ইলিশে রূপালি স্বপ্ন

ইলিশে রূপালি স্বপ্ন

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

জলের উজ্জ্বল শস্য’— বাঙালির অতিপ্রিয় মাছ ইলিশকে এ নামেই অভিহিত করেছিলেন তিরিশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি বুদ্ধদেব বসু। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হলেও বছর দশেক আগেও খুব বেশি ইলিশ পাওয়া যেত না। রাজকীয় এ মাছটি উচ্চমূল্যের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পাত থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। শুধু স্বপ্নেই সম্ভব হতো পেটপুরে ইলিশ খাওয়া! তবে এবারের বর্ষায় ইলিশ সার্বজনীন। বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি, গড়াগড়ি। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাঁক ইলিশ! ইলিশ!

এক দশকে ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি হয়ে এ বছর প্রায় চার লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরে উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টন। জোগান বাড়লে দাম কমে_ অর্থনীতির এ সূত্রে এবার ইলিশ সুলভ। এক কেজি আকারের এক হালি ইলিশের দাম ‘মাত্র’ দুই হাজার ৪০০ টাকা। আধা কেজি ওজনের এক হালির দাম ৮০০ টাকা। ২০০ টাকায়ও মিলছে ভালো আকারের একটা ইলিশ। তাই এবার ধনী-গরিব সবার হাতের নাগালে এসেছে এ মাছ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে মাছ বিক্রি করা পাইকার আবদুল আজিজ জানালেন, এত ইলিশ তিনি জীবনে দেখেননি। সকলের মুখে মুখে ইলিশ।

2_27626পদ্মায় দুর্লভ এখনও: ‘ইলিশ’ নামক বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় আছে ‘রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে’ কলকাতায় যাচ্ছে ইলিশ। দূর অতীতে এই গোয়ালন্দের কাছে পদ্মার ইলিশ বিক্রির জন্য গড়ে ওঠে অনেক আড়ত। কিন্তু এবারের ইলিশ মৌসুমে যখন সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে বাংলাদেশে, তখনও গোয়ালন্দ বাজার ও দৌলতদিয়া ঘাটের ইলিশের আড়তগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটের মাছের আড়তদার শাজাহান মিয়া বলেন, দৌলতদিয়া ও গোয়ালন্দের কাছে পদ্মায় মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসছেন জেলেরা। তিনি জানান, তার মতো আরও অনেক আড়তদার জেলেদের হাজার হাজার টাকা দাদন দিয়ে রেখেছেন; কিন্তু সে টাকা শোধ করার মতো মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। পদ্মার ইলিশ শিকারি গোপাল হালদার, আনন্দ হালদার, নিরেন হালদার, দুলাল চন্দ্রসহ আরও কয়েকজন জেলের সঙ্গে আলাপে নদীতে মাছ না পাওয়ায় আক্ষেপের কথা জানা গেল। গোপাল হালদার বললেন, ‘এই অবস্থায় দাদনের টাকা কীভাবে শোধ করব তা ভেবে পাচ্ছি না।’

পদ্মায় এখন ইলিশ দুর্লভ। অথচ একদা চাঁদপুর থেকে উজানে পাবনা পর্যন্ত ভরা মৌসুমে নদীতে ভরপুর থাকত ইলিশ। আরও উজানে বৃহত্তর রাজশাহী এলাকার পদ্মায়ও ইলিশের কমতি ছিল না বলে জানালেন ‘গঙ্গা-পদ্মা-পদ্মাবতী’ বইয়ের লেখক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সত্তরের দশকের শুরুতে ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে রাজশাহী নগরীর পাশ দিয়ে বইয়ে যাওয়া পদ্মায়ও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত।’

ফিরিয়ে আনতে হলে: ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশের প্রথম পছন্দ গঙ্গা অববাহিকার বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অববাহিকার নদ-নদীগুলো। গত শতাব্দীর সত্তরের দশক পর্যন্ত বাংলার শত নদীতে ইলিশের দেখা মিলত বলে জানা যায় দিগেন বর্মণের ‘ইলিশ পুরাণ’ থেকে। ওই শতাব্দীর তিরিশ ও চলি্লশের দশকে ইলিশের মৌসুমে পদ্মার আশপাশের অঞ্চলে ইলিশ বিক্রি হতো দারুণ সস্তায়_ এমনটা জানা যায় পরিমল গোস্বামীর স্মৃতিসমগ্র থেকে। সময়ের আবর্তে তা দুর্লভ ও দামি হয়ে উঠলেও মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের ইলিশ মাছ উন্নয়নের জন্য নিবেদিত ইকো ফিশ প্রকল্পের দলনেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. আবদুল ওহাব বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশের শত নদীতে ইলিশের দেখা মিলবে_ এমনটাই আমাদের স্বপ্ন। তা বাস্তবায়নও অসম্ভব নয়। তবে সে জন্য বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদীকে শিল্পদূষণমুক্ত করতে হবে। নদীতে বর্জ্য ফেলার আগে বর্জ্য পরিশোধন করতে হবে। কৃষিজীবীদের অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। ইলিশ গভীর জলের মাছ। তাই নদীতে নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা ডুবোচরের মতো প্রতিবন্ধকতা থামিয়ে দেয় ইলিশকে। ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ কমে যায়, স্বাদ বাড়ে। সবাই বলে পদ্মার ইলিশ বেশি স্বাদের। এর কারণ পদ্মার বেলেসমৃদ্ধ ঘোলা পানি এবং ডায়াটম নামে এক প্রকার খাবার।’

