মেসেজ। প্রেমপত্র লেখাও সাহিত্য।