জৈব খাদ্য : মেটাবে পুষ্টি, বাড়াবে বৈদেশিক আয়
- শাহাবুদ্দীন আহমেদ শাওন
অনেক নামকরা ডাক্তারেরা যখন স্টিভ-এর রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ, তখন তিনি বন্ধু ওয়াল্টারের কাছে আসলেন। ওয়াল্টার ছিলেন একজন নিউট্রোপ্যাথিক পিজিশিয়ান । ছয় ফুট লম্বা ও দুইশত পাউন্ড ওজনসম্পন্ন স্টিভ-এর চুল পড়তে শুরু করেছে, শরীরের ত্বক রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে এবং তিসি সবসময় দৈহিক অবসাদে ভোগেন। স্টিভ যখন নানা উপসর্গের একটা দীর্ঘ ফর্দ নিয়ে ওয়াল্টারের কাছে এলেন তখন তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন যে তার অবস্থা এখন মুমূর্ষ প্রায়।
নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করার পর স্টিভের সমস্যাগুলোর সঠিক কারণ জানা গেল না তবে রক্তের উপাদানে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা গেল। রহস্য উন্মোচন হতে শুরু করল তখনই যখন রক্তে কীটনাশকের উপস্থিতিজনিত পরীক্ষাগুলো করা হল।
ওয়াল্টার ও তার দল ১৮টি পরিচিত কীটনাশকের উপস্থিতি পরীক্ষা করলেন যার মধ্যে ৯টি কীটনাশকই স্টিভের রক্তে বিদ্যমান । কিন্ত ১৮টি থেকে অনেক বেশী রাসায়নিক পদার্থ আছে যা আমাদের ক্রোনিক রোগের জন্য দ্বায়ী।
দুর্ভাগ্যক্রমে সারা পৃথিবীতে ৭০ হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে মাত্র ২৫০টি রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পরীক্ষা করা সম্ভব। সুতরাং বাকি ৬৯ হাজার ৭৫০টি মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে কোনটি আজকের নতুন নতুন রোগগুলোর জন্য দ্বায়ী তা সুনির্দিষ্ট করা খুবই কষ্টসাধ্য।
স্টিভের রক্তের মধ্যে ক্ষতিকর ডিডিটি পাওয়া যায়। এ রাসায়নিক কীটনাশকটি ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয় এবং যার ভয়ংকর রূপকে র্যাচেল কার্সন তাঁর বইয়ে সাইলেন্ট স্প্রিং হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।এটি নিষিদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও এখনও উৎপাদন অব্যাহত আছে এবং সারা পৃথিবীতে শিপিং এর মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে ও মশা নিধনের উদ্দেশে সরবরাহ করা হয়।মানবদেহে প্রবেশের ৬ মাস পর ডিডিটি ডিটিইতে রূপান্তরিত হয়। স্টিভের রক্তে ডিডিটি ও ডিডিই উভয়ই পাওয়া যায়।
ব্যক্তিগত জীবনে স্টিভ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ভ্রামমান বিক্রয়কর্মী। কাজের প্রয়োজনে তাকে অনেক স্থানে যেতে হত এবং রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে হত। এটাই ছিল তার শরীরে বিষ প্রবেশের প্রধান উৎস।
স্টিভের এ দূরাবস্থা দেখে ওয়াল্টার আরও সতর্ক হলেন। পরিবারের জন্য জৈব খাদ্য নিশ্চিত করতে তার ছোট্ট বাগানটি বড় করেন।
মানবদেহের রক্তের সিরাম নিয়ে বহু গবেষনায় হেভি মেটালের পাশাপাশি কেমিক্যাল রেসিডিউয়ের সন্ধান পাওয়া যায়।এ বিষয়ে গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা হচেছ তুলনা করার জন্য জৈব খাদ্য গ্রহণকারী ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায।
ইপিএর এর গবেষণা অনুসারে সমস্ত আমেরিকায় সার্জারি এবং অটোপসি থেকে দেহ চর্বি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অধিকাংশ নমুনাতে কেমিক্যাল রেসিডিউয়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়।
বেটার লিভিং থ্রো কেমিস্ট্রির ৫০ বছর পর বিজ্ঞানীরা চূড়ান্তভাবে দেখিয়েছেন যে মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের জন্য ডিডিটিই দ্বায়ী। বিগত বছর গুলোর গবেষণায় সুনিশ্চিতভাবে দেখা গেছে মেয়েদের সিরাম ও দেহ চর্বিতে ডিডিটি, ডিডিই ও পিসিবি ব্যপকভাবে জমা থাকে যা থেকে স্তন ক্যান্সার সৃষ্টির হয়।
