জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন ?
ড. বদরুল হাসান কচি : সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী কিছু জঙ্গি আস্তানা সন্ধান পাওয়ার পর জঙ্গিবাদ ইস্যুতে আলোচনার ঝড় উঠেছে। আলোচনা না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক। ঢাকার মিরপুরে যে বাড়িটি থেকে জঙ্গি ধরা পড়লো সেখানে পাওয়া গেলো প্রচুর পরিমাণ গ্রেনেড ও বিস্ফোরক দ্রব্য। পাশাপাশি র্যাওবের পরিচয়পত্র, পুলিশের পোশাক ও ব্যাচ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার পরপরই চট্টগ্রামে ধরা পড়লো আরেকটি জঙ্গি আস্তানা। সেখান থেকে উদ্ধার হল দুর্লভ অস্ত্র ‘স্নাইফার রাইফেল’। অনেক দূর থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায় তেমন একটি অস্ত্র এটি। এই ধরণের অস্ত্র সেনা সদস্যরাও ব্যবহার করেন না। তবে আরও উদ্বেগের বিষয় হল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ছাড়াও এই জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু পোশাক।
যে বৃক্ষ আলো পায় না সেই বৃক্ষ খুব ধীরে বেড়ে উঠে। যদি জঙ্গিরা অর্থ সহায়তা না পায় তাহলে এদের বেড়ে উঠা এতোটা দ্রুত হয় না।
জনমনে প্রশ্ন জেগেছে অত্যাধুনিক এই অস্র কোন রুটে কিভাবে দেশে প্রবেশ করলো। এই সব প্রশ্ন যখন সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তার পরদিন গাজীপুরে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় র্যাাবের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জঙ্গি নিহত হবার ঘটনা ঘটে।এই অভিযানগুলো যখন ঘটছে ঠিক সেই সময় রাজশাহীতে ঘটে গেলো আরেকটি নজীর। জুমার নামাজ পড়াকালীন সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। মারা গেলেন হামলাকারী, আহত হয়ে হাসপাতালে গেলেন কয়েকজন। মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা করার ঘটনা আমরা এতোদিন কেবল পাকিস্তান, ইরাক, আফগানিস্তানে দেখে এসেছি। এখন এই দেশে তা প্রত্যক্ষ করছি।
সার্বিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রতিনিয়তই আমরা দেখছি দেশি বিদেশী জঙ্গি সদস্য ধরা পড়ছে, উদ্ধার হচ্ছে অস্ত্র, বোমা ও জঙ্গি সরঞ্জাম। এতো এতো ধরছে কিন্তু শেষ নেই। যেন উচ্চ ফলনশীল বীজ রোপণ করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, শুধু মাত্র গ্রেপ্তার করে এদের নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যে বৃক্ষ আলো পায় না সেই বৃক্ষ খুব ধীরে বেড়ে উঠে। যদি জঙ্গিরা অর্থ সহায়তা না পায় তাহলে এদের বেড়ে উঠা এতোটা দ্রুত হয় না। এতো দুর্লভ এবং দামী অস্ত্র তারা কি করে সংগ্রহ করলো? বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য কেনার টাকা পায় কোথায়? ফ্ল্যাট বাড়িতে মাসের পর মাস ভাড়া থাকার টাকা আসে কোথায় থেকে? যারা জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত তারা সাধারণত আর কোন কাজ করেন না, কিন্তু তাদের জীবিকা নির্বাহের অর্থ আসে কোন খাত থেকে? এই ধরণের অসংখ্য প্রশ্নের কোন উত্তর জানা নেই। হয়তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চয়ই এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। এখানেও প্রশ্ন জাগে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এই তথ্য কি আছে কারা এই জঙ্গিদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন? যদি উত্তর থেকে থাকে তাহলে এই অর্থ আসার পথগুলো বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ কি তারা নিচ্ছেন? কিংবা যদি জঙ্গি অর্থায়ন সূত্রগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জানা না থাকে তাহলে তা বের করা কি জরুরী নয়?