বার্বাডোজ : পৃথিবীর নতুন প্রজাতন্ত্র

বার্বাডোজ : পৃথিবীর নতুন প্রজাতন্ত্র

  • সব্যসাচী দাস রুদ্র

পৃথিবীর নব্য জন্ম নেয়া প্রজাতন্ত্র বারবাডোজ। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২ টায় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিন্ন করে প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর মাধ্যমে দেশটিতে ৪০০ বছরের ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছে। 

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এই দেশটিতে সরকার প্রধান ছিলেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ২৯ নভেম্বর দেশটির রাজধানী ব্রিজটাউনের চেম্বারলিন ব্রিজে হাজারো উৎসুক জনতার মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ রানীর প্রতিনিধিত্বকারী রয়্যাল স্ট্যান্ডার্ড পতাকাটি অবনমিত করে দেওয়া হয়। বারবাডোজ প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ডেম স্যান্ড্রা ম্যাসন। নতুন প্রজাতন্ত্র যাত্রার এই মাহেন্দ্রক্ষণে ২১টি তোপধ্বনি ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ব্রিজটাউনের আকাশ আলোকিত করে রঙবেরঙের আঁতশবাজি। 

বারবাডোজে আজ থেকে ৩৯৬ বছর আগে প্রথম ব্রিটিশ জাহাজ ভেড়ে। ব্রিটিশদের মূল লক্ষ্য ছিল জনমানবহীন দ্বীপটিতে আঁখের বিশাল চাষযোগ্য জমি তৈরি করা। এ জন্য পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দাসদের নিয়ে এসে এখানে আঁখ চাষের সূচনা করা হয়। শুরু হয় জনবসতি। আর এভাবেই ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ হয় দেশটি। বর্তমান বারবাডোজের জনগণ মূলত সেই দাসদের বংশধর। 

১৯৬৬ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। কিন্তু দেশটির সাথে ঔপনিবেশিক সম্পর্ক রাখে ব্রিটেন। ব্রিটেন রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণেই দেশটির শাসন চলতে থাকে। ধীরে ধীরে অপরূপ সৌন্দর্য বেষ্টিত ও বিশুদ্ধ জলবায়ুর এই দেশটি নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। 

২১ শতাব্দীর শুরু থেকেই দেশটি ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরিভাবে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০২০ সালে রাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি বলেছেন, বার্বাডোসের সময় এসেছে ঔপনিবেশিক অতীতকে সম্পূর্ণরূপে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার। কাগজে কলমে স্বাধীন থাকলেও দেশটিতে প্রচলন ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের রীতিনীতি। 

প্রজাতন্ত্র সূচনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স চার্লস। দেশটির এই রূপান্তরকে স্বাগত জানান তিনি। নিজেদের শাসনকালে অতীতের নৃশংসতা ও কালো অধ্যায়কে মুছে ফেলে বারবাডোসের জনগণকে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে বদ্ধপরিকর থাকার আহ্বান জানান প্রিন্স। 

হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সময় প্রিন্স চার্লসের উপস্থিতি নিয়ে ব্রিজটাউনে একটি প্রতিবাদ সংঘটিত হবার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ এর জন্য তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাজতন্ত্রের প্রতি বার্বাডিয়ান মনোভাবের জরিপ থেকে জানা যায় যে, রানি এলিজাবেথের প্রতি যেকোনো ব্যক্তিগত প্রশংসা ঔপনিবেশিক যুগের দীর্ঘকাল ধরে দ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে সমর্থন করা ছাড়া মানুষের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। এখন সেসব অতীতে ফেলে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় বার্বাডোস। 

Sharing is caring!

Leave a Comment