প্রিয় মানুষ

প্রিয় মানুষ

  • মুহম্মদ জাফর ইকবাল

এই বছর ফেব্রুয়ারি বই মেলায় আমি আমার একজন প্রিয় মানুষকে একটি বই উৎসর্গ করেছিলাম। উৎসর্গের পৃষ্ঠাটিতে লিখেছিলাম:

“ড. আতিউর রহমান বন্ধুবরেষু

যাকে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, ব্যতিক্রমী গবেষক, অসাধারণ শিক্ষাবিদ, পরিক্রমী লেখক, কৃষকের খাঁটি বন্ধু, সত্যিকারের রবীন্দ্র-সাধক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সফল গভর্নর এ রকম অনেক পরিচয়ে পরিচিত করে দেওয়া সম্ভব। আমার কাছে তাঁর পরিচয় বাংলাদেশের সত্যিকারের একজন আপন জন হিসেবে।”

ড. আতিউর রহমানকে নিয়ে আরও অনেক কিছু লেখা সম্ভব ছিল, কিন্তু উৎসর্গ পৃষ্ঠায় এত কিছু লেখার সুযোগ নেই বলে লেখা হয়নি। যেমন, আমি খুব ভালো করে জানি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে তাঁর বুকের ভেতর গভীর ভালোবাসা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর একবার যখন তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল তখন আমাকে বলেছিলেন, যদি আমি কোনো দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার খোঁজ পাই তাঁকে যেন জানাই, তিনি কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। তার কিছুদিন পরেই আমার একজন ছাত্রী আমার কাছে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার চিকিৎসার জন্যে এসেছিল। পদক পাওয়া বিশাল একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁর পরিবারের তাঁর চিকিৎসার খরচ চালানোর সঙ্গতি নেই।

আমি ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার সাথে সাথে তিনি তাঁর চিকিৎসার জন্যে অর্থ-সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানো যায়নি, কিন্তু অন্তত চোখ বোজার আগে তিনি জেনে গিয়েছেন এই দেশে তাঁর মতো একজনের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ আছে, বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় তাদেরকে মারা যেতে হবে না। যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে, তখন আপন জনের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নেবেন। ড. আতিউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধার যে রকম আপন জন, ঠিক সে রকম চাষীদের আপন জন, দরিদ্র মানুষের আপন জন, এই দেশের ছেলেমেয়েদের আপন জন।

8c0341b66ef6d187298be307244ea9a7-Muhammed-Zafar-Iqbalশুধু তাই নয়, ড. আতিউর রহমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন বলেই আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতুর মতো এত বড় একটা দক্ষযজ্ঞ করার সাহস পেয়েছি, সেই তথ্যটি আমরা স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই শুনেছি।

আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ হত যখন মনে পড়ত যে, ড. আতিউর রহমান ঠিক আমার মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এই দেশটি চালায় আমলারা (সম্মান করে তাদেরকে ব্যুরোক্রেট বলতে হয়)। আমরা সবাই জানি আমাদের মতো শিক্ষকদের জন্যে তাদের খুব একটা সম্মানবোধ নেই, শুধুমাত্র বেতন স্কেলের ঘটনাটি দেখলেই সেটা বোঝা যায়। ড. আতিউর রহমান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মতো এত বড় একটা দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সেই কাজটি করেছেন অসাধারণ ভালোভাবে, সেটা চিন্তা করে আমি সব সময়েই একজন শিক্ষক হিসেবে গর্ব অনুভব করেছি। ভালো গভর্নর হিসেবে ড. আতিউর রহমান দেশে-বিদেশে অনেকবার বড় বড় পুরস্কার পেয়েছেন। সর্বশেষ পুরস্কারটি ছিল সম্ভবত এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে।

সব ধরনের বিবেচনায় আমরা সবাই ধরে নিয়েছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংক খুব ভালোভাবে চলছে। সারা পৃথিবীতে যখন অর্থনীতির অবস্থা নড়বড়ে তখন বাংলাদেশে জিডিপি বাড়ছে (সাড়ে ছয় শতাংশ হারে) মুদ্রাস্ফীতি কমছে (৬.১৯ শতাংশ হারে), রেমিটেন্স বাড়ছে (১৪ বিলিয়ন ডলার), বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে (২৮.৮ বিলিয়ন ডলার)। দরিদ্র চাষীরা দশ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ব্যাংকিং করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা জমিয়ে ফেলেছে। এমনকি পথশিশুরাও তাদের উপার্জন জমাতে পারছে, যার পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