এগুলোর প্রধান উৎস হচেছ কর্মক্ষেত্র ও বাড়িঘরের পরিবেশ, বায়ূদূষণ, খাদ্য ও পানি। স্টিভের দেহ থেকে পেস্টিসাইড রেসিডিউ দূর করতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা এবং নিয়মবিধি গ্রহণ করতে হয়েছে।ফলে প্রচুর অর্থের অপচয় হয় সেই তুলনায় জৈব খাদ্য অধিক ব্যায়বহুল ছিল না। এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের জৈব খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া প্রয়োজন।
সাধারণভাবে জৈব খাদ্য হল কোন প্রকার কৃত্রিম সার, কীটনাশক,বালাইনাশক,জিনগত পরিবর্তন সম্পন্ন জীব দেহ ব্যাতিত উৎপাদিত খাদ্য।এটি বিভিন্নস্থানে হেলদি/ অরগ্যানিক/ন্যাচারাল ফুড নামেও পরিচিত।স¤প্রতি বিভিন্ন দেশে অজৈব কীটনাশক,পোকামাকড় দমনকারী কীটনাশক, আগাছানাশক নিষিদ্ধ করা হলেও অসচেতনতার কারণে কিংবা অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার লোভে তা ব্যবহৃত হচ্ছে।
জৈব খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকর দুই ধরণের হতে পারে।কাঁচা বা সতেজ খাদ্য ঋতুকেন্দ্রিক এবং খুব সহজেই পচনশীল।সতেজ শাকসবজী এবং ফলমূল সবচেয়ে প্রাচুর্যতাপূর্ণ জৈব খাদ্য যা জৈব কৃষিব্যবস্থায় উৎপন্ন হয়।সতেজ জৈব খাদ্য উৎপাদনে রাসায়নিক উপাদান যেমন রাসায়নিক সার, কীটনাশক, পিজিআর হরমোন ব্যাবহৃত হয় না। প্রক্রিয়াজাত জৈব খাদ্যের দাম তুলনামূরকভাবে বেশী যেমন ক্যানিংকৃত জৈব খাদ্য, হিমায়িত জৈব শাকসবজি ইত্যাদি।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির (২০০১) এক গবেষণায় দেখা গেছে জৈব আপেল অধিকতর মিষ্টিস্বাদযুক্ত।এছাড়া অজৈব আপেলের তুলনায় এর গঠন অধিকতর ঘন ও সুদৃঢ় হয়। আবার ২০০২ সালে মেটা অ্যানালাইসিসে দেখা যায় জৈব খাদ্য অধিকতর পুষ্টিগুগুণ সম্পন্ন।
জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশনের (২০০৭) এক গবেষণায় দেখা গেছে জৈব ফলমূল ও সবজিতে ৪০% অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৪ বছরব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে জৈব দুধে ৬০% অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রাচুর্যতা ও কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।
১. ক্রোমিয়াম হচ্ছে একটি উপকারী পুষ্টি উপাদান যা পশ্চিমা খাদ্যউপাদানে কম মাত্রায় থাকে।এর অভাবে পূর্ণবয়সে ডায়াবেটিক এবং অ্যাথেরোসক্লেসিস দেখা যায়। জৈব খাদ্যে গড়ে ৭৮% অধিক ক্রোমিয়াম থাকে।
২. সেলেনিয়াম হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদেরকে পরিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার ও হৃদরোগ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।গতানুগতিক খাদ্যের তুলনায় জৈব খাদ্যে ৩৯০% বেশী সেলেনিয়াম থাকে।
৩. ক্যালসিয়াম দেহের হাড়কে মজবুত ও দৃড় করে। এটি জৈব কাদ্যে ৬৩% বেশী থাকে।
৪. বোরন অস্টিওপোরোসিস দূর করতে সাহায্য করে।জৈব খাদ্যে গড়ে ৭০% অধিক বোরন থাকে।
৫. লিথিয়াম দৈহিক অবসাদ দূর করে এবং জৈব খাদ্যে ১৮৮% অধিক থাকে।
৬. হৃদরোগ,পেশী সংকোচন কারণজনিত মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে ম্যাগনেসিয়াম বিশেষ ভূমিকা রাখে যা জৈব খাদ্যে ১৩৮% বেশী থাকে।
অজৈব চাষাবাদে যেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয় সেখানে জৈব চাষাবাদে প্রাকৃতিক সার যেমন গেবর বা পচা আবর্জনার সার, কমপোষ্ট ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।কীটপতঙ্গ থেকে ফসল রক্ষা করতে কীটনাশক স্প্রে না করে উপকারী পোকামাকড়, পাখি, বিভিন্ন ফাদ ও কৃত্রিম যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।রাসায়নিক আগাছানাশক ব্যবহার না করে কৃত্রিম উপায়ে বা শ্রমিক দ্বারা আগাছা নির্মূল করা হয়।বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে বা ফসল বৃদ্ধি করতে গতানুগতিক বা অজৈব উপায়ে এন্টিবায়োটিকস অথবা বৃদ্ধি হরমোন বা ঔষধ ব্যবহার না করে পশুকে জৈব খাবার, সুষম খাবার , পর্যায়ক্রমিক খাদ্য প্রদান ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