বেশিরভাগই মেঘনা অববাহিকার: ইকো ফিশ প্রকল্পের দলনেতা আবদুল ওহাব জানান, এশিয়ার অনেক দেশেই ধরা পড়ে ইলিশ, কোথাও কোথাও ডিমও পাড়ে। তবে বর্ষায় মা-ইলিশ ডিম ছাড়তে ভিড় করে বাংলাদেশের নদীগুলোতেই। বঙ্গোপসাগরতীরের ভারত-মিয়ানমার, আরব সাগরতীরের বাহরাইন-কুয়েত, পশ্চিম মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মেকং অববাহিকার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন সাগরের পাশে চীন ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিচরণ কমছে। অথচ বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর আট থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বঙ্গোপসাগরে ২০০২-০৩ সালে এক লাখ ৯১ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়েছিল। ২০০৯-১০ সালে ইলিশ ধরা পড়েছিল দুই লাখ টন। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় তিন লাখ ৮৫ হাজার টন। গত বছর ২০১৫ সালে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে তিন লাখ ৮৭ হাজার টন ইলিশ। এবার তা চার লাখ টনেরও অনেক বেশি হবে। এত দিন ইলিশের উৎপাদন প্রতি বছর দুই থেকে তিন হাজার টন বেড়েছে। তবে এবার তা কয়েক বছরের সেই পরিমাণকে অনেক বেশি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবদুল ওহাব বলেন, ‘এবার যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই মেঘনা অববাহিকার। এখন পদ্মাকে ইলিশের চলাচলের উপযোগী করতে হবে।’

সংরক্ষণের উদ্যোগ: মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক এবিএম জাহিদ হাবিব বলেন, ‘পদ্মা এখন আমাদের কাছে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অববাহিকার শত নদীকেই ইলিশ এবং অন্যান্য মাছসহ সব জলজ প্রাণীর বাসের উপযুক্ত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত হয়েছে। মা-ইলিশ রক্ষা করা গেছে। জাটকা সংরক্ষণের জন্য গত মৌসুমে দুই লাখ ২৪ হাজার জেলে পরিবারকে চার মাস ধরে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ৩২ হাজার ৫০০ জেলে পরিবারের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মা-ইলিশ ও জাটকা রক্ষার জন্য নিয়মিত অভিযানও চলেছে। এ জন্য কোস্টগার্ডসহ সবার ভূমিকা রয়েছে।’

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নদী কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমানও অকপটে সবার ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি সবার আগে সেই জেলেদের ধন্যবাদ দেন, যাদের কারণে ইলিশ রক্ষা করা গেছে। তিনি আশা করেন, এবারের সুফল ইলিশ রক্ষার কাজটা অনেক সহজ করে দেবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগে বেহুন্দি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা, জাটকা সংরক্ষণে জেলেদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ায় ইলিশ বাংলাদেশের নদীগুলোতে নির্বিঘ্নে ডিম দিতে পেরেছে। জাটকা বড় হয়েছে এবং নদী থেকে সাগরে কয়েক দফায় পাড়ি দিতে পেরেছে বলে আকারে ও ওজনে বেড়েছে ইলিশ।’ অনেকে মনে করেন জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

ওজন ও আকারে বাড়ছে: এ বছর আগস্টের ১২ তারিখে দক্ষিণের দ্বীপ মনপুরার রামনেওয়াজ ঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে তিন কেজি ২০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ধরা পড়ে। বিক্রি হয় ১২ হাজার টাকারও বেশি দামে। ‘ভারত ও বাংলাদেশের ইলিশ বাজারের প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা থেকে জানা যায়, এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গায় সর্বোচ্চ আড়াই কেজি ওজনের একটি ইলিশ ধরা পড়েছিল। বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষিত তথ্য বলছে, ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে হাতিয়া মোহনায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি ইলিশ ধরা পড়ে।

