তাঁদের বয়সের ব্যবধান ছিল পাঁচ !

তাঁদের বয়সের ব্যবধান ছিল পাঁচ !

  • লিডারশিপ ডেস্ক

প্রযুক্তির কথা বললেই সাথে সাথে চলে আসে সিলিকন ভ্যালির নাম। আর এই সিলিকন ভ্যালির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্বল তারকাদের কয়েকজন হলেন স্টিভ জবস, বিল গেটস, পল অ্যালান, এরিক স্মিত, স্টিভ বালমার ও বিল জয়। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এ মহারথীদের জন্ম মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে! এই ছোট ব্যবধানে এতজন কিংবদন্তী একসাথে হওয়াটা লক্ষণীয়। প্রশ্ন জাগে, তারা কি এ সময়ে জন্ম নেওয়ায় বিশেষ কোনো সুযোগ পেয়েছিলেন, যা তাদের সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে?

পার্সোনাল কম্পিউটারের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা যায় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসকে। এ মাসে ‘পপুলার ইলেকটনিক্স’ ম্যাগাজিনের কভার স্টোরিতে ‘আল্টেয়ার ৮৮০০’ নামের একটি মেশিন সম্পর্কে লেখা হয়। ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘পপুলার ইলেক্ট্রনিক্স’ তখন বাইবেলের মতো। প্রতিনিয়ত এটি তাদের নিত্য-নতুন দিশা দেয়। আল্টেয়ার ৮৮০০ ছিল এমনি এক নতুন পথের আহবান। ছোট আকৃতির এই কম্পিউটারটি প্রমাণ করে দিয়েছিল, কম্পিউটার যে শুধু দৈত্যাকার ও প্রচণ্ড ব্যয়বহুল যন্ত্রগুলোর মতোই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

হ্যাকার ও কম্পিউটার আসক্ত তরুণদের জন্য একটা ছোটখাটো, কম দামি কম্পিউটার ছিল তখন স্বপ্নের মতো। তারা উঠেপড়ে লাগলেন পার্সোনাল কম্পিউটারের পেছনে। একের পর এক নিত্যনতুন উদ্ভাবন আসতে লাগল। সেই ১৯৭৫ সালের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কম্পিউটারের জগতে যেন এক বিপ্লব রচিত হয়ে গেলো। আর উপরোক্ত ব্যক্তিরা ছিলেন সেই বিপ্লবের একেকজন মহানায়ক।

পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের মহানায়ক বিল গেটস কখন জন্ম গ্রহণ করেন? অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫; অসাধারণ! একদম নিখুঁত জন্মদিন। ১৯৭৫ সাল আসতে আসতে বিল গেটসের ঝুলিতে জমে গেছে প্রায় সাত বছর টানা প্রোগ্রামিং করার অভিজ্ঞতা। আর এরপর তিনি ১৯৭৫ এর সুযোগটি বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন। এ সময় হার্ভার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট।

বিল গেটসের সাথে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পল অ্যালান। প্রোগ্রামিংয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে বদ্ধ কম্পিউটার রুমে সেই দীর্ঘ সময়গুলো তারা দুজন একসাথে কাটিয়েছিলেন। অ্যালানও পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন সিলিকন ভ্যালির তারকাদের মধ্যে একজন। তো পল অ্যালান কখন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? জানুয়ারি ২১, ১৯৫৩।

মাইক্রোসফটের ইতিহাসে তৃতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন স্টিভ বালমার। তিনি ২০০০ সালের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মাইক্রোসফট পরিচালনা করেছিলেন। স্টিভ বালমার সফটওয়্যার জগতে অন্যতম শ্রদ্ধেয় নির্বাহীদের একজন। স্টিভ বালমারের জন্ম তারিখ হলো মার্চ ২৪, ১৯৫৬।

আমরা কিন্তু আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে ভুলে যাচ্ছি। স্টিভ জবস; বিল গেটসের তুলনায় তার খ্যাতি কোনো অংশে কম নয়। তবে গেটসের তুলনায় তার গল্পটা একটু অন্যরকম। তিনি প্রযুক্তি নিয়ে গেটসের মতো অসাধারণ দক্ষ ছিলেন না। তবে ছিল তার অনন্য ভিশন, ছিল নেতৃত্বের দক্ষতা ও মানুষকে প্রভাবিত করার অসাধারণ ক্ষমতা।

এসব গুণাবলির ফলেই তিনি বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াককে সাথে নিয়ে অ্যাপলের মতো অসাধারণ একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। প্রযুক্তি জগতের খোলনলচে বদলে দিয়েছেন অনেকভাবেই। তো এই মহারথীর জন্মদিন কত তারিখ? ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫।

সফটওয়্যার জগতে বিপ্লবের আরেকজন দিশারী হচ্ছেন এরিক স্মিট। সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার ফার্ম নোভেল পরিচালনা করতেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে যোগ দিয়েছিলেন গুগল এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। এরিক স্মিটের জন্ম তারিখ? এপ্রিল ২৭, ১৯৫৫।

এডিসন অফ দ্য ইন্টারনেট বিল জয়ের কথা বলা যাক। তিনি সান মাইক্রোসিস্টেমস এর প্রতিষ্ঠাতা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী। বিল জয় ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানে এসেছিলেন জীববিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেখানের সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া কম্পিউটার সেন্টারের কল্যাণে প্রোগ্রামিং ভালোবেসে ফেলেন। আর হয়ে ওঠেন সফটওয়্যারের জগতের মহারথীদের একজন। বিল জয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন নভেম্বর ৮, ১৯৫৪-তে।

উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে জন্ম নেওয়ায় তাদের জন্য অন্যদের তুলনায় একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা এ সুযোগটিকে বুঝতে পেরেছেন। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের নিয়ে গেছেন সাফল্যের চূড়ায়। আর সুযোগের এ সদ্ব্যবহার সম্ভব হয়েছিলো কেবল তাদের  মেধা, দৃঢ় মানসিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের কল্যাণেই। আর বিষয়টি শুধু সিলিকন ভ্যালি নয়, পৃথিবীর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন সুযোগ সৃষ্টি হয়। যারা এ সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন তারাই হয়ে ওঠেন সফল ব্যক্তিত্ব।

Sharing is caring!

Leave a Comment