একশ টাকা নোটের দৃষ্টিনন্দন “তারা মসজিদ”

একশ টাকা নোটের দৃষ্টিনন্দন “তারা মসজিদ”

  • সানজিদা আক্তার

পুরাণ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মধ্যে একটি “তারা মসজিদ”। অপরুপ শোভা ছড়ানো মসজিদটি মানুষের হৃদয় ও ইতিহাসে স্থান দখল করে নিয়েছে। এর জন্যই বাংলাদেশ সরকার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে একশত টাকার নোটে তারা মসজিদের ছবি তুলে ধরেছে।

ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ইসলামের একটি অংশ হওয়ায় সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এলাকাবাসী এবং সরকারের সহযোগীতায় এই মসজিদের উন্নয়ন কাজগুলো হয়ে থাকে। যার ফলে মসজিদটির সৌন্দর্য্য আগের তুলনায় বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদি উৎসবে মডেলদের পোশাকেও জায়গা করে নিয়েছিল মসজিদটি। প্রতিনিয়তই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই তারা মসজিদ।

তারা মসজিদ পুরান ঢাকার আরমানী টোলা এলাকার আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। মূলত মসজিদটি অসংখ্য তারার নকশায় সাজানো বলে তারা মসজিদ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। এমনকি মসজিদের গম্বুজ জুড়েও রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট তারার উপস্থিত। এছাড়া মসজিদটি কেসি তারা ও মির্জা গোলাম পীরের নামেও ডাকা হয়, কেননা মির্জা গোলাম পীর প্রথম পর্যায়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়াও মসজিদটির দক্ষিণ পাশের কয়েকটি সমাধির সাথে রয়েছে মির্জা গোলাম পীরের স্বজনদের সমাধি।

মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় হলেও এখনো মসজিদটির অনেক সঠিক তথ্য সবার কাছে অজানা। ইতিহাস অনুযায়ী মসজিদটি আঠারো শতকের দিকে জমিদার মির্জা গোলাম পীর নির্মাণ করেন। তবে, মসজিদটির সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে ও সৌন্দর্য্য বাড়াতে বেশ কয়েক বার সংস্কার করে অনেকেই। প্রথম সংস্কারের উদ্যোগ নেন ১৯২৬ সালে আলিজান ব্যাপারী নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী। তার উদ্যোগে মসজিদের ভিতরে ও বাহিরে মোজাইক এবং একটি বারান্দা তৈরি করা হয়।

সরকারিভাবে এর সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য ১৯৮৫ সালের ৮ই মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জে. মুহাম্মদ এরশাদ পদক্ষেপ নেন। বর্তমানের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ঠ তারা মসজিদটি ১৯৮৭ সালে তিন গম্বুজ থেকে পাঁচ গম্বুজে পরিণত হয়। মসজিদের মেহরাব ভেঙ্গে নতুন দুইটি গম্বুজ তৈরি করা হয়। এখন মসজিদটিতে দুইটি বড় গম্বুজ ও তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এর আগে দুইটি ছোট গম্বুজ এবং মাঝে একটি বিশাল গম্বুজ ছিল।

কালের বিবর্তনের কারণে অনেকাংশই পরিবর্তন হয়েছে মসজিদটি। তবে এর সৌন্দর্য কোন অংশেই কমেনি। বরং এর সৌন্দর্য্য প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ছোট মসজিদটি এখন বিশাল আকারে পরিণত হয়েছে। নির্মাণ কালে আয়তকার মসজিদটির দৈঘ্য ৩৩ ফুট এবং প্রস্থ ১২ ফুট থাকলেও বর্তমানে এর দৈঘ্য ৭০  ফুট  ও  প্রস্থ  ২৬  ফুট। তাই এখন এখানে এক সাথে প্রায় দুইশতাধিক মানুষ নামাজ পড়তে পারে। মূল মসজিদটির বারান্দার সাথে সংযুক্ত রয়েছে ৫টি প্রবেশ পথ এবং তিনটি ছোট বড় মেহরাব। এছাড়া মসজিদটির সাথে সংযুক্ত করে তৈরি  করা হয়েছে একটি ছয় তলা বিশিষ্ট মাদ্রাসা। যেখানে বিনা বেতনেই পড়াশোনা করানো হয় গরিব ও এতিম শিশুদের।

মসজিদটি শুধু ঐতিহ্যের কারণেই বিখ্যাত নয়। এর সৌন্দর্যের টানে অনেক বিদেশি পর্যটক ও প্রতিনিয়ত ভিড় করে এখানে। মসজিদের মূল অংশ ছাড়াও, অতিরিক্ত অংশটি মসজিদের আরেক বিশেষ আকর্ষণ। মসজিদটিতে ঢোকা মাত্রই দেখা মিলবে এক বিশাল তারার আকৃতির পানির ফোয়ারা। এক তলা বিশিষ্ট মসজিদের পুরো দেয়াল জুড়েই রয়েছে সাদা মার্বেল পাথরের উপর নানা বাহারি রঙের ব্রিটেন এবং জার্মান টাইলস ও কাঁচের টুকরো দিয়ে তৈরিকৃত ফুল, পাতা, চাঁদ, তারা সহ অপরুপ ভাবে আরবি লেখা মোজাইক।

অপরুপ নকশা দেখা মাত্রই মনে হবে- এ যেন মুঘল ঐতিহ্যের এক অংশ, যা আমাদের প্রাচীন রুচিশীলতার সাথে পরিচয় করে দেয়। মসজিদটির মূল অংশে ঢোকার জন্যও রয়েছে মোজাইক টাইলস লাগানো অপরুপ রাস্তা এবং এই রাস্তার চারপাশে রয়েছে সবুজ ঘাস। যেখানে নামাজ পড়ার পাশাপাশি বিশ্রামও করে থাকেন অনেকে। পুরো মসজিদটির চারপাশ ঘিরে নকশাকৃত দেওয়াল থাকায় মসজিদটির সৌন্দর্য্য আরো ভাল ভাবে চোখের সামনে ফুটে উঠে।

এছাড়া মসজিদের খোলা মাঠকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য কিছু গাছ ও লাগানো হয়েছে। তবে অন্যান্য সময় থেকে রমজান মাসে মসজিদটি পুরোপুরি অন্য রুপ ধারণ করে। সাজানো হয় নতুন ভাবে এবং সাথে আয়োজন করা হয় সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে এটি আমাদের জন্য একটি অনন্য সৃষ্টির নিদর্শন।

Sharing is caring!

Leave a Comment