আজ তনু, কাল আপনি?
- অম্লান কিশোর মুন
সোহাগী জাহান তনু-এই নামের সঙ্গে আমার কখনো পরিচয় ছিল না। পথে চলতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার কখনো দেখাও হয়নি। কখনো এই নাম শুনেছি বলে মনেও পড়ে না। তবু আজ এই নামটি আমার কাছে বড্ড বেশি পরিচিত। এই নামটি আজ আমাদের কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দেয়। এই নামটি বলে দেয় আমাদের অসহায়ত্বের কথা। বলে দেয় আমাদের মা, বোন কিংবা প্রিয় মানুষটির নিরাপত্তাহীনতার কথা। আমাদের উপলব্ধি করায়, আমাদের জন্য এই সমাজের কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে(১৯) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গত রবিবার(২০ মার্চ) রাতে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের কাছ থেকে পুলিশ নিহত তনুর লাশ উদ্ধার করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকসংলগ্ন স্থানে তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। থ্যাতলানো মৃতদেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ের ভেতর পড়েছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
এই ঘটনার পর যে প্রশ্নটি বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সেটা হচ্ছে, সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত এলাকায় একটা মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
অপরাপর সব ঘটনার মতো এই ঘটনারও বিচার চাইব আমরা। কিন্তু সংশয়, বিচার পাবো কি? বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে আমাদের রাষ্ট্রের কাঁধে তাতে সেই আশা করা অরণ্যে রোদন বৈ অন্য কিছু নয়।
আমরা সবকিছুই মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু তনুর এই ঘটনা মেনে নেওয়া আমাদের আরও বেশি অনিরাপদ করে তুলবে। তাই দেশজুড়ে এ ঘটনার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ হওয়া উচিত। তা না হলে আজ তনুকে যেভাবে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, কাল যে আপনার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।