বিল গেটসকে দেয়া বাফেটের পরামর্শ

বিল গেটসকে দেয়া বাফেটের পরামর্শ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

জীবনে যারা সফল হোন, তাদের জীবনে থাকে বহু বিচিত্র কাহিনি। সবাই যে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগহণ করেন এবং পরবর্তীতে বিখ্যাত হোন—ব্যাপারটা এমন নয়। অনেকের জীবনেই থাকে সীমাহীন সংগ্রাম। পৃথিবীর সফল ব্যক্তিদের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাব এর ভুরি ভুরি উদাহরণ। এমনই একজন হচ্ছেন ওয়ারেন বাফেট, যিনি নিজ যোগ্যতায় এবং সংগ্রামের মাধ্যমে হয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

বাফেট জন্মেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার ওমাহা এলাকায় ১৯৩০ সালে। গেল বছর এই ধনকুবের একটি দাতব্য সংস্থায় তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তার বিনিয়োগের নেশা। মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছিলেন তিনি! বিস্ময়কর শোনালেও সত্য যে তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে সংবাদপত্র বিক্রি করা অর্থ দিয়ে একটি ছোট প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেলে (সিএনবিসি) ২০১০ সালে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বলা কথাগুলো পরে তিনি বলেছেন আরেক ধনকুবের বিল গেটসকে। বাফেট বিল গেটসকে বলেন, ‘যেখানেই কম খরচ দেখবে, সেখানে নিজের সন্তানদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা উচিত।’ কম বয়সে কেনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর মতামত, জমা করা ক্ষুদ্র অর্থ দিয়ে সন্তানদের যেকোনো রকমের ব্যবসা শুরু করার ব্যাপারে আগ্রহী করাটা ভালো।

বাফেট এখনো বাস করেন নিজ শহরে ছোট তিন বেডরুমের একটি বাড়িতে বাড়িটি দেয়ালঘেরা নয়। এমন অনাড়ম্বর জীবনযাপন সম্পর্কে বাফেট বলেন, ‘যা প্রয়োজন শুধু তাই কেনা উচিত, এ ব্যাপারে সন্তানদেরও উত্সাহিত করা জরুরি।’ শুনতে অবাক হলেও বিশ্বের এ শীর্ষ ধনী ব্যক্তিটি নিজেই নিজের গাড়ি চালান এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য তাঁর কোনো নিরাপত্তা কর্মীও নেই!

বাফেটের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্র্যাকশেয়ার হ্যাথওয়ে। তিনি এর চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে সারা বিশ্বে রয়েছে ৬৩টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাও। কিন্তু কোনো দিনও বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করেননি তিনি। এ ব্যাপারে বাফেট বলেন, ‘সব সময়ই ভাবুন, অর্থনৈতিকভাবে কোন কাজটি সুবিধাজনক।’ মূল প্রতিষ্ঠানের এতগুলো অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রতিবছর তিনি একটিমাত্র চিঠি দেন! এ ছাড়া তেমন কোনো বৈঠক কিংবা নিয়মিত যোগাযোগও করেন না তিনি। এ ব্যাপারে মনেপ্রাণে একটি কথা বিশ্বাস করেন এবং বলেন, ‘সঠিক জায়গায় সঠিক লোক নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাতে কাজটা হবে—এমন নিশ্চিন্তে থাকা যায়।’

অধীন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে দুটি নিয়মের কথা থাকে সব সময়ের জন্য। যার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মালিকদের টাকার কোনো ক্ষতি করা যাবে না এবং দ্বিতীয়টি প্রথম নিয়মটি কখনো ভোলা যাবে না!

কাজপাগল বাফেট সমাজের উচ্চপদস্থ মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় তেমন অভ্যস্ত নন। কাজের সময় ছাড়া বাকি সময়টুকু ঘরে বসে পপকর্ন খেয়ে আর টিভির সামনে কাটিয়ে দেন তিনি! মজার বিষয় হচ্ছে, নিজে কখনো কোনো মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখেন না এবং নিজের ব্যক্তিগত অফিস টেবিলেও নেই কোনো কম্পিউটার!

অপরদিকে বিশ্বের আরেক ধনকুবেরের নাম বিল গেটস। বাফেটের সঙ্গে মাত্র একবারই দেখা হয়েছিল তাঁর। বিল গেটস ভেবেছিলেন, সাক্ষাৎ খুব একটা উপভোগ্য হবে না। কারণ, দু’জনের সাফল্যের পথ আলাদা এবং জীবনযাপনে নেই কোনো মিল। বিল গেটস ভেবেছিলেন, আধা ঘণ্টার বেশি মনে হয় কথা হবে না। কিন্তু গেটসের ধারনাকে অবাক করে দিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা কথা বলেন বাফেট। বিল গেটসকে তো বটেই, তরুণদেরও নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। এরপর থেকেই বিল গেটস তাঁর দারুণ ভক্ত।

ওয়ারেন তরুণদের ক্রেডিট কার্ড (ব্যাংক ঋণ) ব্যবহারের চেয়ে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে অর্থ কখনো মানুষ তৈরি করতে পারে না বরং উপার্জন করে নিতে হয়। যতটা সম্ভব সহজভাবে জীবন যাপন করা উচিত এবং কে কোথায় কী বলে, সেটা শুধু শুনে যাও, তবে নিজের যেটা ভালো লাগে, সেটাই করবে।

শুধু ব্র্যান্ড দেখেই পোশাক পছন্দ করতে হবে, এমন যুক্তির পক্ষে নন তিনি। তাঁর মতে, যা নিজের সঙ্গে মানিয়ে যায় এবং আরাম দেয় তা-ই পরবে। সব মিলিয়ে জীবনটা তোমারই, তাহলে কেনই বা অন্য একজনকে সুযোগ দেবে তোমার জীবনের নিয়ম তৈরিতে।

সূত্র: সিএনবিসি, প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবি : Getty Images

ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মারুফ ইসলাম

Sharing is caring!

Leave a Comment