আবারও সংক্রমণ বাড়ছে কেন? কী করণীয়?

আবারও সংক্রমণ বাড়ছে কেন? কী করণীয়?

  • সংবাদ ডেস্ক

দেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের নয় মাস পর গত নভেম্বর থেকে সংক্রমণের নিম্নগতি যে স্বস্তি দিচ্ছিল সবার মনে, তাতে অস্বস্তি ধরিয়েছে সাম্প্রতিক প্রবণতা।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণের গতি আবার ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক মাসে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও আবার তা বাড়ছে।

আবার কেন সংক্রমণ বাড়ছে- এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শৈথিল্য, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, টিকাদান শুরুর পর মানুষের অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া, নির্বাচন করাসহ জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান আয়োজনই এর কারণ।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হারও আবার ৫ শতাংশের উপরে উঠে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩শর ঘরে। পরদিন তা ১৪শ ছাড়ায়। ৬ মার্চ ১৫ ছাড়িয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। ৮ ও ৯ মার্চ দৈনিক ভর্তি রোগী ছিল যথাক্রমে ১৬১৭ জন এবং ১৬৫১ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডা. বে-নজির আহমেদ নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানাকেই প্রধানত দায়ী করেন। তিনি বলেন, “সংক্রমণ কমার ফলে মানুষের মধ্যে এই ধারণা আসতে পারে যে সংক্রমণ আর হবে না। পর্যটন থেকে শুরু করে বিয়েশাদী বেড়েছে, অনেকগুলো ভোট হল, যেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে, যারা নিয়ম-কানুন মানেনি।”

মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহমেদুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টিকা আসার পর মানুষের মধ্যে ‘ভুল ধারণা’ তৈরি হয়েছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ লাখের বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়াও হয়েছে।

অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, “টিকা আসার আগে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিল, সংক্রমণ কমেই গিয়েছিল। টিকা আসার পর আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে আরেকটা বিপদ ডাকছি। “যখনই আমাদের দেশের এয়ারপোর্টে টিকা এসেছে, তখনই আমরা মনে করেছি যে আমাদের প্রতিরোধ তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু টিকা প্রথম ডোজ দেওয়ার পরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে ইমিউনিটি তৈরি হতে।”

মহামারী প্রতিরোধে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাওয়া ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিন করা, রোগীদের আইসোলেশন করার ক্ষেত্রে শিথিলতা আছে। এর সঙ্গে বদ্ধ জায়গায় অনেক লোকের সমাগমও সংক্রমণ বাড়ার কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন বাংলাদেশে এসেছে, তার প্রভাবও পড়তে পারে। তবে সেজন্য গবেষণার প্রয়োজন। ডা. বে-নজীরও একই মত জানিয়ে বলেন, “ইউকে (যুক্তরাজ্য) থেকে বহু লোক আমাদের দেশে আসছে। তারা অনেকে কোয়ারেন্টিনে যায়নি, কেউ দুই দিনের, সাতদিনের কোয়ারেন্টিন করেছে।”

যুক্তরাজ্য থেকে আসা ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন সেই রূপের সংক্রমণ পাওয়া গেলেও তা এখনও দেশে ছড়ায়নি বলে দাবি করেছে আইইডিসিআর। আইএডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর  সাংবাদিকদের বলেছেন, “কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে দেখেছি, তাদের সংস্পর্শে এসে কেউ আক্রান্ত হননি।”

আবার বাংলাদেশে গ্রীষ্মের আবহাওয়ার সঙ্গে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন ডা. বে-নজির; যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রামাণ্য তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তার ভাষ্য, “গত বছর মে-জুন এই মাসগুলোয় সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। এমন হতে পারে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এই ভাইরাসের প্রবণতা হয়ত গ্রীষ্মকালে বাড়ার। কেননা ভারতেও আমাদের মতো সংক্রমণ বাড়ছে। তবে আরও দুই মাস পর ভালোভাবে বোঝা যাবে, এই ভাইরাসের গ্রীষ্মকালে বাড়ার প্রবণতা আছে কি না।”

কারণ যাই হোক না কেন, সংক্রমণ যে আবার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, সেটাই আশঙ্কার বলে মনে করেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক। “এই বৃদ্ধি ধারাবাহিক। একদিন বাড়ছে, একদিন কমছে, বিষয়টা এমন নয়। সংক্রমণ বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনে বিপদের দিন আসছে বললে ভুল হবে না,” বলেন তিনি।

তুলনামূলক ভালো পরিস্থিতি দেখে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার ঠিক আগে অবনতিশীল এই পরিস্থিতিতে দৈহিক দূরত্ব রক্ষা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি পালনের উপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আহমেদুল কবীর সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ জনসমাগমের মতো কর্মসূচি বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

আবার সব কিছু বন্ধ দেওয়ার পক্ষপাতী নন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে হলে শীতের সময় স্বাস্থ্যবিধি যেমন কঠোরভাবে মানা হয়েছিল, তেমন কঠোর হতে হবে।

সূত্র: ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস

Sharing is caring!

Leave a Comment