প্রচলিত শিক্ষা কেন অদরকারী, বললেন এলন মাস্ক
- লিডারশিপ ডেস্ক
এলন মাস্কের একাধিক পরিচয়। তিনি স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা, টেসলা মোটরসের প্রধান নির্বাহী এবং প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট, পাশাপাশি তিনি সোলারসিটির চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং পেপালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যেই জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। তবে পৃথিবী-বিখ্যাত এই উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক মনে করেন, প্রচলিত শিক্ষা কর্মজীবনে অনেকক্ষেত্রেই কাজে আসে না। তাই প্রচলিত শিক্ষাকে খুব একটা পছন্দও করেন না তিনি। ২০০৪ সালের এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছেন, ‘আমি মাঝে মাঝেই ভাবি, ছোটবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষ কতকিছুই না শেখে, আসলে সেসব শেখার কোনো প্রয়োজন নেই; কারণ ওই শিক্ষাগুলো সে তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে ব্যবহার করতে পারে না।’
মাস্ক তাঁর অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, স্কুলজীবন মানেই যন্ত্রণাদায়ক এক অবস্থা। এখানে এমন কিছু শেখানো হয়—যা না হয় আনন্দদায়ক, না হয় মূল্যবান কিছু! সঙ্গতকারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে কখনোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিকে আমলে নেননি মাস্ক। ২০১৪ সালের অপর এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছেন, প্রচলিত শিক্ষা তাঁর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কোনোই প্রয়োজন নেই। এমনকি স্কুলের ডিগ্রিরও প্রয়োজন নেই। কেউ একজন হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তার মানে তিনি ভালো কিছু করার সামর্থ রাখেন। কিন্তু আমরা এমন অনেক সফল ঘটনা জানি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোনো কাজে লাগেনি।’ বলেছেন মাস্ক।
এসব বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝেই মজার মজার টুইট করেন মাস্ক। গত বছর এক ভদ্রলোক টুইট করলেন—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ব্যতিরেকে আপনি জীবনে সফল হতে পারবেন না। সুতরাং আপনি যদি হার্ভার্ডে পড়তে চান, আপনাকে তার আগে অবশ্যই স্কুলে যেতে হবে।’ এই টুইটের জবাবে মাস্ক লিখলেন, ‘আপনার কথা সর্বাংশে সঠিক নয়। শিক্ষাকে স্কুলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। আমি কখনোই হার্ভার্ডে পড়তে যাইনি, কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই হার্ভার্ডে পড়েছেন।’
২০১৫ সালের এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছেন, তিনি তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য একটি স্কুল বানিয়েছেন, যাতে তার সন্তানরা নিজেদের মতো করে শিখতে পারে। ‘কেউ ইংরেজিতে ভালো, কেউ ভাষাশিক্ষায় ভালো, কেউ আবার গণিতে ভালো। কেউ পছন্দ করে সংগীত। একেকজনের সক্ষমতা একক রকম। সুতরাং আমাদের উচিত শিশুদের দক্ষতা বিকাশে যত্নশীল হওয়া।’ মন্তব্য মাস্কের।
এলন মাস্ক আরও বলেন, ‘শিশুরা হাতে-কলমে যা শেখে, তাই মনে রাখে এবং প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে তারা জানার পরিধি বাড়ায়। সুতরাং সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যন্ত্রপাতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ধরাবাধা নিয়ম হচ্ছে, যন্ত্রপাতির ব্যবহার শেখানো। এভাবে মানুষকে শেখানো খুব দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার।’
এরপর মাস্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এভাবে না শিখিয়ে বরং শিশুদেরকে যন্ত্রপাতির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এতে সে সমস্যাগুলো হাতে-কলমে সমাধান করতে শিখবে।’
‘ধরুন, আপনার একটি স্ক্রড্রাইভার প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে আপনি স্ক্রড্রাইভার জোগাড় করে কাজ শুরু করে দিলেন। এরপর একসময় আপনি দেখবেন যে, স্ক্রুড্রাইভার ছাড়া আপনি কোনো কাজই করতে পারছেন না। কাজেই এভাবে কাজ করা না শিখে বরং মাঝে মাঝে যন্ত্র ছাড়াই কাজ করার চেষ্টা করুন। এতে সমস্যা সমাধানের নতুন কৌশল আবিস্কার করতে পারবেন।’ বলেছেন মাস্ক।
এলন মাস্কের মতো একজন বিশ্বসেরা উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা যখন শিশুদের প্রচলিত শিক্ষার ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না, তখন আপনারও সম্ভবত ভাবা উচিত, যদি স্কুলপড়ুয়া সন্তান থাকে আপনার।
সূত্র : ট্রুথথিউরি ডটকম
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মারুফ ইসলাম