ঠিক এ রকম সময় প্রায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আমরা খবর পেলাম সাইবার হ্যাকিং করে আন্তর্জাতিক চোরের দল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিলিয়ন ডলার (আট হাজার কোটি টাকা) চুরি করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুরোটুকু পারেনি, একশ বিলিয়ন ডলার (৪০০ কোটি টাকা) নিতে পেরেছে। তার মাঝে বিশ বিলিয়ন ডলার (১৬০ কোটি টাকা) উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং বাকি ৮০ বিলিয়ন ডলারের (৬৪০ কোটি টাকা) কোনো হদিস নেই। আমরা খুবই অবাক হয়ে জানতে পারলাম, ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে ৮০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে হাজির হলেও সেটি কীভাবে কীভাবে জানি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়– সেটাকে আর কোনোভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না! আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট করে উপার্জন করা প্রায় সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা ভিনদেশি চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে!

আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট করে উপার্জন করা প্রায় সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা ভিনদেশি চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বছরে ষাট কোটি টাকা, অর্থাৎ ভিনদেশি চোরের দল যে পরিমাণ টাকা চুরি করেছে সেটা দিয়ে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে দশ বছর চালাতে পারতাম। এর আগে হলমার্ক কেলেংকারির সময় সোনালী ব্যাংক থেকে যখন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা চুরি গিয়েছিল তখন আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সেটি বাংলাদেশের জন্যে কোনো টাকাই নয়। কিন্তু কাজেই ৬৫০ কোটি টাকা নিয়ে হয়তো আমার এত বিচলিত হওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ, ৬৫০ কেটি টাকা আমাদের জন্যে অনেক টাকা!

যাই হোক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উপর আমার অগাধ বিশ্বাস, আমি ধরেই নিয়েছিলাম এ রকম একটা অবস্থায় যা কিছু করা দরকার তিনি নিশ্চয়ই তার সব কিছু করবেন। পত্রপত্রিকায় যেটুকু দেখেছি তা থেকে জানতে পেরেছি, হ্যাকারদের এই সর্বনাশা চুরির কথা তাঁকে জানানো হয়েছে দুদিন পরে এবং তিনি জানা মাত্রই এই টাকা উদ্ধারের জন্যে যা যা করা প্রয়োজন তার সব কিছু করতে শুরু করেছেন। ফিলিপাইনের যে ব্যাংক থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে সেই ব্যাংকের কাছে টাকাটা ফ্রিজ করে রাখার একটা নির্দেশ পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেই নির্দেশ না মেনে পরের দিন টাকাটা দৃর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিয়েছে! সেই টাকাটা ক্যাসিনোতে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ঘটনাটি ঘটে যাবার তিনি সপ্তাহ পর আমরা জানতে পারি। হ্যাকাররা ঘটনাটি ঘটিয়েছে এবং ঘটনাটি ঘটে যাবার সময় ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন সেটি তাঁর খুব বড় অপরাধ নয়। কয়দিন আগে আমাদের একটা ল্যাবের তালা ভেঙে কয়েকটা কম্পিউটার চুরি হয়েছে। সে জন্যে কেউ আমাকে দায়ী করেনি। কিন্তু হ্যাকিং করে টাকা চুরি করার জন্যে হঠাৎ করে সবাই ড. আতিউর রহমানকে দায়ী করতে শুরু করল। সাইবার ক্রাইম কোন পর্যায়ে আছে এখন আমরা সবাই তার একটা ধারণা্ পেয়ে গেছি। সারা পৃথিবীতে বছরে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার সাইবার সন্ত্রাস করে চুরি করা হয়।

পৃথিবীর শতকরা ১৫ টি ব্যাংক এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে– এশিয়াতে শতকরা হার প্রায় এর দ্বিগুণ। আমেরিকা আর ইজরায়েল মিলে সাইবার হ্যাকিং করে ইরানের নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামের প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। মনে হয় তার প্রতিশোধ নেবার জন্যেই ইরান আমেরিকার একটা ড্রোন হ্যাক করে সেটাকে তাদের দেশে নামিয়ে এনেছিল। যারা এগুলো করে তারা অপরাধী হতে পারে, কিন্তু তারা গল্প-উপন্যাস কিংবা সিনেমার চরিত্রদের মতো প্রতিভাবান। তারা কখন কোথায় হানা দেবে সেই আশংকায় সবাই তটস্থ হয়ে আছে।

কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ক্ষতির জন্যে সরাসরি ড. আতিউর রহমানকে দায়ী করা খুবই নির্দয় একটি কাজ, কিন্তু সবাই মিলে সেটি করতে শুরু করল। ঠিক তখন ভারতে অর্থনীতির একটা বড় কনফারেন্স, মাননীয় অর্থমন্ত্রী যেহেতু সেখানে যাবেন না, তাই ড. আতিউর রহমান গিয়েছেন এবং আমরা পত্রপত্রিকায় দেখতে পেলাম হঠাৎ করে সেটাও তার একটা বড় অপরাধ বলে বিবেচিত হতে লাগল। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, কেন তিনি এত বড় একটা বিষয় তিন সপ্তাহ গোপন রেখেছেন? কেন বিষয়টি ফিলিপাইনের একটা পত্রিকা থেকে আমাদের জানতে হল?