hilsa_9663ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ধরা ইলিশের সবচেয়ে বড় ৪০ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার আকৃতির ইলিশ ধরা পড়েছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। এ বছর তা বেড়ে ২২ শতাংশ বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। আকৃতিতে বড় হলে শুধু স্বাদই বাড়ে না, ইলিশের শরীরে থাকা তেল উচ্চরক্তচাপ ও বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, চোখ উজ্জ্বল করে, অবসাদ দূর করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন, ‘যত বড় হবে, ইলিশের শরীরে ফ্যাটি এসিড, ওমেগা-৩ ও চর্বির পরিমাণ ততই বাড়বে।’ নদী কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ বছর বড় ইলিশ সর্বাধিক ধরা পড়েছে চট্টগ্রামে। সেখানে ধরা পড়া ইলিশের ৩২ শতাংশই বড় আকারের। ভোলা-বরিশালের দিকে ২০ শতাংশ এবং লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের ১৫ শতাংশ বড় আকারের ইলিশ। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১২ সালে ধরা পড়া ইলিশের ২৫ শতাংশ ছিল জাটকা, যেগুলোর ওজন ২০০ গ্রামের নিচে। ২০১৩ সালে তা কমে হয় ২৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে প্রায় ২০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ১৯ শতাংশ এবং এ বছর তা আরও কমে ১৬ দশমিক ছয় শতাংশ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের শত নদীতে একদা কমবেশি ইলিশ পাওয়া গেলেও ইলিশের প্রজনন ও পরিপকস্ফতা সব সময়ই দক্ষিণাঞ্চলের নদীতে হয়। তাই এ অঞ্চলের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার, ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেল, তেঁতুলিয়া নদী, পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ_ এই পাঁচটি চ্যানেলকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।’ ইলিশ বিলাসীদের মতে খুব বড় সাইজের ইলিশের চেয়ে ৭০০/৮০০ গ্রামের ইলিশ স্বাদে-গন্ধে অপূর্ব, খেতেও ভালো।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, ‘সংরক্ষণের নানা পদক্ষেপের কারণেই ইলিশের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বছরে প্রায় চার লাখ টন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১০ ভাগের এক ভাগ। জাতীয় মাছ ইলিশ যাতে সারা বছর পাওয়া যায় তার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, সব সময়ই এবারের মতো ইলিশ ধরা পড়বে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। এবার প্রকৃতি ছিল ইলিশের উজানে আসার অনুকূল। বর্ষার পানির চাপ এবং যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হওয়ায় ইলিশ মোহনা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসেছে নদীতে।

হচ্ছে গবেষণা উইং: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, দেশের জিডিপির প্রায় দুই শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশের ২৭ লাখ জেলে এই রূপালি মাছের অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। প্রতি বছর এই অর্থনীতি আরও বড় হচ্ছে। তাই তার মন্ত্রণালয়াধীন মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ গ্রহণ করেছে। ইলিশ নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য চাঁদপুরের নদী কেন্দ্রে একটি ইলিশ গবেষণা উইং স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রী জানান, ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে গত বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে তিন দিন, পূর্ণিমার দিন এবং পূর্ণিমার পরে ১১ দিনসহ সর্বমোট ১৫ দিন পর্যন্ত জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল। এ বছর ইলিশ সংরক্ষণ সময়সীমা ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন, যা আশ্বিন মাসের প্রথম পূর্ণিমার আগের চার দিন, পূর্ণিমার দিন ও পূর্ণিমার পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এবার ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে।

প্রজনন নিয়ে গবেষণা: গত ২০১০ সাল থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল ইলিশ মাছের প্রজনন ঋতু সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য গবেষণা করে যাচ্ছে। ওই গবেষক দলের প্রধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের মাৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা প্রজনন ঋতু নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছের জিএসআই (এড়হধফড় ঝড়সধঃরপ ওহফবী) পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছি। জিএসআই হলো মাছের ডিমের ওজন ও দেহের ওজনের অনুপাতের শতকরা হার। সাধারণত প্রজনন ঋতুতে ডিমের আকার বড় হতে থাকে বলে জিএসআই বাড়তে থাকে এবং ভরা প্রজনন মৌসুমে গিয়ে তা সর্বোচ্চ হয়। প্রজনন ঋতুতে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়ে জিএসআইয়ের পরিমাপ থেকে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে ইলিশ সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে।’

ভারতেও একই কৌশল: বাংলাদেশের ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ অনুসরণ করছে ভারতও। পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ইলিশ গবেষক সুগত হাজরা জানালেন, ২০১৩ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করে ভাগীরথী নদীর ফারাক্কা থেকে মোহনা পর্যন্ত তিনটি এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে। অভয়াশ্রমগুলো হলো_ সুন্দরবনসংলগ্ন গদখালী, এর কিছু দূরে কাটোয়া থেকে হুগলি ঘাট এবং ফারাক্কার পাশে লালবাগ। তবে মা-ইলিশ ও জাটকা নিধন থামাতে পারেনি তারা। বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গের জেলেদের বেশিরভাগই দরিদ্র। অথচ বাংলাদেশ জেলেদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিলেও পশ্চিমবঙ্গ এখন পর্যন্ত তা নিতে পারেনি। বাংলাদেশের এবারের সাফল্য দেখে হয়তো পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুপ্রাণিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে এই ইলিশ গবেষক মনে করেন, বাংলাদেশে এবার যে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে, তা কেবল ইলিশ ব্যবস্থাপনার ফল কি-না, তা জানতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এমনটাও বিচিত্র নয়, এলনিনোর মতো প্রাকৃতিক কোনো ঘটনায় এবার আকস্মিক বাংলাদেশের নদ-নদীতে ইলিশ বেশি এসেছে।’

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment