সিন সিটি অথবা পাপের শহর
- মো. মাসুদ রাব্বানী
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যে মরুভূমির বুকে গড়ে ওঠা এক শহরের নাম লাস ভেগাস। শুধু ভেগাস নামেও এটি পরিচিত। তবে নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আলোর ঝলকানি, টাকার ঝনঝনানি আর বিলাসবহুল বহুতল ভবনবিশিষ্ট ব্যায়বহুল এক প্রমোদ নগরীর চিত্র। এটি সিন সিটি বা পাপের শহর নামেও বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর কাছে। মদ, জুয়া আর অবৈধ সব কাজের অভয়ারণ্য বলা হয় এ শহরকে।
১৯০৫ সালে আমেরিকার মাহাবি মরুভূমির বুকে গড়ে উঠে লাস ভেগাস নামের এই শহর। লাস ভেগাস শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ভাষা থেকে যার অর্থ তৃণভূমি। মূলত মাহাবি মরুভূমির মাঝে তৃণভূমির নামকরণ করা হয় লাস ভেগাস। চল্লিশের দশক পর্যন্ত এই শহরের অগ্রগতি ছিল বেশ মন্থর। তবে পঞ্চাশের দশকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো রাতারাতি বদলে যেতে থাকে লাস ভেগাসের চেহারা।
পঞ্চাশের দশকে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা অবস্থান নিতে শুরু করে লাস ভেগাসে। এখানে তারা গড়ে তোলে পতিতাবৃত্তি, অর্থ পাচার আর জুয়ার মতো নানা অবৈধ ব্যাবসা। আর শহরটি হয়ে উঠে অপরাধীধের তৃণভূমি। ১৯৫০ সালের দিকে শিকাগোর মাফিয়ারা তাদের বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করার পথ খুঁজছিল এবং তারা লাস ভেগাসের সন্ধান পায়। যেখানে তখন কোনো নিয়ম কানুন ছিল না। আর সেখানে আগে থেকেই অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য করছিল নিউইয়র্কের মাফিয়ারা। নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা তখন এক হয়ে ব্যবসা করতে শুরু করে। আর লাস ভেগাস হয়ে উঠে অবৈধ টাকার রাজধানী। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়টিকে সাদরে গ্রহণ করেছিল কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছিলেন। আর এভাবেই সূচনা হয় লাস ভেগাসের প্রমোদ তরী।
বর্তমানে লাস ভেগাসকে বিশ্বের বিনোদনের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের বিনোদনের জন্য পৃথিবীর শীর্ষে রয়েছে। এর প্রধান আকর্ষণগুলো হলো ক্যাসিনো, হোটেল, শপিংমল আর রেস্টুরেন্ট। এ শহরের আসল রূপ হলো রাতের শহর। সাড়ে ছয় লাখ জনসংখ্যার এই শহর যেন কখনো ঘুমায় না। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ধনকুবেররা এখানে ছুটে আসেন বিনোদনের জন্য। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই শহরে প্রবেশ করলেই রাস্তাঘাট, অলি-গলি সব জায়গায় আপনার চোখে পড়বে ক্যাসিনো । প্রতিটি হোটেলের লবিতেই রয়েছে জুয়ার আসর, ক্যাসিনো। এখানে মাত্র ৫০ ডলার খরচ করে আপনি হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। কারণ হোটেল ব্যবসায়ীদের মুল লক্ষ্য ক্যাসিনো ব্যাবসা। তাই ক্যাসিনোতে খেলতে আসা জুয়াড়িদের ফ্রিতেও থাকতে দেওয়া হয় হোটেলগুলোতে। ক্যাসিনোগুলোতে সূর্যের আলো কিংবা রাতের অন্ধকার প্রবেশ করার কোনো পথ বা জানালা নেই। ভিতরে রয়েছে শুধু ঝলমলে আলো। সূর্যের আলো প্রবেশ না করায় জুয়াড়িরা দিন বা রাতের পার্থক্য ভুলে গিয়ে মজে থাকে জুয়ার নেশায়। এ যেন নিষ্ঠুর মায়াবী ছলনায় মানুষকে নিঃস্ব করার সুনিপুণ কৌশল।
ভেগাস শুধু নিঃস্বই করে না, এখানে এসে ভাগ্য পরিবর্তনেরও নজির রয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি ফেড-এক্সের (fed-ex) কথাই ধরা যাক। কোম্পানিটির মালিক ফ্রেদ্রিক স্মিথ এক সময় ডুবতে বসা কোম্পানির সর্বশেষ পাঁচ হাজার ডলার নিয়ে এসেছিলেন ভেগাসে। মাত্র পাঁচ হাজার ডলার নিয়ে খেলা শুরু করে তিনি রাতারাতি সাতাশ হাজার ডলার জিতে যান এবং বাঁচিয়েছিলেন তার কোম্পানিটিকে। এছাড়া সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর্থিক সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই প্রমোদ নগরী, পাপের শহর লাস ভেগাসের অবদান।