শ্রমিক দিবস : শ্রমিক কি পেয়েছে তার মর্যাদা?
- নাজমুস সাকিব সাদী
১৮৮৬ সালে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবির আন্দোলন থেকেই আজকের মে দিবসের সূচনা। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
শ্রমিক দিবসের সেই মর্মান্তিক ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। তবে সেই মর্মান্তিকতার পরবর্তী পরিস্থিতি কি আমরা জানি? যাদের জন্য, যে কারণে সেই আন্দোলন তা কতটুকু সার্থক?
তাদের খবর রাখার সময় আমাদের হয় না। ঘরের চাকর হতে অফিসের কর্মকর্তা প্রত্যেক শ্রমিক আজও শোষণের শিকার। সেই ৮ ঘণ্টা কাজ, যথার্থ পারিশ্রমিকের স্বপ্ন আজো তাদের স্বপ্নেই।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় ২১ কোটি শ্রমিককে জোর পূর্বক কাজ করানো হয়। ‘ওভার টাইম’ এর মত লোক দেখানো ফাঁদে কাজ করানো হয় ১৮-২০ ঘণ্টা। যথাযথ নিরাপত্তা তো দূরে থাক খেটে খাওয়া এই শ্রমিকরা পায় না তাদের সঠিক পারিশ্রমিকও।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হচ্ছে গার্মেন্টস। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে সেই গুরুত্বপূর্ণ খাতের খেটে খাওয়া নিরীহ শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করেও মাস শেষে পারিশ্রমিক দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা অজুহাতে উধাও হয়ে যায় সেই কষ্টের উপার্জন। এই দিক দিয়ে নারী ও শিশু শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার।
বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্র অথবা টিভিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের নির্যাতনের চিত্র দেখতে পাই আমরা। তবে এর বাইরেই অনেক বেশি নির্যাতিত হচ্ছে তারা।
যেমন ধরা যাক আপনার আমার ঘরের গৃহকর্মীর কথা। আপনি কি জানেন প্রতি দিন তাকে কত ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে? শহরের সবচেয়ে ভালো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কর্মরত সেলস ম্যানের সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দম ফেলার সময়টুকুও হয়তো হয় না। বাসার সামনের হোটেলটিতে কাজ করা ওয়েটার আপনাকে খাওয়াতে খাওয়াতে নিজে খাওয়ার সময়টুকুও হয়তো পায় না। অন্যের কথা বাদ দিলাম মধ্যবিত্ত-নিন্মমধ্যবিত্ত প্রত্যেক শ্রমিকই সেই পুঁজিবাদী সমাজের শোষণের শিকার।
শ্রমিক শ্রেণির হারাবার কিছু নেই, তাই ভয়েরও কিছু নেই। শ্রমিক শ্রেণি মাথা নোয়াবার নয়—এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে শ্রমিক শ্রেণিকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। যে শিল্প বা প্রতিষ্ঠান যখন যেখানে আক্রান্ত সেখান থেকে শুরু করতে হবে প্রথম প্রবল প্রতিবাদ। এই সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণিকে পতাকার রঙ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে চলবে না। সমস্ত বেড়াজাল অতিক্রম করে সর্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণির লড়াকু একতা গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের সুসংহত, সচেতন ঐক্যের ভিত্তিতেই চক্রান্তকারীদের বিষ দাঁত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।