স্বাথ্য ও পুষ্টির জন্য জৈব খাদ্য উপকারি হলেও এর বড় সমস্যা হল উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-৪০% বেশী।। চয়েস ম্যাগাজিনের(২০০৪) এক জরিপে দেখা যায়, অষ্ট্রেলিয়ার সুপারমার্কেটে জৈব খাদ্য ৬৫% অধিক ব্যায়বহুল।কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে,জৈব খাদ্য খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে ও পৃথকভাবে উৎপন্ন করা হয় যা মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
১৯৯৩ সালে রিসার্চ কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশনা পত্রে দেখা যায় শিশু ও কিশোরদের দেহের কীটনাশকের প্রধান উৎস হচ্ছে খাদ্য দ্রব্য। ২০০৬ সালে ২৩জন স্কুল শিশুর রক্তে অর্গানোফসফরাস কীটনাশকের সন্ধান পাওয়া যায় এবং পরীক্ষামূলকভাবে তাদের খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করে জৈব খাদ্য দেওয়া করা হয় । জৈব খাদ্য গ্রহণের কারণে এ কীটনাশকের মাত্রা নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে।
ইউনাইটেড স্টেট এনভাইরনমেন্টাল এজেন্সি এবং স্টেট এজেন্সি অজৈব কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ ঘোষনা করলেও বাস্তবে এর ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।
২০০৭ সালে এনভাইরনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ ৪৪টি ফলমূল ও শাকসবজ্বিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ তালিকা প্রকাশ করে।
অবস্থান | ফলমূল/সবজ্বি | রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ | অবস্থান | ফলমূল/সবজি | রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ |
১(সবচেয়ে খারাপ) | পীচ | ১০০ (সর্বোচ্চ) | ২৬ | মাশরুম | ৩৬ |
২ | আপেল | ৯৩ | ২৭ | কলা | ৩৪ |
৬ | স্ট্রবেরী | ৮০ | ৩৩ | মিষ্টি আলু | ২৯ |
৯ | লেটুস | ৬৭ | ৩৪ | টমেটো | ২৯ |
১০ | আঙ্গুর(আমদানীকৃত) | ৬৬ | ৩৬ | তরমুজ | ২৬ |
১১ | গাজর | ৬৩ | ৩৭ | পেপে | ২৬ |
১৫ | আলু | ৫৬ | ৩৯ | বাধাকপি | ১৭ |
১৬ | সবুজ সীম | ৫৩ | ৪১ | মটরশুটি | ১০ |
১৮ | মরিচ | ৫১ | ৪৩ | আম | ৯ |
১৯ | শসা | ৫০ | ৪৪ | আনারস | ৭ |
২৩ | কমলা | ৪৪ | ৪৭ | পিয়াজ | ১(সবচেয়ে কম) |
আইএফএসটি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিলের এক প্রজেক্টে দেশের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন দেশীয় বাজারগুলোর ৬০% আম ক্ষতিকর অজৈব ক্যালসিয়াম কার্বাইট দিয়ে পাকানো হয়। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত বিপুল অপরিপক্ক টমেটোতে ইথিফোন স্প্রে করা হয় এবং মাত্র ২৪ ঘন্টায় তা লাল রং ধারণ করে। বাধাকপি বড় করতে ক্ষতিকর পিজিআর ব্যবহার করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপানসহ বহু দেশ খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে জৈব খাদ্যের জন্য আলাদা সনদ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) আলাদা ষ্ট্যান্ডার্ড করেছে যা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যে খাদ্য সামগ্রী কমপক্ষে ৯৫% জৈব প্রযুক্তিগত শুধুমাত্র তাদেরকে এ সিল দেওয়া হয়।
অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপ্রাপ্ত কিছু এজেন্সি জৈব সনদ প্রদান করে।এজেন্সীগুলো ন্যাশনাল ফেডারেশন অব অর্গানিক এগ্রিকালচার (আইএফওএএম) দ্বারা ক্রমিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত বিসিএসআইআর পরীক্ষাগারে জৈব খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিতকরণের পরীক্ষা করা হয়।