সে ব্যাপারে ড. আতিউর রহমান একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা যেন দেশ থেকে পালিয়ে না যায় সে জন্যে এটা গোপন রাখতে হয়েছে। ঘটনাটি জানার পরই যখন ফিলিপাইনের সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, তিনিও একে গোপন রাখতে বলেছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আশি বিলিয়ন ডলার চুরি করার বিষয়টি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতি হিসেবে ধরা হচ্ছে, যদিও ঘটনাটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ড. আতিউর রহমানের কিছু করার ছিল না, কিন্তু সব দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আমাদের দেশের ইতিহাসে আগে এ রকম কিছু ঘটেছে বলে জানা নেই।

এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, যেহেতু এর সাথে পৃথিবীর আরও দেশ জড়িত তারাও উঠেপড়ে তদন্ত করতে শুরু করেছে, আমরা আগ্রহ নিয়ে তদন্তের ফলাফল জানার চেষ্টা করেছি। এর আগে হলমার্ক কেলেংকারিতে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হবার পর কিংবা বেসিক ব্যাংকের আরও চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হবার পর সে রকম তদন্ত করে দোষীদের ধরা হয়েছে বলে শুনিনি। এবারেও যদি দোষীদের ধরা হয়, শাস্তি হয়, আমরা একটুখানি হলেও শান্তি পাব।

ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগ পর্যন্ত বিষয়টুকু আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি, কিন্তু এর পরের অংশটুকু হঠাৎ করে দুর্বোধ্য হয়ে যেতে শুরু করে। আমাদের অর্থমন্ত্রী ‘প্রথম আলো’তে একটি সাক্ষাতকার দিলেন। সেটি এত নির্দয় একটি সাক্ষাতকার যে সেটি পড়ে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন যে, তিনি এভাবে এই কথাগুলো বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য হয়তো আরও গ্রহণযোগ্যভাবে প্রকাশ করা যেত, কিন্তু তারপরেও আমাদের কারও বুঝতে বাকি থাকেনি ড. আতিউর রহমান অর্থ মন্ত্রণালয়ে একজন বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ মানুষ। আমাদের মনে হতে থাকে একজন খুব সফল ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পরও তাঁর দুঃসময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মানুষ নেই। বরং মনে হতে থাকে এই সুযোগটির জন্যে সবাই অপেক্ষা করেছিল!

আমি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে বুঝতে পেরেছি, এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই ড. আতিউর রহমানকে খুব পছন্দ করে (জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদেরকে আমি বিবেচনার মাঝে আনছি না)! তাই তাঁর সরে যাওয়ার বিষয়টি তাঁর আপনজনেরা গ্রিক ট্র্যাজেডি হিসেবে দেখছেন। আমি একে ট্র্যাজেডি হিসেবে দেখি না, জীবনে যখন আর কিছু দেওয়ার থাকে না সেটি হচ্ছে ট্র্যাজেডি। একজন শিক্ষক এবং একজন লেখক জীবনের শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত দিতে পারেন, ট্র্র্যাজেডি তাদের স্পর্শ করতে পারে না।

.

এই লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হবে সেদিন ২৫ মার্চ। পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সেই রাতটির কথা আমি কখনও ভুলব না। আমরা তখন পিরোজপুরে থাকি। গভীর রাতে মাইকে করে একজন ঘোষণা দিতে দিতে সেই ছোট শহরের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছিল। কাঁপা গলায় একজন ঘোষণা দিচ্ছিল, ঢাকা শহরে পাকিস্তান মিলিটারি এই দেশের মানুষের উপর আক্রমণ করে রক্তবন্যা বইয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। স্বাধীনতা পাব সেটি আমরা জানতাম, কিন্তু তার জন্যে আমাদের কত আপন জনকে প্রাণ দিতে হবে সেটি আমরা জানতাম না।

স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর পর আমরা গভীর ভালোবাসায় আমাদের সেই আপন জনদের স্বরণ করি।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment