সব সময় বিকল্প পরিকল্পনা করি : প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
- লিডারশিপ ডেস্ক
‘অভিনয়শিল্পী’ পরিচয়ে নিজেকে বাঁধতে চান না প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। নিজের কাজের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ করেছেন, আরও বেশি কিছু অর্জনের যোগ্যতা তাঁর আছে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি পেয়েছেন পদ্মশ্রী পদক। এবিসি চ্যানেলের টিভি সিরিজ কোয়ান্টিকোর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন। শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছি তাঁর অভিনীত হলিউডি চলচ্চিত্র বেওয়াচ। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় আছে এই ভারতীয় তারকার নাম।
আমি চাই না লোকে আমাকে অভিনয়শিল্পী কিংবা তারকা বলুক। চাই না এ রকম কোনো তকমা আমার পৃথিবীটা ছোট করে দিক। বরং আমি চাই, একজন আলোকিত মানুষ হতে। যে অঙ্গনের জন্যই হোক না কেন, আমার অবদানগুলোর জন্য, আমার অর্জনগুলোর জন্য যেন লোকে আমাকে মনে রাখে। আমি চাই বাঁধনহারা হতে, প্রচলিত ধ্যানধারণাগুলো ভেঙে দিতে। এমন একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই, যেখানে আগে কেউ যায়নি। হতে পারে আমার গন্তব্যে পৌঁছানোর পথটা ভয়ংকর, হতে পারে সেই পথে আগে কেউ পা রাখেনি। তবু পথটা আমি আপন করে নেব। ছোটবেলায় আমার আত্মবিশ্বাস ছিল খুব কম। আমি কীভাবে কথা বলি, কোথা থেকে এসেছি—সবকিছুর জন্য লোকের কটু কথা শুনতে হয়েছে। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। এখন জানি, এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায় একটাই। নিজের লক্ষ্য ঠিক করা আর এটা নিশ্চিত করা যে আমি আমার সেরা চেষ্টাটাই করছি।
১৮ বছর বয়সে সিনেমার জগতে নাম লিখিয়েছি। তখন আমি নিজেকে দেড় বছর সময় দিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম, যদি ভালো কোনো ফল না পাই, আবার কলেজে ফিরব। সব সময় আমার একটা বিকল্প পরিকল্পনা থাকে। এখনো আছে। সে জন্যই তরুণদের বলি, জীবনটা শেষ হয়ে যায়নি। তুমি তোমার কাজটা করে যাও। তোমার পথটা খোঁজো। খোঁজো কোন কাজটার জন্য তুমিই সেরা।
ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকে ফ্যাশন নামে একটা সিনেমা করেছিলাম। এই সিনেমা আমার ভাবনার জগৎটা বদলে দিয়েছিল। ছবিটা যে সময় মুক্তি পায়, নারীপ্রধান গল্প তখন খুব একটা গুরুত্ব পেত না। ছেলেদের ছবির গুরুত্ব বেশি ছিল। কারণ, তাতে আয় হতো বেশি। কিন্তু এই ছবিটা বেশ ভালো ব্যবসা করল। সবাই চমকে গিয়েছিল। ভেবেছিল বাহ্, নারীপ্রধান গল্পও তাহলে দর্শক গ্রহণ করে! এই ছবিটা অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমাকে বদলে দিয়েছে। এমনকি অন্যের ভাবনার জগৎও যে আমি বদলে দিতে পারি, এই বিশ্বাস নিজের ভেতর জন্ম নিয়েছে। অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটা অনুভূতির জন্ম দেওয়া, মানুষের ভাবনার জগৎকে নাড়িয়ে দেওয়া—এটা একটা বিরাট ক্ষমতা।
টিভি সিরিজ কোয়ান্টিকোর জন্য আমি প্রথম অডিশন দিয়েছি। জানতাম নির্বাচকদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, কিছু সংলাপ বলতে হবে। কিন্তু ভীষণ নার্ভাস লাগছিল। তো আমি কী করলাম? অডিশনে ঢোকার আগে বাথরুমে ঢুকলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগছিল। তখন নিজের সঙ্গে কথা বললাম। বললাম, ‘কেন ঘাবড়ে যাচ্ছ? সবচেয়ে জটিল চলচ্চিত্রগুলোর সবচেয়ে জটিল চরিত্রগুলোতে তুমি অভিনয় করেছ…’। চুলে হাত চালিয়ে আরও একবার নিজেকে দেখে নিলাম। মনে মনে বললাম, সব ঠিক আছে। তারপর লম্বা একটা দম নিয়ে ঢুকে পড়লাম অডিশন রুমে। ব্যস, কাজটা পেয়ে গেলাম।
কোয়ান্টিকোর চিত্রনাট্য পড়ে আমি সিরিজের লেখকদের ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমার মতো মেয়েদের জন্য মানুষ একধরনের পূর্বধারণা নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু এই চরিত্র সেসব ধারণার বাইরে। শেষ কবে আপনি কোনো টিভি সিরিজের প্রধান চরিত্রে একজন ভারতীয় মেয়েকে দেখেছেন, যে কোনো কিছুর পরোয়া করে না? চরিত্রটা নির্ভীক, দৃঢ়প্রত্যয়ী। মেয়েদের আমরা সচরাচর যেমন চরিত্রে দেখি, চিকিৎসক, পড়ুয়া, কম্পিউটার বিজ্ঞানী—এটা সে রকম কিছু নয়। একেবারে আলাদা।
যখন আমি একেবারেই তরুণ, ১৯ বছর বয়স, মাত্রই অল্প কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছি। তখন পরিচালকেরা সাফ সাফ বলে দিতেন, ‘তোমাকে নিয়ে আমরা চেষ্টা করব। তুমি না পারলে অন্য কাউকে নেব।’ সে সময়ের সব ছবিতেই মেয়েদের চরিত্রগুলো এমন। এক অবলা-অসহায় নারী, যে অপেক্ষায় থাকে, কবে কেউ এসে তাকে উদ্ধার করবে। এমন চরিত্রে চাইলেই একজনের বদলে আরেকজনকে নেওয়া যায়। কিন্তু আমি সব সময় শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি। আজ ১৩-১৪ বছর পর আমি সেই চরিত্রগুলোই বেছে নিই, যেখানে আমার কোনো বিকল্প নেই। আমার বিকল্প আমিই!