বিশ্বের উন্নতদেশগুরোতে বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে দিন দিন জৈব খাদ্য সচেতনতা বাড়ছে।২০০২ সালে সারাবিশ্বে জৈব খাদ্য বিক্রয় ছিল ২৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার যা ২০০৬ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে ৪০বিলিয়নে।
বিশ্বে প্রতিবছর জৈব খাদ্যের বাজার বেড়েছে ১০%-৫০% যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন,অথচ ১৯৯০ সালে ছিল ২০%।
১. যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর জৈব খাদ্যের বিক্রয় বাড়ছে ১৭-২০% যেখানে অন্যান্য খাদ্য বিক্রয় বাড়ছে ২-৩%।
২. ২০০৫ সালে মোট খাদ্যের ২.৬% জৈব খাদ্য।
৩. কানাডায় ২০০৫-০৬ সালে ২৮% জৈব খাদ্য বিপণী বেড়েছে।
৪. অষ্ট্রেরিয়াতে ২০০৭ সালের হিসাব অনুসারে ১১.৬৫ কৃষক জৈব প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করে এবং তা ২০% এ উন্নীত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্দোগ নিয়েছে।
৫. অষ্ট্রেরিয়ার সুপার মার্কেটগুলোতে ২০০৬ সালে ৪.৯% জৈব খাদ্য এবং সেবছর ৪ হাজার জৈব পণ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।
৬. ২০০৫ সাল থেকে ইতালিতে স্কুল লাঞ্চ প্রোগ্রামে জৈব খাদ্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
৭. ২০০৫ সালে পোল্যান্ডে ১৬৮,০০০ হেক্টর জমি জৈব প্রযুক্তিতে চাষ করা হয়।
২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত ‘অর্গানিক অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠানে ১২টি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে জৈব খাদ্যে অবদান রাখার জন্য কয়েকটি দেশকে সোনা, রূপা ও ব্রঞ্জের মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। সোনা বিজয়ী দেশগুলো হচ্ছে—অস্ট্রিয়া, মেক্সিকো, রোমানিয়া, চীন, ডেনমার্ক ও সুজারল্যান্ড।
কামরাঙা, আম, কলা, আনারস, লিচু, পেপে, পেয়ারা, তাল ইত্যাদি ফলমূল ও মানকচু, লতি ও মুখিকচু, পুঁইশাক, থানকুনি, পটল, চিচিঙ্গা, কাকরোল, কলমীশাক, লালশাক, আলু, সীম, ঢেড়স, টমেটো, গাজর, লেবু ইত্যাদি সবজি বৈর্হিবিশ্বে বহুলভাবে সমাদৃত হচ্ছে এবং এদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে জৈব খাদ্য বেশী জনপ্রিয় নয় এমনকি অশিক্ষিত কৃষকেরা জৈব খাদ্য সম্পর্কে অজ্ঞ এবং তারা গতানুগতিক বা অজৈব খাদ্যের সাথে এর তুলনা করতে পারে না।ঢাকায় অবস্থিত কিছু সুপারমার্কেটে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে জৈব খাদ্য বিক্রয় করা হয়। সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বিষমুক্ত খাদ্যচক্র বজায় রাখতে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জৈব খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা ও প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
শাহাবুদ্দীন আহমেদ শাওন : গবেষক, প্রোটিনা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ঢাকা।
তথ্যসূত্র :
- Walter J Crinnion N.D.;Published in Organic Gardening Almanac, 1995; Llewelyn Pub.
- Workshop on Organic Food production: Ministry of Science and ICT, October 24, 2005, Beijing, PR, China.
- Journal of Applied Nutrition.
- “Ripening of fruits and vegetable by using hazardous chemical, pesticide and PGR” project by Professor Dr. K.M. Formuzul Haque and his team.
- The Way We Eat: Why Our Food Choices Matter by Peter Singer and Jim Mason.